বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪১ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩

পাথর কোয়ারিগুলোতে থামছে না মৃত্যুর মিছিল

amarsurma.com

আমার সুরমা ডটকম:

সিলেটের পাথরকোয়ারিগুলোতে থামছে না শ্রমিকের মৃত্যুর মিছিল। কোয়ারিগুলো থেকে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের। তার আগে থেকে কোয়ারিতে বোমা মেশিন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে উচ্চ আদালতের। তবে এসব নিষেধাজ্ঞা মানছেন না পাথর ব্যবসায়ীরা। যন্ত্র ব্যবহার করে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে প্রায় প্রতিদিনই সিলেটের বিভিন্ন কোয়ারিতে অভিযান চালাচ্ছে প্রশাসন। তবু থামানো যাচ্ছে না বেপরোয়া পাথর ব্যবসায়ীদের।

ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে শ্রমিকদের প্রাণহানিও ঘটছে নিয়মিত। সর্বশেষ রোববার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কালাইরাগ এলাকার একটি গর্ত থেকে রুবেল মিয়া (২৪) নামে এ শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় আহত অবস্থায় আরও দু’জনকে উদ্ধার করা হয়। এরআগে ২০ জানুয়ারি কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলায় মাটি ধসে মারা যান এক শ্রমিক।

গত ২৭ জানিুয়ারিও গোয়াইনঘাটে বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারিতে টাস্কফোর্সের অভিযানে পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত প্রায় ২ কোটি টাকার অবৈধ যন্ত্র ধ্বংস করা হয়। গত একমাসে সিলেটের গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন কোয়ারিতে প্রায় ১৫টি অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। এসব ধ্বংস করা হয়েছে অন্তত ১০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) হিসাব মতে, সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোয় ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭৬ জন পাথর শ্রমিক নিহত ও ২১ জন আহত হয়েছেন। এত প্রাণহানি, এত অভিযান তবু কেন বন্ধ হচ্ছে না অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন। রাজনৈতিক মদদ, স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়া আর প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশের কারণে সিলেটের পাথর উত্তোলন বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, পাথর উত্তোলনের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে গোয়াইনঘাটের পর্যটনসমৃদ্ধ এলাকা জাফলংয়ের পরিবেশও। ‘পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করেও বন্ধ করা যাচ্ছে না জাফলং থেকে পাথর উত্তোলন।

সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে- অপরিকল্পিত পাথর উত্তোলনের ফলে পাথর কোয়ারিগুলোর পরিবেশ ও আশপাশের জনবসতি হুমকির মুখে পড়ায় ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর সিলেটের জাফলং, ভোলাগঞ্জ, শাহ আরেফিন টিলা, বিছনাকান্দি ও লোভাছড়া—এই পাঁচ কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি পাথর উত্তোলন বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। প্রশাসনের কঠোরতার কারণে জাফলং থেকে পাথর উত্তোলন কিছুটা কমেও এসেছে। তবে শাহ আরেফিন টিলা, ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, লোভাছড়াসহ অন্য কোয়ারিগুলোয় পাথর ব্যবসায়ীরা এখনো বেপরোয়া।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাই পাথর কোয়ারিগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের মদদেই পাথর ব্যবসায়ীরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাথর উত্তোলন করেন।

তিন মাস আগে কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন সুমন আচার্য। যোগদানের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই তিনি ভোলাগঞ্জ ও শাহ আরেফিন টিলায় যন্ত্র দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধে অভিযান চালাচ্ছেন। ২১ জানুয়ারি শাহ আরেফিন টিলায় অভিযান চালিয়ে ধ্বংস করেন প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি।

এত অভিযান সত্ত্বেও ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাথর উত্তোলন একেবারে বন্ধ করতে প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। পাথর উত্তোলনে এ এলাকায় যে বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে, তা কেবল প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বন্ধ করতে পারবে না।

এদিকে, জাফলংয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি আন্দোলনে নেমেছেন পাথর ব্যবসায়ী, শ্রমিক এবং এ খাত সংশ্লিষ্টরা। ২৩ জানুয়ারি পাথর উত্তোলনের সুযোগ চেয়ে জাফলংয়ে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন গোয়াইনঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ।

উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ বলেন, পাথর উত্তোলনের সঙ্গে লক্ষাধিক শ্রমিক জড়িত। তাই বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়া অমানবিক। মানবিক কারণে শ্রমিকদের বিক্ষোভে একাত্ম হয়েছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুস সাকিব বলেন, জাফলং, বিছনাকান্দির পরিবেশ রক্ষায় পাথর উত্তোলন নিষেধ করা হয়েছে। আমরা কাউকেই পাথর তুলতে দিচ্ছি না। তবে কেউ কেউ লুকিয়ে পাথর তোলার চেষ্টা করে। এমন খবর পেলেই আমরা অভিযান চালাই।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আক্তার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ১৫ জানুয়ারি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে (কালাইরাগ) একজন ও ২০ জানুয়ারি শাহ আরফিন টিলায় একজন পাথর শ্রমিক নিহত হন। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের সময় শাহ আরেফিন টিলা, জাফলং, বিছনাকান্দি, লোভাছড়া ও বাংলাটিলায় শুধু ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭৬ জন পাথর শ্রমিক নিহত এবং ২১ জন আহত হয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, পাথর উত্তোলনে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে শ্রমিক মৃত্যু থামানো যাবে না, রক্ষা করা যাবে না টিলা, নদীসহ প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য।

সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, পরিবেশের সুরক্ষায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। আমাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডই তা প্রমাণ করে। গোয়াইনঘাটের পাথর ব্যবসায়ীদের আমরা পর্যটন খাতে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করছি। তাতে পাথর শ্রমিকদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: