শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:১৮ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
পাঠ্যবইয়ে নাস্তিক্যবাদি ধ্যান-ধারণার পরিবর্তনের দাবিতে জমিয়তের সংবাদ সম্মেলন

পাঠ্যবইয়ে নাস্তিক্যবাদি ধ্যান-ধারণার পরিবর্তনের দাবিতে জমিয়তের সংবাদ সম্মেলন

আমার সুরমা ডটকম:

নবম-দশম শ্রেণী থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ে ২০১৩ সাল থেকে শিক্ষার আধুনিকায়নের নামে নাস্তিক্যবাদি ধ্যান-ধারণার ‘বিবর্তনবাদ’ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ এনে অবিলম্বে বিবর্তন শিক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। আজ (৮ জুলাই) সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আকরাম খাঁ হলে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী এই দাবি জানান।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেছেন, পাঠ্যবইয়ে বিবর্তন শিক্ষার নামে নাস্তিক্যবাদি ধ্যান-ধারণার প্রতি উদ্দীপ্ত করে এবং আল্লাহর অস্তিত্ব, পরকাল ও ধর্মের প্রতি অবিশ্বাসী এবং ভোগবাদের প্রতি মোহাবিষ্ট করে তুলে- এমন পাঠ মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পড়ানো হচ্ছে। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর সমাজ বিজ্ঞান বইয়ে ধর্মকে উল্লেখ করেছে ‘নিরক্ষর সমাজের সরল মানুষের চিন্তা- চেতনার ফসল’ হিসেবে।
তিনি বলেন, এই বিবর্তনবাদের শিক্ষা কেবল ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই যে গুরুতর আপত্তিকর এমন নয়, বরং পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ ডক্টরাল বিজ্ঞানী বিবর্তনবাদের সাথে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তারা নিশ্চিত করেছেন, পৃথিবীতে কখনো এভাবে বিবর্তনের মতো ঘটনা ঘটেনি। বিবর্তন ঘটে প্রজাতির বয়স, আকৃতি, বৈশিষ্ট্য-এর উপরে। কিন্তু বিবর্তনের দ্বারা নতুন প্রজাতির কখনো উদ্ভব হয় না। পৃথিবীর প্রায় ৯৯% চিকিৎসা বিজ্ঞানী মানুষ ও বানরের পূর্বপুরুষ যে এক; এটা স্বীকার করেন না। কোষ বিজ্ঞান বা আণবিক বিজ্ঞান দ্বারা বিবর্তনকে প্রমাণ করা যায় না। বিবর্তন যদি কোন প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক বিষয়বস্তু হতো, তবে উন্নত দেশসমূহ যেমন- আমেরিকা, তুরস্ক, রুমানিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া প্রমুখ দেশে বির্বতন শিক্ষাকে বাতিল করা হতো না।

বাস্তবতার সম্পূর্ণ বিপরীত আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পাঠ্যবইয়ে পড়ানো হচ্ছে- “বিবর্তনের বিপক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। জীব-জগৎ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান যতই সমৃদ্ধ হচ্ছে, বিবর্তনকে অস্বীকার করা ততই অসম্ভব হয়ে পড়ছে”। (জীব বিজ্ঞান, নবম-দশম শ্রেণী, ২৭৬ পৃষ্ঠা)।
সংবাদ সম্মেলনে আল্লামা কাসেমী উদাহরণ দিয়ে বলেন, নবম-দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বইয়ের ১১২ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে- “পৃথিবীর সব বিজ্ঞানীকে নিয়ে একবার একটা জরিপ নেওয়া হয়েছিল, জরিপের বিষয়বস্তু ছিল পৃথিবীর নানা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ কোনটি। বিজ্ঞানীরা রায় দিয়ে বলেছিলেন, বিজ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ তত্ত্ব হচ্ছে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব”। কত ভয়ংকর ভুল তত্ত্ব আমাদের সন্তানদেরকে পড়ানো হচ্ছে।
একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর ‘জীববিজ্ঞান’ বইয়ের ২৯২ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে- “বিবর্তনের ক্ষেত্রে ডারউইনের মতবাদ নি:সন্দেহে একটি যুগান্তকারী ও সাড়া জাগানো অবদান”। ২৯৪ পৃষ্ঠায় আছে- “বিবর্তনের স্বপক্ষে প্রাপ্ত প্রমাণগুলো একত্র করলে কারও পক্ষে এর বিরুদ্ধে কোনো যুক্তি তৈরি বা উত্থাপন করা সম্ভব হবে না”।
এভাবে নবম শ্রেণী থেকে শুরু করে মাস্টার্স পর্যন্ত ৯২% মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের মনে বিবর্তনবাদ বিষয়ক পাঠের মাধ্যমে এইরূপ বদ্ধমূল ধারণা তৈরি করা হচ্ছে যে, মানব জাতির বর্তমান অবয়ব বিবর্তনের মধ্য দিয়েই বর্তমান অবস্থায় এসেছে। মানুষ এবং বানরের পূর্ব পুরুষ একই রকম ছিল। এমন ধারণা বা বিশ্বাস একজন মুসলিম ছাত্রের জন্য স্পষ্টত: কুফরী। কারণ, পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আদমই প্রথম মানব এবং মানুষকে মৃত্তিকা দ্বারাই তৈরি করা হয়েছে। বিবর্তনের শিক্ষা কুরআনের এসব আয়াতকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে, নাউযুবিল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে আল্লামা কাসেমী আরো বলেন, ২০১৩ সালের পর থেকে গত ৬ বছর ধরে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতকোত্তর স্তরে বিবর্তনবাদ পড়ানো হচ্ছে। যার কারণে ইতিমধ্যেই আমরা লক্ষ্য করছি, দেশের তরুণ শিক্ষিত শ্রেণীর একটা অংশের মধ্যে নাস্তিক্যবাদি চিন্তা-চেতনা প্রচুর বেড়েছে।
তিনি বলেন, এখন যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা এগুলো পড়ছেন তারা আগামীতে বাবা-মা হবেন। বাবা-মা যদি সৃষ্টিকর্তার ধারণায় সন্ধিহান থাকেন, তবে সন্তানরা কী করবে? অর্থাৎ পরবর্তী প্রজন্ম সবগুলো মাধ্যম থেকে নাস্তিক্যবাদি ধ্যান-ধারণার শিক্ষা পাবে। পরিশেষে এরাও এক সময়ে ধর্মীয় বিধিনিষেধ মানবে না। ধর্মীয় বিয়ে মানবে না। বিয়ের বহুবিধ দায়বদ্ধতা ছাড়াই লিভটুগেদারে আগ্রহী হবে। মদ, জুুয়ার বিধিনিষেধ মানবে না। সমকামিতার বৈধতা নিয়ে আন্দোলন হবে। আল্লাহ, রাসূল, ইসলাম নিয়ে কটূক্তি বাড়তে থাকবে। আলেম-উলামা, ধর্মীয় শিক্ষা ও ধর্মভীরু মানুষকে বাধা ও বিরক্তিকর ভাবতে শুরু করবে।
জমিয়ত মহাসচিব বলেন, ইসলামী ধর্মবিশ্বাস মতে বিবর্তনবাদের পাঠ কুফরী শিক্ষা। দেশের জাতীয় শিক্ষায় এই কুফরী শিক্ষার সন্নিবেশ ঘটিয়ে পুরো জাতিকে নাস্তিক্যবাদি ধ্যান-ধারণায় গড়ে তোলার সর্বনাশা উদ্যোগ আমরা চুপচাপ দেখে যেতে পারি না। এ বিষয়ে দেশের আলেম সমাজ, ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক, রাজনীতিবিদ ও দেশবাসীকে সচেতন ও সোচ্চার হওয়ার তাগিদ অনুভব থেকেই আজকের সংবাদ সম্মেলন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ হল- স্বাধীনভাবে ধর্মকর্ম পালন, ধর্মীয় শিক্ষার্জন- সকলের নাগরিক অধিকার। তেমনি প্রতিটি নাগরিকের যার যার ধর্মীয় বিশ্বাস ধারণকে যে কোন হুমকি ও আগ্রাসী তৎপরতা থেকে রক্ষা করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তাদের ধর্মীয় আক্বিদা-বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিরোধী ডারউইনের বিবর্তনবাদ শিক্ষা দেওয়া সংবিধান প্রদত্ত ধর্মীয় অধিকার রক্ষার বিধানের গুরুতর লঙ্ঘন। তাই মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ঈমান-আক্বিদাবিরোধী বিবর্তন শিক্ষার পাঠ দেওয়া সংবিধান বিরোধী।
তিনি বলেন, সংবিধান মতে যেখানে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল- প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় বিশ্বাসের চেতনাবোধের চর্চাকে নিরাপদ রাখা, সেখানে পাঠ্যবইয়ে ৯২% ছাত্র-ছাত্রীকে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরোধী বিষয় পড়তে শিক্ষাবোর্ড কী করে বাধ্য করার সুযোগ পেল- আমরা এই উত্তর চাই। একজন মুসলমানকে মানব জাতির উদ্ভব মা হাওয়া ও বাবা আদম (আ.) থেকে উৎপত্তি- আবশ্যিকভাবে এই বিশ্বাস ধারণ করতে হয়। তাহলে পাঠ্যবইয়ে মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মানবজাতি ও বানরের পূর্বপুরুষ একই ছিল- এমন ঈমান-আক্বিদা বিরোধী পাঠ দেওয়ার অধিকার সংবিধানিকভাবে শিক্ষাবোর্ডের আছে কিনা- এই উত্তরও দিতে হবে।
বক্তব্যের শেষে জমিয়ত মহাসচিব বলেন, আমরা অনতিবিলম্বে সরকারের প্রতি পাঠ্যবই থেকে ইসলামী আক্বিদা- বিশ্বাস এবং সংবিধান বিরোধী ‘বিবর্তনবাদ’ শিক্ষা বাতিলের জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে ‘বিবর্তনবাদ’ অন্তর্ভুক্তির সাথে যারা জড়িত, তাদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে দলীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন- সহসভাপতি আল্লামা আব্দুর রব ইউসুফী, আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক, যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, মাওলানা তফাজ্জুল হক আজীজ, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা নাজমুল হাসান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুতিউর রহমান গাজীপুরী, অর্থসম্পাদক মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী, প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন এবং দপ্তর সম্পাদক মাওলানা আব্দুল গাফফার প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: