শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০১ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিষদগারঃ চেয়ারম্যানদের সমন্বয় সভা বর্জন

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিষদগারঃ চেয়ারম্যানদের সমন্বয় সভা বর্জন

এমএম ইলিয়াছ আলীদক্ষিণ সুনামগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতাদক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ বিষোদগার করে সমন্বয় সভা বর্জন করেছেন। বৃহ¯পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার পরিষদের সম্মেলন কক্ষে উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালামের সভাপতিত্বে ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আলমগীর কবিরের উপস্থিতিতে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম ভ্রমণভাতা উত্তোলনের প্রস্তাব পেশ করেন। উক্ত প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন জয়কলস ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মাসুদ মিয়া। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মাসুদ মিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার ইউনিয়ন পরিষদে বা অন্য কোন পরিষদে কোনদিন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে পরিদর্শন করিতে দেখি নাই। কিন্তু তিনি মিথ্যা ভূয়া বিল ভাউচার তৈরি করে সরকার এবং জনগণের টাকা ধোঁকা দিয়ে ভ্রমণ ভাতার নামে উত্তোলন করছেন। এটা অনিয়ম, এটাই দূর্নীতি। এ সময় অন্যান্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালামের বিরুদ্ধে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, এডিপির বরাদ্ধ থেকে নিজের বাড়ি রাস্তা নির্মাণ, নিজ বাগান বাড়িতে পর পর দুই বার এডিপির বরাদ্দের টাকা দিয়ে রাস্তা নির্মাণ, ঢেউটিন ক্রয় সংক্রান্তে দূর্নীতি ও ঢেউটিন বিতরণে স্বজনপ্রীতি, একক সিদ্ধান্তে প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করাসহ সরকারের উন্নয়ন কাজে বাধা প্রদানের বিভিন্ন অভিযোগ তুলেন।

সমন্বয় সভায় পশ্চিম পাগলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল হক তার বক্তব্যে বলেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী আবুল কালাম ঢেউটিন ক্রয় সংক্রান্তে কমিটি থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সম্পৃক্ত না করে একক সিদ্ধান্তে ঢেউটিন ক্রয় করছেন। কোন দিন সিদ্ধান্ত পাশ হয়, কোথায় বিতরণ করেছেন। আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানি না। আমাদের স্বাক্ষর গ্রহণ করে বরাদ্দ পাশ করবেন। এটা কি মানা যায়? এ সময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল হককে উদ্দেশ্যে করে কটুক্তি ভাষায় কথা বললে প্রতি উত্তরে উপজেলা চেয়ারম্যানকে আঙ্গুল নামিয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন চেয়ারম্যান নূরুল হক। এ সময় উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। চেয়ারম্যান নুরুল হক তার বক্তব্যে আরও বলেন, পাগলা এলাকায় উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম তার বাগানবাড়িতে এডিপির বরাদ্দ থেকে ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তীতে আবারও বাগানবাড়ির রাস্তা নির্মাণের জন্য এডিবির বরাদ্দ নেয়ার চেষ্টা করলে আমি বাধা দেই। কিন্তু তিনি আমার কথা শুনেন নি। তারপরও ২ লক্ষ টাকা নিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছেন। এডিপির বরাদ্দ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান তার নিজের বাড়ির রাস্তার জন্য সাড়ে ৬ লাখ টাকা বরাদ্ধ নিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছেন। সরকারি টাকা ব্যক্তিগত কাজে ব্যয় করেছেন।
জয়কলস ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মাসুদ মিয়া তার বক্তব্যে বলেন, আমরা জগণের সেবা করতে এসেছি। উপজেলা পরিষদে প্রকল্পের বস্তবায়ন নিয়ে বিগত দিনে যে সকল সভা বা সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা এ সম্পর্কে কোন কিছু জানি না। আমরা চেয়ারম্যানবৃন্দরা উপজেলা পরিষদের সদস্য আমাদের ভোটাধিকার রয়েছে। উপজেলা পরিষদের যে কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে ইউপি চেয়ারম্যানদের মতামতের ভিত্তিতে পাশ হয়। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হয়েও আমরা বঞ্চিত। আলোচনা না করেই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম নিজের একক সিদ্ধান্তে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। যা বিধি এবং আইন বহির্ভূত।
শিমুলবাক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান জিতু বলেন, উপজেলা পরিষদের সদস্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এখন আমাদের মনে হয় না আমরা উপজেলা পরিষদের সদস্য। প্রত্যেক মাসে সমন্বয় সভায় আমরা স্বাক্ষর করি। কি সিদ্ধান্ত হয় তা আমরা জানি না, আমাদের জানানো হয়না। উপজেলা পরিষদের কে বা কারা এককভাবে সিদ্ধান্ত নেয় এবং এককভাবে বিতরণ করে। উপজেলা পরিষদ থেকে ঢেউটিন, টিউবওয়েল বিতরণ করার জন্য আমাদের কাছে নাম চাওয়া হয়। কিন্তু বিতরণকালে দেখা যায় আমাদের দেওয়া নামের তালিকা নেই। উপজেলা চেয়ারম্যান আমাদের সাথে সমন্বয় ছাড়াই একতরফাভাবে একাই উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন। আমরা জনগণের সেবা করতে এসেছি। কিন্তু বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কারণে সে সেবা করতে পারছি না।
এ সময় পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ শফিখুল ইসলাম, দরগাপাশা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মনির উদ্দিন, পাথারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আমিনুর রশিদ আমিন, পূর্বপাগলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আক্তার হোসেন, পূর্ববীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নূর কালাম তাদের নিজ নিজ বক্তব্য মাসিক সমন্বয় সভায় তুলে ধরেন এবং উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভা বর্জন করেন।
মাসিক সমন্বয় সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আলমগীর কবির বলেন, উপজেলা পরিষদের আইন অনুযায়ী রেজুলেশন পাশ করার পূর্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দেখানোর কথা রয়েছে। কিন্তু এই উপজেলায় এসে দেখলাম এসব নিয়ম-নীতির কোন তোয়াক্কা করা হচ্ছেনা।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম স্থানীয় চেয়ারম্যানবৃন্দ মাসিক সমন্বয় সভা বর্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কোন দূর্নীতি নেই, তারা নিজেরাই নষ্ট হবে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোঃ আলমগীর কবির স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মাসিক সমন্বয় সভায় বয়কট করার বিষয়ে সাংবাদিদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, উক্ত বিষয়ে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: