শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০৫ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
বিমানের একজন কেবিন ক্রুর সততা

বিমানের একজন কেবিন ক্রুর সততা

আমার সুরমা ডটকমএকজন সাধারণ মানুষ প্রায় তিন লাখ ৩৫ হাজার টাকা পেয়েও অনেক কষ্টে টাকার প্রকৃত মালিককে খুঁজে বের করে সেই টাকাগুলো ফিরিয়ে দিলেন। টাকা পাওয়ার ঘটনাটি কয়েক দিন আগের। তবে বৃহস্পতিবার সকালে টাকার মালিক লন্ডন প্রবাসী শামীম আহমেদকে টাকাগুলো ফিরিয়ে দেন বিমানের কেবিন ক্রু কাজী আশরাফ আল কাদের হ্যাপি।

জানা গেছে, গত ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমানের বিজি ০০২ ফ্লাইটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকায় ফেরার পথে এক নারী যাত্রী হ্যাপিকে ময়লাসদৃশ একটি কালো পলিথিন তুলে দিয়ে তা ডাস্টবিনে ফেলে দিতে বলেন। ছোট ওই পলিথিনের প্যাকেট হাতে করে যাত্রীদের সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া দৃষ্টিকটু হবে, তাই ইউনিফরমের ওপরে থাকা জ্যাকেটের পকেটে রেখে দেন পরে ফেলে দেবেন ভেবে। কিন্তু কাজের চাপে তা ফেলতে ভুলে যান তিনি। বিমানটি ঢাকায় ফেরে ১৫ ডিসেম্বর দুপুর।

পরে বিমানবন্দর থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসায় ফিরে মনে পড়ে কালো পলিথিনের ময়লাসদৃশ্য প্যাকেটটির কথা। প্যাকেটটি তুলনামূলক ভারি। শুধু কাগজ বা পলিথিন হলে এরকম মনে হতো না। কৌতূহল নিয়েই প্যাকেটটি খোলেন। পলিথিনের ভেতরে একটি খাকি খাম। বিস্ময়ে চোখ দুটি আটকে যায়। খামের ভেতরে পাউন্ড। অনেক পাউন্ড। সঙ্গে ব্যবহৃত টিস্যু পেপার। দুটি ভাঁজে রাখা পাউন্ডগুলো গুনতে থাকেন। সর্বমোট তিন হাজার ২৮৫ পাউন্ড।

w1

কেবিন ক্রু হ্যাপি জানান, পাউন্ড পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তিনি। এতো টাকা কী করবেন। এর মালিককে কিভাবে খুঁজে পাবেন। তিনি বলেন, ‘পাউন্ডের মালিকের ভাগ্য ভালো যে ওই পলিথিনে টুকুরো কাগজে ‘নিজ’ লেখা লন্ডনের একটি ফোন নম্বর ছিল। ওই নম্বরে কল দিতেই এক ভদ্রলোক তা রিসিভ করেন।’

হ্যাপি তার কাছে জানতে চান, এই দুই/এক দিনের মধ্যে আপনার পরিচিত কেউ বাংলাদেশ বিমানে লন্ডনে বা লন্ডন থেকে বাংলাদেশে এসেছেন কি-না। ফোনের অপরপ্রান্তের ব্যক্তির কণ্ঠে বিস্ময়। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ আমি বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে এসেছি।’ তারপরই জানতে চান, ‘আপনার কিছু হারিয়েছি কি-না।’ ওই ব্যক্তি জানান, তার প্রায় চার হাজার পাউন্ড হারিয়েছে। তা পলিথিনে মোড়ানো একটি খামে ছিল।

happy-shamim
পাউন্ডের অংক না মেলায় সঠিকভাবে হিসেব করে পাউন্ডের অংক জানাতে অনুরোধ করেন হ্যপি। পরবর্তীতে ফোনে ওই ব্যক্তি জানান, সেখানে চার হাজার পাউন্ড ছিল। কিছু খরচ করার পর তির হাজার ২শতাধিক পাউন্ড ছিল। এরমধ্যে আলাদা একটি ভাঁজে তিনটি ২০ পাউন্ড করে ৬০ পাউন্ড ছিল। এতে টিস্যু পেপার ও একটি সাদা কাগজে বাংলায় লেখা তার ফোন নম্বরটি রয়েছে।

তারপরই হ্যাপি নিশ্চিত হন এই পাউন্ডের মালিক ওই ব্যক্তি। তিনি লন্ডন প্রবাসী শামীম আহমেদ চৌধুরী। কথাবর্তার এক পর্যায়ে তার পাউন্ডগুলো নিতে অনুরোধ করেন হ্যাপি। তখনও শামীম বিশ্বাস করতে পারেননি হারানো পাউন্ডগুলো ফিরে পাচ্ছেন। শামীম বলেন, ‘পাউন্ডগুলো হারিয়ে এর আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কেবিন ক্রু হ্যাপি সততার পরিচয় দিয়ে আমাকে ঋণী করেছেন। এরকম সৎ মানুষ অনেক উন্নত দেশেও পাওয়া দুষ্কর’ বলে জানান তিনি। লন্ডন প্রবাসী শামীম আহমেদ চৌধুরী হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের আউশকান্দির বাসিন্দা।

কেবিন ক্রু হ্যাপির পুরো নাম কাজী মো. আশরাফ আল কাদের। মোহাম্মদপুরের নূরজাহান সড়কের ভি-২০ বাড়ির বাসিন্দা হ্যাপি। প্রয়াত কাজী নুরুল কাদের ও রাশেদা কাদেরের ছেলে তিনি। বরেণ্য সাংবাদিক প্রয়াত এবিএম মুসার ভাগ্নে হ্যাপি। হ্যাপি জানান, ধর্ম ভিরুতার কারণেই পাউন্ড ওই ব্যাগে দেখার পর মনে হয়েছে এই পাউন্ড ফিরিয়ে দেয়া তার নৈতিক দায়িত্ব। এই মানসিকতা থেকেই মালিককে খোঁজার চেষ্টা করেন তিনি।

লেখাটি হাবিবুল্লাহ মিজান (Habibullah Mizan) নামে একজনের স্ট্যাটাস থেকে। লেখাগুলো কিছুটা পরিমার্জিত।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: