শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:৫৩ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
মানব জীবনে স্বাধীনতা: একটি পর্যালোচনা

মানব জীবনে স্বাধীনতা: একটি পর্যালোচনা

amarsurma.com

সৈয়দ রেজওয়ান আহমদ

আল্লাহ মানুষকে স্বাধীন করেই সৃষ্টি করেছেন এবং এই স্বাধীনতা নিয়েই মানুষ জন্মগ্রহণ করে। তাই বলা হয় জন্মগতভবে মানুষ স্বাধীন। কেউ এই স্বাধীনতা ভোগের অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। জোর-জবরদস্তি করে তাকে দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দি করবে না। মানুষ চায় স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে। তাই স্বাধীনতাকে খর্ব করার অধিকার কারো নেই। এ অধিকার খর্ব করা যেমন মানবাধিকার পরিপন্থী; তেমনি শরীয়াহ আইনের বিরোধীও বটে। স্বাধীনতা আল্লাহ প্রদত্ত এক আমানত, যা আল্লাহ তা‘আলা আমাদের দান করেছেন। উন্নত সমাজ ও জাতি গঠনে স্বাধীনতার কোনো বিকল্প নেই। ইসলাম যখন স্বাধীনতাকে তার মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করে তখন সময়টি ছিল এমন যে, অধিকাংশ মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিক, রাজনীতিক, সামাজিক, ধর্মীয় এবং অর্থনৈতিকভাবে আক্ষরিক অর্থেই ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছিল।

মানুষের এই বহুরূপ দাসত্ব-শৃঙ্খলের বিরুদ্ধে ইসলাম স্বাধীনতা ঘোষণা করল। বিশ্বাসের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা এবং সমালোচনার স্বাধীনতাসহ সব ক্ষেত্রেই ইসলাম স্বাধীনতা দিয়েছে। আর চিরকাল ধরে এসব বিষয়েই মানুষ তাদের স্বাধীনতা প্রত্যাশা করে আসছে। এটা হলো ব্যক্তি জীবনের স্বাধীনতা। আবার কোন রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রকে জবর দখলের মাধ্যমে সমগ্র জাতিকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে। কোন একসময় জাতি রুখে দাঁড়ায়, তীব্র প্রতিরোধ বা যুদ্ধের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে শৃঙ্খল মুক্ত করে দেশকে স্বাধীন করে। আর এটাকে বলে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল। তাই ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন। ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়ে, আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে যে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঙালি, দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন তার চূড়ান্ত পরিণতি। দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় বাংলাদেশের বিজয় ও স্বাধীনতা। পাকিস্তানি শাসন, শোষণ, নির্যাতন ও নিপীড়নের নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য স্বাধীনতার সংগ্রামে এ দেশের জনগণ জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ইসলাম যে দেশপ্রেম তথা মাতৃভূমির জন্য যুদ্ধের কথা বলেছে এই যুদ্ধ ছিলো সেই চেতনারই শামিল।

মহানবী স. এর জীবনাদর্শ নিয়ে চিন্তা করলে তাঁর মধ্যে দেশপ্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। তিনি মাতৃভূমি মক্কাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তাই মক্কার কাফেরদের কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে মক্কা ছেড়ে মদিনায় চলে যান। হিজরতকালে বারবার মক্কার দিকে ফিরে তাকিয়ে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলেছিলেন, ‘হে আমার স্বদেশ! আমি তোমাকে ছেড়ে যেতাম না। যদি না আমাকে বাধ্য করা হতো।” ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ চিন্তা, বিশ্বাস ও আদর্শ বেছে নেওয়ার ব্যাপারে স্বাধীন। এমনকি ভিন্নমতের অধিকারী ব্যক্তি অধিকারকেও স্বীকার করে ইসলাম। তবে ইসলাম স্বাধীনতার কিছু সীমারেখা টেনে দিয়েছে, যাতে তা মানুষের বিভ্রান্তি ও অধঃপতন কিংবা অন্যদের ক্ষতির মাধ্যম না হয় বা অন্যদের স্বাধীনতা ও অধিকার হরণ না করে।

ইসলাম গতানুগতিক কোনো স্বাধীনতার স্লোগান গান নিয়ে আসেনি, ইসলাম মানবতার সামগ্রিক জীবনে মুক্তি, সাম্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার বাস্তব কর্মসূচি দিয়ে মানুষকে সৎ পথে চলার দিকনির্দেশনা দিতে এসেছে। এ অধিকার উপেক্ষা করে যুগে যুগে কিছু পাপাচারী স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করতে যেয়ে আইনি বাধ্যবাধকতা আরোপ করে বা গোষ্ঠিগত আধিপত্য বিস্তার করতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করে পরোক্ষভাবে নাগরিক জীবনকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করার অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

ইসলাম রক্তপাত, হানাহানি, মারামারি, হত্যা অথবা ইসলাম গ্রহণে জবরদস্তির অনুমোদন দেয় না। কোনো জুলুমকে প্রশ্রয় দেয় না ইসলাম। ইসলামে স্বাধীনতা হচ্ছে নিজেকে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে দেশ ও জাতির জন্য কাজ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘বলো, আমার সালাত, আমার ইবাদাত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে।’ (আল কুরআন-৬ : ১৬২)

ইসলাম মানুষকে রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছে, কিন্তু স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বৈরতান্ত্রিকতাকে মোটেও প্রশ্রয় দেয়নি। দলের ঊর্ধ্বে উঠে ছোট-বড়, ধনী-নির্ধন, দুর্বল-সবল সকলের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমি তো তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি আল্লাহ তোমাকে যা জানিয়েছেন সে অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার মীমাংসা করো।’ (আল কুরআন-৪ : ১০৫)

ইসলাম শোষণমুক্তির কথা বলে। মানুষের দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত হয়ে মানুষকে আল্লাহর কাছে সমর্পিত হতে শিক্ষা দেয়। কাজেই মুসলমানের প্রকৃত মুক্তি ও সফলতা হলো পরকালীন মুক্তি ও সাফল্য। কোনো কাজে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য না হওয়া পর্যন্তই মুসলমানদের স্বাধীনতা রয়েছে। চলতি স্বাধধীনতার মাসে বলা যায়, প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবস জাতির জীবনে প্রেরণায় উজ্জীবিত হওয়ার নতুন বার্তা নিয়ে আসে। স্বাধীনতা দিবস তাই বাংলাদেশের মানুষের কাছে মুক্তির প্রতিজ্ঞায় উদ্দীপ্ত হওয়ার ইতিহাস। এবারের স্বাধীনতা দিবসে আমাদের এ কথাই বলা উচিত, স্বাধীনতা আমাদেরকে শিখিয়েছে দেশ, জাতি ও মানুষের কল্যাণের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে ন্যায়, সাম্য প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের জন্য শপথ গ্রহণ করব। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: