বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩

ঠিকাদারী বাতিল করে পিআইসি কাজ করায় সময়ের আগেই শতাধিক বাঁধের কাজ শেষ পর্যায়

কাজী জমিরুল ইসলাম মমতাজ, স্টাফ রিপোর্টার (সুনামগঞ্জ): সুনামগঞ্জের হাওরের বোরো ফসল বাঁধ রক্ষায় ঠিকাদারী প্রথা বাতিল করে হাওরপাড়ের প্রকৃত কৃষক দিয়ে (পিআইসি) গঠন করে বাঁধের কাজ করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রায় শতাধিক বাঁধের কাজ শেষ পর্যায়। সেগুলো হল দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের ডেকার হাওরের ৩৯, ৩৭, ৩৫, ২৪, ১৯নং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)। সাংহাই হাওরের ৪, ১৬, ডেকার হাওরের ১৮, ১৯, ২৪, ২৫, ২৭, ২৮। দরগাপাশা ইউনিয়নের কাচিভাঙ্গা ১, ২, ৩, ৭, খাই হাওরের ১৪, ১৫, জামখলা হাওরের ২,৩,৭,৮,২৬ (পিআইসি)। পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের সাংহাই হাওরের ৬, খাই হাওরের ৮, ১৩, ৩৪, ৪০, ৪১, ৪৩, ৪৪, পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের ডেকার হাওরের ২০, ২১, ২২, ২৩নং (পিআইসি)। পূর্ববীরগাও ইউনিয়নের জামখলা হাওরের ৯, ১০ খাই হাওরের ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৫, ৪৭, ৪৮, ৪৯নং (পিআইসি)। পূর্বপাগলা ইউনিয়নের ডেকার হাওরের ১২, ১৩, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ কাচিভাঙ্গা হাওরের ১১নং (পিআইসি)। পাথারিয়া ইউনিয়নের সাংহাই হাওরের ৪, ৫, ২৩ খাই হাওরের ৫, ৬, ১৪নং (পিআইসি)। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের জোয়াল ভাঙ্গা বাঁধের ৪৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪৩, ৪৬, ৪৫। করচার হাওরের ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৪২ পিআইসি। কাঠইর ইউনিয়নের ৩৪, ৩৫ পিআইসি। কুরবান নগর ইউনিয়নের ডেকার হাওর ৩ ও ৪ পিআইসি। রঙ্গারচর ইউনিয়নের ৫, ৬, ৭নং পিআইসি। লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫ ও ১৬নং পিআইসি। সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২নম্বর (পিআইসির) বেরী বাঁেধর নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শতভাগ কাজ হয়েছে। মোহনপুর ইউনিয়নের ২৫, ২৬, ২৭নম্বর (পিআইসি)। কাঠইর ইউনিয়নের ৩৪ ও ৩৫ নম্বর (পিআইসি)। যে কারণে কৃষকরা দু:চিন্তা থেকে মুক্ত রয়েছেন। গেল বছর ফসল হারিয়ে সারা বছর চরম অভাব অনটনে কাটতে হয়েছে কৃষকদের। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে মহাজনি দাদনে কোন রকম কৃষি কাজ করলেও চলতি বোরো ফসল ঘরে উঠবে কি-না তা নিয়ে শংসয় কাটছেনা কৃষকদের। হাওরের বাঁধের কারণে ফসল হারিয়ে অনেক কৃষককেই পথে বসতে হয়েছে। শুধু তাই নয় গৃহ-পালিত পশু-পাখি কম দামে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহের জন্য ঢাকায় চলে যান। চলতি বছর বাঁধের কারণে ফসলের কোন সমস্যা হলে কৃষকদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে বাঁচার তাগিদে চলে যেতে হবে। হাওরের বাঁধ নির্মানের কাজ ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা। ওই উপজেলার মহালিয়া হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধেরও একই অবস্থা। জেলার ফসল রক্ষায় অনুমোদিত বাকি প্রকল্পগুলোতেও বিলম্বে কাজ শুরু করেছিলো প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইসি) কমিটি। এ কারণে নির্ধারিত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, উপজেলা থেকে স্থানীয় অনেক ইউপি চেয়ারম্যানদের অলিখিত সম্পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ায় তারা নানা অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন-পরিবর্ধনের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ৯৪৭টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় এক শতাধিক প্রকল্পের কাজ শেষ। প্রথমে এক হাজারের মতো পিআইসি মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছিলো পরে প্রায় দেড় শতাধিক পিআইসি বাতিল করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তবে এখনও ফসল রক্ষার নামে অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। জানা যায় কাবিটা নীতিমালায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ সম্পন্ন করতে প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রকল্প অনুমোদন ও প্রকল্প গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গণশুনানী করে হাওর এলাকার কৃষকদের পরামর্শ ও অংশগ্রহণে পিআইসি গঠনের নির্দেশনা থাকলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে পরামর্শ করেই বেশির ভাগ প্রকল্প গ্রহণ করেন। এতে অনেক ইউপি চেয়ারম্যান পছন্দের লোকদের দিয়ে পিআইসি করে অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পও গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেক পিআইসিতে চেয়ারম্যানরা তাদের ভাই, ভাতিজাসহ আত্মীস্বজনদের দিয়ে কমিটি করে দিয়েছেন।
জানা গেছে, সরকারের ফসল রক্ষার বরাদ্ধ ভিন্ন কাজে ব্যবহার হচ্ছে বলে সরেজমিন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে জানিয়েছেন হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। গত কয়েক দিন পূর্বে দিরাই উপজেলার জগদল এলাকার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করেন হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। এ সময় উপকারভোগী কৃষকরা তাদেরকে জানান, প্রকল্পে বাঁধ এলাকার কৃষকদের বদলে ইউপি চেয়ারম্যানরা তাদের ঘনিষ্ঠদের দায়িত্ব দিয়েছেন। জেলার অন্যতম বড় হাওর তাহিরপুরের মাটিয়ান হাওরের বোয়ালমারা এলাকার দুটি ইউনিয়নে প্রায় ১০টি পিআইসি গঠন করা হয়েছে। প্রকল্পগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। গত বুধবার পর্যন্ত এই প্রকল্পগুলোতে কাজ শুরু হয়নি। পাশের মহালিয়া হাওরেও মাত্র কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শুরু না কারার বিষয়টি স্বীকার করে সংশিষ্টরা জানান, বিলম্বে পানি নামার কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে ২-৩ দিনের মধ্যে কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে তারা জানিয়েছেন। তারা আরো জানিয়েছেন, এই দুটি হাওরের যে প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের উজানগাঁওয়ের খালের বাঁধ, শর্মার খাল, গোবিন্দপুর-শর্শারকান্দা বেড়িবাঁধ এবং জয়পুর বাঁধের কাজ এখনো শুরু হয়নি। এসব এলাকায় প্রায় ৬টির মতো প্রকল্প রয়েছে। জিরাগের খাড়া দিয়েই গত বছর জোয়ালভাঙ্গা হাওরের ফসল ডুবে ছিলো। এভাবে জেলার
বিভিন্ন উপজেলার অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ এখনও শুরুই হয়নি। হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের নেতা মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, গত রোববার আমি শাল্লা উপজেলার ৭টি প্রকল্প ঘুরে এসেছি। সেই সাতটির একটিতেও কাজ শুরু হয়নি। কবে কাজ শুরু হবে কেউ জানেনা।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুছরাত জাহান বলেন, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার অধিকাংশ বেরী বাধেঁর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে আশা করি ২৮ ফেব্রয়ারীর মধ্যে কাজ সমপন্ন হবে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা কমিটির সভাপতি পূর্ণেন্দু দেব বলেন, তাহিরপুরের মাটিয়ান ও মহালিয়া হাওরের প্রায় ১৫টির মতো প্রকল্পে কাজ শুরু করা যায়নি আশপাশে পানি থাকার কারণে। তবে এখন পানি নেমে যাওয়ায় আগামীকাল থেকে কাজ শুরু করা হবে। আশা করি এক সপ্তাহের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা কমিটির সভাপতি মো হারুনুর রশিদ বলেন, সরকার নির্ধারিত সময়ের ভিতরে যদি কোন (পিআইসি) বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূইয়া বলেন, আমাদের জেলার প্রত্যেকটি উপজেলায় বাধ প্রায় ৬৫ পার্সেন্ট হয়েছে, বাকী বাধের কাজ ১৫ দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: