মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫:৩৪ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
আল্লামা শফী-শাসনের অবসান: দীর্ঘ ৩০ বছর পর পরিবর্তন

আল্লামা শফী-শাসনের অবসান: দীর্ঘ ৩০ বছর পর পরিবর্তন

amarsurma.com

আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:

চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসায় আল্লামা শাহ আহমদ শফীর দীর্ঘ ৩০ বছরের কর্তৃত্বের অবসান হলো। তার পুত্র মাদরাসার সহকারী শিক্ষা পরিচালক আনাস মাদানীকেও মাদরাসা থেকে বহিষ্কার করা হলো। মূলত পুত্রের কীর্তিকান্ডের জেরেই বয়সের ভারে ন্যুব্জ (১০৩) অবস্থায় তাকে মহাপরিচালকের পদ ছাড়তে হলো।

টানা অর্ধশত বছর মাদরাসা মুহতামিম বা মহাপরিচালক ও শিক্ষকতার সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। দেশের প্রধান এবং প্রাচীনতম এই মাদরাসায় এতোদিন ধরে তার কথাই ছিল শেষ কথা। এ মাদরাসার শিক্ষকদের বেশিরভাগই ছিলেন তার ছাত্র। যে কারণে তার সঙ্গে কেউই কোন বিষয়ে দ্বিমত পোষন করতেন না। কিন্তু গত কয়েক বছরে ছেলে আনাস মাদানীর প্রভাব বাড়তে থাকে আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে তাকে নিয়ে আল্লামা শফীর সমালোচনা। যার চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে গত কয়েকদিনে। অবশেষে পদ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। তার আগে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভের মুখে তার পুত্র আনাস মাদানীকে বস্কিকার করতে হয়। বুধবার রাতে আনাস মাদানীকে যখন বহিষ্কার করা হয় তখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। কিন্তু পরদিন সকাল থেকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। বলা হয় আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করা হয়নি। তাকে পুনর্বহাল করা হচ্ছে, মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করা হবে। এ গুজবের সঙ্গে সঙ্গে আবার বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। রাতে সরকারের পক্ষ থেকে মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যদিও আন্দোলনকারীরা এ সিদ্ধান্ত প্রত্যখান করে। রাতে শূরার বৈঠকে পদত্যাগ করেন আল্লামা শফি। মাদরাসার দায়িত্ব দেয়া হয় শুরা কমিটির কাছে। তাকে আজীবনের জন্য উপদেষ্টা বা সদর মুহতামিম নিযয়োগ দেয়া হয়। রাতেই আল্লামা শফীকে মাদরাসা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হয় চমেক হাসপাতালে। তিনি হাটহাজারী মাদরাসায় বসবাস করে আসছিলেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার শুরা কমিটির বৈঠকে আনাস মাদানীকে স্থায়ী বহিস্কারের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। শুরা কমিটির সদস্য সালাউদ্দীন নানুপুরী বলেন, বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে শাহ আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীকে মাদরাসা থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। গত বুধবার শুরা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ ছাড়া মাদরাসার আরেক শিক্ষক নুরুল ইসলামকে মাদরাসার সব কার্যক্রম থেকে আজীবনের জন্য অব্যাহতি দেওয়া হয়।

সালাউদ্দীন নানুপুরী বলেন, বয়স্ক ও অসুস্থ হওয়ায় মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী মাদরাসা পরিচালনার দায়িত্বভার শুরা কমিটির ওপর ন্যস্ত করেন। কমিটি মাদরাসা পরিচালনা করবে। প্রয়োজনে তারাই পরিচালক নির্ধারণ করবেন। পরে শুরা কমিটি আহমদ শফীকে সম্মানিত পরিচালক হিসেবে রাখে।
বৈঠকে অসুস্থ আহমদ শফীকে হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া উপস্থিত শুরা সদস্যরা মাদরাসায় অবস্থান করবেন। দাবি পূরণ হওয়ায় রাতে মাদরাসার ছাত্ররা তাদের আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। তবে মাদরাসা এলাকায় এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
ছাত্রদের ছয় দফা দাবির প্রথমটি ছিল তাকে বহিষ্কার করা। বয়সের ভারে ন্যুব্জ আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে সম্মানজনক পদ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে নতুন মহাপরিচালক নিয়োগ দেয়ার দাবিও করে শিক্ষার্থীরা। তাদের প্রায় সবকটি দাবি আদায় হয়েছে।

এই মাদরাসার মহাপরিচালক হিসেবে দেশের কওমি মাদরাসাগুলোর নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন আহমদ শফী। তিনি বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশেরও (বেফাক) সভাপতি পদে রয়েছেন।

হাটহাজারীর ‘বড় মাদরাসা’ নামে পরিচিত আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদরাসা দেওবন্দের পাঠ্যসূচিতে পরিচালিত বাংলাদেশের অন্যতম বড় এবং পুরনো কওমি মাদরাসা। সাত হাজারের বেশি শিক্ষার্থী সেখানে অধ্যয়ন করে। আহমদ শফী কয়েক দশক ধরে মাদরাসাটির মুহতামিম বা মহাপরিচালকের পদে ছিলেন। মাদরাসার নায়েবে মুহতামিম বা সহকারী পরিচালকের পদে ছিলেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী। শফীর উত্তরসূরি নির্বাচন নিয়ে কয়েক মাস আগে হেফাজতের মহাসচিব ও মাদরাসার সহকারী মহাপরিচালক জোনাইদ

বাবুনগরীর সঙ্গে আনাস মাদানীর সমর্থকদের বিরোধ বাঁধে। তাতে বাবুনগরীকে সরিয়ে দিয়ে তারা টিকে গেলেও তার জের ধরে বুধবার আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানিকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করে একদল শিক্ষার্থী। তারা আনাস মাদানির বহিষ্কার দাবিতে বিভিন্ন কক্ষে ভাংচুরও চালায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: