শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:৪৫ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
জিজ্ঞাসাবাদে নতুন তথ্য: স্বামীর পরকীয়ার ক্ষোভেই দুই সন্তান হত্যা

জিজ্ঞাসাবাদে নতুন তথ্য: স্বামীর পরকীয়ার ক্ষোভেই দুই সন্তান হত্যা

bbbbbbbbbbbbbbbbbbbbbbb_119097আমার সুরমা ডটকম : রামপুরার বনশ্রীতে আলোচিত ভাই-বোন নুসরাত আমান অরনী ও আলভী আমান হত্যাকাণ্ডের নতুন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। ছেলে-মেয়ের পড়ালেখা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই তাদেরকে হত্যা করেছে মাহফুজা মালেক জেসমিন প্রথম দিকে এমন স্বীকারোক্তির কথা বলা হলেও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এখন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে বলে জানা গেছে। মাহফুজা মালেক জেসমিনের স্বামী আমানউল্লাহর মোবাইলে আসা একটি মিসকল থেকেই ঘটনার সূত্র পাত হয় বলেও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন জেসমিন। পুলিশের টানা জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে মাহফুজা মালেক জেসমিন পুলিশকে জানান, ‘ওর (আমান উল্লাহ)মোবাইলে মাঝে মধ্যেই মিসকল আসে। প্রায় দেড় মাস আগে একদিন গভীর রাতে একটি মিসকল আসে। আমি নিজেই ওই নম্বরে ফোন করি। মোবাইলের অপর প্রান্তে এক মহিলা কণ্ঠ শুনতে পাই। এরপর কথা বলেনি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তার স্বামীও কোনো উত্তর দেননি। মধ্যরাতে ওর কাছে কার ফোন আসে সেদিন থেকেই স্বামীর পরকীয়া নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয় এবং প্রতিশোধ স্পৃহা জাগে তার মনে।’
তিনি বলেন, ‘আমিই আমার ছেলেমেয়েকে মেরেছি। আমাকে ফাঁসি দিন।’ জেসমিনের দেয়া তথ্য থেকে পুলিশ খুঁজে পেয়েছে নতুন ক্লু। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘ওকে (স্বামী আমানউল্লাহ) ডাকেন। সব দোষ শুধু আমার?’ এরপর বলতে থাকেন, ‘প্রায় দেড় মাস ও (স্বামী) আমার সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলে না। ছেলেমেয়েদের দিকেও কোনো খেয়াল নেই। সকালে বেরিয়ে ফেরে গভীর রাতে। এমনকি ২৮ ফেব্রুয়ারি বিয়ের দিনটি পর্যন্ত তার মনে ছিল না। বাসায় ফেরার পর এ নিয়ে স্বামীর সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। কার সঙ্গে তার সম্পর্ক?’ ওইদিনই স্বামীর পরকীয়ার প্রতিশোধ নিতে সন্তান হত্যার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় বলে পুলিশের সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রটি জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে প্রায় দুই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মাহফুজা মালেক জেসমিনকে। পুরো সময় তিনি শান্ত ছিলেন। কোনো অনুশোচনা ছিল না তার মধ্যে। তবে শেষ মুহূর্তে তিনি হঠাৎ ক্ষুব্ধ হয়ে বেশ কিছু তথ্য দেন। এসব তথ্য তারা যাচাই-বাছাই করে দেখছেন। ইতিমধ্যেই মাহফুজা মালেক জেসমিন ও তার স্বামী আমানউল্লাহ আমান ছাড়াও ঘনিষ্ঠ কয়েক স্বজন ও বন্ধুর মোবাইল কললিস্ট সংগ্রহ করেছে পুলিশ। এসব কললিস্ট পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কোনো সম্ভাবনাকে তারা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। চাঞ্চল্যকর দুই খুনের ঘটনায় নেপথ্যে অন্য কোনো কারণ রয়েছে কিনা যেটা জানার জন্য মাহফুজা মালেক জেসমিনকে শুক্রবার ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।’
রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, নুসরাত আমান অরনী ও আলভী আমানের ঘাতক যে তাদের মা এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তবে শুধু সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে তিনি একে একে দু’সন্তানকে খুন করেছেন-এমন তথ্য বিশ্বাস করা প্রায় অসম্ভব। পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনে হয়েছে মাহফুজা মালেক জেসমিনের প্রচণ্ড সন্দেহ বাতিক রয়েছে। তিনি স্বামীকে বিশ্বাস করতেন না। তবে বিশ্বাস না করার কারণ সম্পর্কে তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যপ্রমাণ দিতে পারেননি। স্বামী পরকীয়া কিংবা অন্য কোনো বিষয়েও তিনি কিছুই বলতে পারেননি। শুধু পুলিশকে সন্দেহজনক কয়েকটি মিসকলের কথা বলেছেন।
এদিকে, পড়ালেখা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে জেসমিন তার দুই সন্তানকে হত্যা করেছে বলে যে কথা প্রচার হচ্ছে তা বিশ্বাস করতে পারছে না জেসমিনের বোন আফরোজা মালেক মিলা। তিনি বলেন, সন্তানদের পড়ালেখা নিয়ে আমার বোনের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু আমরা দেখিনি। আমার বোনের ছেলেমেয়েরা পড়ালেখায় ভালো ছিল। আমার বোন বলত, ওরা যেভাবে পড়ালেখা করছে করুক। পড়ালেখা নিয়ে খুব বেশি চাপ দিত না ছেলেমেয়েকে। তিনি বলেন, আমার আপা যেভাবে হত্যার কথা স্বীকার করেছে বলে শুনেছি, সেটি আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার আপার সুখী পরিবার ছিল। ওদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক মধুর ছিল। আমার বোনের মানসিক কোনো সমস্যা থাকলেও তো এতদিনে আমরা টের পেতাম। তবে আমার মায়ের (জুলেখা বেগম) মানসিক সমস্যা ছিল। মাঝে মধ্যে ঘুম হতো না। এজন্য মায়ের চিকিৎসাও করিয়েছি আমরা। তবে এখন পর্যন্ত বোনের (জেসমিন) মধ্যে কোনো সমস্যা আমরা দেখতে পাইনি।
আফরোজা বলেন, জেসমিন নিজ হাতে তার সন্তানদের হত্যা করেছে এটা আমার কখনও বিশ্বাস হয় না। আমার কাছে পুরো ঘটনা কেমন যেন নাটক-সিনেমা মনে হচ্ছে। নাটক কেন মনে হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এমন হতে পারে না। এটা কাল্পনিক ব্যাপার মনে হচ্ছে। তাহলে আপনি কী অন্য কাউকে সন্দেহ করেন-এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, না। সন্দেহের তালিকায় কেউ নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: