শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৬ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
প্রধানমন্ত্রী নাখোশ: বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অগ্রগতি রিপোর্ট জমা

প্রধানমন্ত্রী নাখোশ: বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অগ্রগতি রিপোর্ট জমা

amarsurma.com

আমার সুরমা ডটকম:

দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের মধ্যেই প্রশাসনকে গতিশীল করার উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে লক্ষ্যে প্রতিটি মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, বিভাগ, পরিদপ্তরের পারফরম্যান্স জানতে চেয়েছিলেন। মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরগুলোর অধিকাংশই নিজেদের কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন অগ্রগতির প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে জমা দিয়েছেন। তবে এখনো অনেক মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে পারেনি বলে জানা গেছে। যেসব মন্ত্রণালয় এখনো প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি তাদের দ্রুত প্রতিবেদন দেয়ার নিদেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জমা দেয়া ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের অগ্রগতি রিপোর্ট দেখে প্রধানমন্ত্রী নাখোশ হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে এই কয়েক মাসে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার বাড়ছে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, চলতি বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মন্ত্রিসভায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হার ৫৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর এই সরকারের সময়ে মন্ত্রিসভায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৭৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সরকারের মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরগুলোকে উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন দ্রæত শেষ করতে বলা হয়েছে।

ইতোমধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কিছু পদক্ষেপও দৃশ্যমান। ক্যাসিনো কান্ডের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কিছু দুর্নীতিরবাজকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করে প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে গণমুখী ও দুর্নীতিমুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, বর্তমানে টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ১১ মাস পূর্ণ করল। এই ১১ মাসে আওয়ামী লীগ সরকার কেমন দেশ চালিয়েছে তা নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। আওয়ামী লীগের মধ্য থেকেই বলা হয়েছে, এ কয়েক মাসে সরকার যেভাবে পরিচালিত হয়েছে তাতে সন্তুষ্ট নয় আওয়ামী লীগ। এমনকি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই সরকার পরিচালনা কার্যক্রমে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী সরকারের মন্ত্রী এবং দলের নেতাদেরকে সরকারের কার্যক্রম বাড়ানো এবং আরো দায়িত্বশীল হওয়ার ব্যাপারে বারবার তাগাদা দিচ্ছেন বলেও দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে। বর্তমান দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলা অভিযানকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছে। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এ বছরের ৭ জানুয়ারি তৃতীবারের মতো মন্ত্রিসভা গঠন করেছে। মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা এবং ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের বাদ দিয়ে চমক সৃষ্টি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন মন্ত্রিসভা কেমন করে তা দেখার অপেক্ষায় ছিল সকলেই। কিন্তু গত ১১ মাসের নতুন মন্ত্রিসভার কাজ জনগণের হৃদয় জয় করতে পারেনি। যদিও টানা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আওয়ামী লীগ ধরে রেখেছে। এমপিওভুক্ত করেছে প্রায় ২ হাজার প্রতিষ্ঠান এবং প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। সব দলকে সংসদে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সাফল্য অর্জন করেছে।

অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মতো গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ও তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো অগ্রগতির সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে এ মন্ত্রণালয়ের আওতায় সরকারি-কারিগরি এবং বৈদেশিক সহায়তায় বাস্তবায়নে ৫৪টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর অনুক‚লে ৪৬২৮.১০ কোটি টাকা (৪৬০৪.৭৭ কোটি টাকা, প্রকল্পের সাহায্য ২৩.৩৩ কোটি) বরাদ্দ রয়েছে। আগস্ট মাস পর্যন্ত বরাদ্দের ১৫ দশমিক ৯১ শতাংশ ও ব্যয় হয়েছে ২৮২.৪০ কোটি টাকা, যা বরাদ্দে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ। অন্য দিকে সংস্থার অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ৪৪টি প্রকল্পের সমন্বিত আর্থিক অগ্রগতি ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ।

অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতিমুক্ত সমাজব্যবস্থা গড়ে তেলার ক্ষেত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারেও বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। ইতোমধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কিছু পদক্ষেপও দৃশ্যমান। এ মন্ত্রণালয়কে একটি জবাবদিহিতামূলক গণমুখী ও দুর্নীতিমুক্ত গড়ে তোলায় আমরা কাযক্রম অব্যাহত রেখেছি। ইতোমধ্যে সংস্থাগুলোর অনেক সেবা অটোমেশনের আওতায় আনা হয়েছে ও সেবাগুলো দ্রæত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করা হয়েছে। প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সকলকে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের অগ্রগতি রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে যে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা জমা দিয়েছেন, সেই মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হচ্ছে- কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, সেতু বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়, ভ‚মি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ ও সুরক্ষা সেবা বিভাগ, গৃহায়ন ও গণপ‚র্ত মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার বিভাগ, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও ম‚ল্যায়ন বিভাগ ও ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এসব মন্ত্রণালয় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের শতভাগ বাস্তবায়ন করেছে বলে অগ্রগতি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।

অন্যদিকে এখনো যেসব মন্ত্রণালয় সরকারের কর্মপরিকল্পনা ও অগ্রগতি বাস্তবায়ন করতে পারেনি তাদের দ্রুত বাস্তবায়ন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে মন্ত্রণালয়গুলো হচ্ছে- পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

সূত্র জানায়, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চারটি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ৫৩টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৩১টি। ২২টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৫৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে পাঁচটি নীতি বা কৌশল, দু’টি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুমোদিত হয়েছে। এ সময় সংসদে আইন পাস হয়েছে পাঁচটি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গত ২১ জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভার মোট ১৬টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে ১১৬টি সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকগুলোতে গ্রহণ করা ১৬১টি সিদ্ধান্তের মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ১২২টি। বাস্তবায়নের হার ৭৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বাস্তবায়নাধীন সিদ্ধান্ত রয়েছে ৩৯টি। তবে সরকারে অগ্রগতি অনেক।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: