শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৫ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
এমএ মান্নানের নেতৃত্বে ১০ বছরে বদলে গেছে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুরের গ্রামীণ জনপদ

এমএ মান্নানের নেতৃত্বে ১০ বছরে বদলে গেছে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুরের গ্রামীণ জনপদ

amarsurma.com

কাজী জমিরুল ইসলাম মমতাজ, স্টাফ রিপোর্টার (সুনামগঞ্জ):

শহরের আধুনিকতার সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে গ্রাম। শহরের সুবিধা পৌঁছে যাচ্ছে গ্রামেও। বদলে গেছে গ্রামীণ জীবন। জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে গত ১০ বছর ধরে দেশ বা রাষ্ট্র পরিচালিত হয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একজন প্রতিমন্ত্রী। তিনি সুনামগঞ্জ-৩ (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর) আসনের একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানের দৃশ্যমান উন্নয়নের ধারাই দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা হিসাবে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন।
সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় সেতু নির্মিত হচ্ছে এই আসনের কুশিয়ারা নদীর উপর। এই সেতু কেবল জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জবাসীর উপকারে নয়। পুরো জেলাবাসীর সঙ্গে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব ২ ঘণ্টা কমিয়ে দেবে। প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে জগন্নাথপুর পৌর এলাকায় আরবান প্রাইমারী হেলকেয়ার সেন্টার হচ্ছে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জের নোয়াখালী এবং পাথারিয়া এলাকায় মরা সুরমা নদীর উপর ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি সেতু নির্মাণ হচ্ছে। এসব উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ স¤পাদন হচ্ছে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এমপির প্রচেষ্টায়।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের লাগুয়া সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইড়ে ৩৫ একর জমির উপর ১১শ ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ নির্মাণের প্রস্তুতি স¤পন্ন হয়েছে। এছাড়াও দক্ষিণ সুনামগঞ্জের কার্প হ্যাচারী কমপ্লেক্সের দক্ষিণ পাশে ৫ একর জমিতে ১০৩ কোটি টাকা ব্যায়ে সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপনে ইতিমধ্যে ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা হয়েছে। এসব দৃশ্যমান উন্নয়ন ও মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় এই নির্বাচনী এলাকায় আনন্দের বন্যা বইছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতিয়ারের চেয়েও বেশী এম এ মান্নানের নেতৃত্বে সুনামগঞ্জবাসীর অকল্পনীয় দৃশ্যমান উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
এক সময়ের ডাকসাইটে সরকারি কর্মকর্তা এমএ মান্নান ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার সড়ক, সেতু ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ শুরু করেন তিনি। ২০০৪ সালে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান এই রাজনীতিক। বিগত ৫ বছর দুটি মন্ত্রণালয়ের দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি নিজের নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করেছেন।
সুনামগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া আব্দুজ জহুর সেতুর কাজ সমাপ্ত করণ, জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ সড়কের ৮টি বেইলী সেতু ভেঙে পাকা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে তাঁর প্রচেষ্টায়। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে খুশি সুনামগঞ্জ-৩ আসনের নির্বাচনী এলাকা বাসিন্দারাও। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি এ প্রতিবেদকের কাছে নিজের কর্ম ও রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে বলেন, আমার সকল আনুগত্য ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি। সরকারি চাকুরি করায় দলের জন্য কাজ করতে পারি নি।
বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৮৬ সালে। ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক ছিলাম তখন। আমি তাঁকে বলেছিলাম চাকুরি ছেড়ে চলে আসবো আপনার কাজ করার জন্য। তিনি বলেছিলেন, চাকুরি ছাড়ার প্রয়োজন নেই, আমাদের অভিজ্ঞ লোকের প্রয়োজন আছে। আমরা এখন সরকারে নেই। দেশে যে সামরিক শাসন চলছে, এই অবস্থা থাকবে না। এক সময় বাংলাদেশের মানুষ পুনরায় আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনবে। ওই সময়ে আপনাদের মতো যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুগত তাদের কাজে লাগবে। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কথাও বলে দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেছি। ১৯৯৬ সালে যখন নির্বাচন হয় নির্বাচন কমিশনে ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব হিসাবে পদায়ন করা হয় আমাকে। সেই নির্বাচনে প্রায় ২০ বছরের সেনা শাসনের অবসান ঘটে। এই নির্বাচনে আইনের মধ্যে থেকেই আমি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সহায়তা করেছি। নির্বাচনে জয়ী হয়ে আদর্শিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। সরকার গঠনের পর জনাব তোফায়েল আহমেদের নির্দেশে জেনেভা দূতাবাসের দায়িত্ব নেই। ঐ সময় দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে।
২০০১ সালের নির্বাচনে পুনরায় আমাকে নির্বাচন কমিশনে পদায়ন করা হয়। নির্বাচন কমিশনে আমার পদায়ন বিএনপি মেনে নিতে পারেনি। বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলতে শুরু করলেন ৯৬-এর নির্বাচনে আমি তাদের ক্ষতি করেছি। তারা আমাকে মানতে নারাজ। দুই সপ্তাহের মাথায় আমাকে নির্বাচন কমিশন থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এরমধ্যেই তত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়। আমাকে বিসিকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
নির্বাচন হয়, নির্বাচনে অবিশ্বাস্যভাবে আওয়ামী লীগের পরাজয় হয় এবং ৫ বছরের জন্য অমানিশার শাসন কায়েম হয়। ২০০৫ সালে আমার নির্বাচনী এলাকার সাংসদ, আমাদের নেতা সাবেক পররাষ্ট মন্ত্রী আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদ মৃত্যুবরণ করেন। জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ আসনে এক বছরের জন্য উপ-নির্বাচন হয়। দেশে সরকার বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। আমি নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। নেত্রী আমাকে বলে দিলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যাবেনা। আমরা নির্বাচন বয়কট করেছি। আপনাকে দলের মনোনয়ন দিতে পারবো না। আপনি এলাকায় যান। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করতে চাইলে করেন। আমাদের নেতাদের বলে দেব।
আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে উপ-নির্বাচন করি। নির্বাচনে আমার মার্কা পান পাতার জয় হবার কথা ছিল। নানা কারণে মাত্র ৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হই আমি। নির্বাচনের পর ঢাকায় গিয়ে নেত্রীর সঙ্গে দেখা করি। তিনি নির্বাচনে দলের কারো কারো ভূমিকার কথা শুনে ক্ষুব্ধ হলেন। আমাকে বললেন, দলে যোগদান করেন। তাঁর নির্দেশেই ২০০৫ সালে দলে যোগদান করি। ২০০৬ এর জাতীয় নির্বাচনে আমাকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হলো। নেতৃবৃন্দ দলীয় মনোনয়নের চিঠি ধরিয়ে দিয়ে বললেন, প্রয়োজনে পদত্যাগ করতে হবে। মনোনয়ন প্রদান করলাম। প্রত্যাহারের আগে ঘোষণা আসলো আওয়ামী লীগের সকলকেই পদত্যাগ করতে হবে। আমরা ৩০০ আসনেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করলাম। আধা সামরিক, আধা বেসামরিক, অদ্ভুত সরকার কায়েম হলো। নেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ থাকলো।
২০০৮ সালে আবার দল নির্বাচনে গেলে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। ওই নির্বাচনে আমার প্রিয় দল আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ছিল। আমিও সেই সুযোগটি পাই এবং বিশাল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হই। ২০০৯ সালে দলের কাউন্সিলে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আমাকে যুক্ত করেন নেত্রী। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় কমিটিতে যুক্ত করাসহ সরকারের ৩ বছরের মাথায় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান করা হয় আমাকে। আমি নেত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ। ৩ বছর পর আরেকবার দলের কাউন্সিলে আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাখা হয়।
২০১৪ সালে আবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। ওই সময় কিন্তু দলের ভেতর থেকেই একজন আঞ্চলিকতার আওয়াজ তুলে এবং বিএনপি-জামায়েতের ভোটকে পুঁজি করে নৌকার বিরুদ্ধে লড়েন। তবুও প্রায় ১২ হাজার ভোট বেশি পেয়ে আমি জয়লাভ করি। পরের সপ্তাহেই বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা আমাদের অভিজ্ঞ নেত্রী আমাকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী করেন। এক মাসের মাথায় আবার আমার ডাক পড়লো। কেবিনেট সেক্রেটারী জানালেন, আপনাকে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীরও দায়িত্ব নিতে হবে। এরপর থেকে দুই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছি। একই সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে এলাকায় এসে সময় দেবার চেষ্টা করেছি।
এমএ মান্নান বললেন, ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই আমার। নেত্রীর অনুগত থেকে আমার নিজের এলাকা, জেলার এবং সর্বোপরি দেশের মানুষের জন্য সাধ্যমত কাজ করার চেষ্টা করেছি। শিক্ষা-দীক্ষায় অনগ্রসর সুনামগঞ্জকে এগিয়ে নেবার প্রতি আমার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। জনপ্রতিনিধি হবার পর থেকেই আমি এই বিষয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। সুযোগ পেলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করার চেষ্টা করেছি।
সর্বশেষ আমার দুই উপজেলায় দুটি কলেজ এবং একটি স্কুল সরকারি করণ, সুনামগঞ্জের দুটি বেসরকারি কলেজ এবং আমার নির্বাচনী এলাকার একটি কলেজে ৫ তলা ভবন আমার চেষ্টায় হয়েছে। সংসদ সদস্য হবার পরই সুনামগঞ্জসহ আমার নির্বাচনী এলাকার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব কমিয়ে আনার জন্য জগন্নাথপুরের রানীগঞ্জে কুশিয়ারার উপর সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করিয়েছি। পাগলা-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি সড়কে ৮টি বেইলী সেতু ভেঙে ঐ সড়ক দিয়ে সুনামগঞ্জবাসীর ঢাকায় যাওয়ার ব্যবস্থা করণের জন্য পাকা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। ছাতক থেকে রেলওয়ে লাইন সুনামগঞ্জ পর্যন্ত সম্প্রসারণের জন্য আমার চেষ্টা রয়েছে। সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে এক সেশনে ১০০ জন গ্রাজুয়েট প্রকৌশলী বের হবেন। এই প্রতিষ্ঠানকে বহুমাত্রিক করার স্বপ্ন রয়েছে আমার। আগামী দিনে এই প্রতিষ্ঠানকে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় করার স্বপ্ন দেখি আমি।
আমার এবং সুনামগঞ্জবাসীর বহুদিনের স্বপ্ন সুনামগঞ্জে একটি মেডিক্যাল কলেজ এটাও বাস্তবায়নে শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। আমি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করছি। আগামীতে সরকার ক্ষমতায় আসলেই প্রথম দিকেই এটি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবো। তিনি বলেন, আমি সরকারের যেমন দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছি। আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষকে সঙ্গ দেবার চেষ্টা করেছি। গত কয়েক মাস হলো এলাকার গ্রামে গ্রামে যাবার চেষ্টা করছি। নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি পেছনের দিকে যাবার সুযোগ নেই। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে আওয়ামী লীগ, নৌকা এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: