বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪৭ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
‘মুজিবের কাজই করেছেন খালেদা’

‘মুজিবের কাজই করেছেন খালেদা’

index_111645আমার সুরমা ডটকম : মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে মন্তব্যের জন্য খালেদা জিয়ার প্রশংসা করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জাফরুল্লাহ চৌধুরী। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরে নিহতের সংখ্যা বের করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন দাবি করে বিএনপিপন্থি এই পেশাজীবী নেতা বলেছেন, বিএনপি নেত্রী তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ‘বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগকেই’ সামনে এনেছেন। “সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে উনি শেখ মুজিবকেই উচ্চকিত করেছেন, এজন্য আপনাকে (খালেদা জিয়া) ধন্যবাদ।” শুক্রবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সেমিনার কক্ষে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন জাফরুল্লাহ। দলীয় বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড প্রচারে বিএনপির ‘দুর্বলতা’ ধরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সংগঠন শক্তিশালী করতে খালেদাকে গুলশান ছেড়ে দেশজুড়ে সফর করার পরামর্শ দেন তিনি। গত ২১ ডিসেম্বর এক আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা বলেন, “আজকে বলা হয়, এতো লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে আসলে কত লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নানা বই-কিতাবে নানারকম তথ্য আছে।”
তার এই বক্তব্যের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। বক্তব্য প্রত্যাহার করে খালেদাকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। খালেদার নামে আদালতে একাধিক মামলাও দায়ের করা হয়।
সেই সমালোচনার মধ্যেই খালেদার বক্তব্যের সমর্থনে জাফরুল্লাহ বলেন, “মুজিব ভাইয়ের (বঙ্গবন্ধু) বড় গুণ ছিল মহানুভবতা। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন-মুক্তিযুদ্ধে যারা মারা গেছেন, তাদের সঠিক তথ্যটা উপস্থাপন করা।
“উনি ১৩ তারিখ দায়িত্বভার নেওয়ার পরে ড. সাত্তারকে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে কতজন মারা গেছেন, মুক্তিযুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা নিরূপনের জন্য কমিটি করেছিলেন। এখনও ড. সাত্তারের জুনিয়র আসাফুদ্দৌলা সাহেব জীবিত। উনি তো কমিটিতে ছিলেন, জানেন সেই কমিটিতে কী হয়েছে। উনার এটা দায়িত্ব জানানোর।”
মুক্তিযুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা নির্ধারণে সে সময় আরেকটি কমিটি করা হয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমান আরেকটা দ্বিতীয় মহান কাজ করেছিলেন, উনি তৎকালীন আইজি আবদুর রহীম সাহেবের নেতৃত্বে একটা ১০ জনের কমিটি করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে হতাহতের সংখ্যাটা নিরূপনের জন্য- ইউনিয়ন থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত। এসব কথা (ইতিহাস) আমরা ভুলে গিয়েছিলাম।” একাত্তরে নিহতের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে দেওয়া বক্তব্যে খালেদা জিয়া আবারও সেই বিষয়টিকে সামনে এনেছেন বলে মনে করছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী, যিনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল অবমাননার দায়ে সম্প্রতি শাস্তি পেয়েছেন।
জাফরুল্লাহ বলেন, “খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ সংকীর্ণতাকে পরিহার করে আমাদের বঙ্গবন্ধু, আমাদের প্রিয় মুজিব ভাইয়ের যে চিন্তা-চেতনা ছিল তাকে উনি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।” ‘আমার দেশ বন্ধ, মাহমুদুর রহমানের কারাবন্দিত্বের ১০০০ দিন’ শিরোনামের এই আলোচনা সভায় তার দৃষ্টিতে বিএনপি নেতৃত্বের সফলতা-ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। কোনো ‘ভালো’ পত্রিকা না থাকাই বিএনপির সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলে মনে করেন তিনি। জাফরুল্লাহ বলেন, “বিএনপির যারা আছেন, প্রতিবার বক্তৃতায় বলতে ভালোবাসেন, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী (খালেদা জিয়া), তার সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা-একটা ভালো পত্রিকা বের করেন নাই।” তিনি বলেন, “আজ সকালে উনার দিনকাল (দলীয় মুখপাত্র) পত্রিকাকে দেখেছেন, হাত উঠান। এই অনুষ্ঠানে ২০০ জন লোক আছেন, মাত্র দুই জন লোক হাত উঠিয়েছেন। আমি সকালে ১০টা পত্রিকা পড়ে এসেছি, আমি দিনকাল দেখিনি। সুতরাং এতো বড় দলের নিজেদের কথা বলার যদি একটা পত্রিকা না থাকে, সেখানে রাজনীতি গতি পায়না।” রসিকতার সুরে জাফরুল্লাহ বলেন, “বিএনপির ভালো পত্রিকা নেই বলে রাজনীতি গতি পাচ্ছেনা, সেজন্য আমাদের মহাসচিব এখনো ভারপ্রাপ্তই আছেন। এই কারণে এই কথাগুলো বলছি, পত্রিকা থাকলে উনার কথাকে বলেছেন,  মাহমুদুর রহমান বলেছেন, সত্যের পথ নির্দেশনা দিয়েছেন। “আমার একটা পরামর্শ থাকবে, উনারা (বিএনপি) এতো বড় একটা রাজনৈতিক দল, ৫০ কোটি টাকা খুঁজে পাননা? তারা কি আমার দেশ বের করতে পারেন না?”
download (31)২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম নির্বাচন বর্জন এবং সাম্প্রতিক পৌরসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিএনপি নেত্রীর সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। “উনি দেখিয়েছেন-এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে কী রকম নির্বাচন হবে। এ ব্যাপারে উনার সার্থকতা আছে।” তবে এখন সংলাপের কথা বলে খালেদা জিয়া সময়ক্ষেপণ করছেন বলে মনে করেন তিনি। পরিবর্তন আনতে খালেদা জিয়াকে জনগণের কাছে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, “আপনি নিজেকে গুলশানের ঘরে অন্তরীন না রেখে বাংলাদেশ ভ্রমণে বেরিয়ে যান। তবেই দেখবেন দেশের পরিবর্তন কীভাবে আসে।” কারাবন্দি নেতাকর্মীদের স্বজনদের খোঁজ-খবর নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার হিসাবে উনার (খালেদা) নৈতিক দায়িত্ব তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দেখা করা। তাতে কর্মীদের মনোবল ফিরে আসবে, উজ্জীবিত হবে।”
প্রায় তিন বছর ধরে মাহমুদুর রহমানকে কারাবন্দি থাকতে হওয়ার জন্য গণমাধ্যম ও বিচার বিভাগের দোষ দেখছেন কলামনিস্ট ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, “আমি তিনটি শক্তির কথা বলব যারা মাহমুদুর রহমান ভাইয়ের এই ১০০০ দিন কারাগারে বন্দি থাকার জন্য দায়ী। এক নম্বর হচ্ছে, আমাদের দেশের গণমাধ্যম।
“এদেশের গণমাধ্যম যদি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতো যে, আমাদের বিরোধী চিন্তার সঙ্গে যতই মতবিরোধ থাকুক, যখনই একটা কণ্ঠস্বরকে রুদ্ধ করি, এই ক্ষতি আজকে হোক, কালকে হোক আমাদের ওপর এসে পড়ে। দেশের গণমাধ্যমের এখনকার যে ভূমিকা এটা দেখে বুঝতে পারেন যে সমস্ত দোষ শুধু শেখ হাসিনার ওপর চাপালে চলবে না।”
বিচার বিভাগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বিচার বিভাগ আমাদের নাগরিক ও মানবিক অধিকার কখনো রক্ষা করেনি। এমনকি এই আদালত অবমাননার দায়ে ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ সভার অনেককে বিভিন্ন সময়ে হেনস্তা করেছেন, যার কোনো নীতিগত ভিত্তি যেমন নেই, তার কোনো আইনি ভিত্তিও নেই।”
গত ৫ জানুয়ারি নয়া পল্টনে বিএনপির জনসভায় জনসমাগমের কথা তুলে ধরে সাংবাদিক শফিক রেহমান বলেন, “সেদিন  জনসভায় মানুষের অভাবনীয় উপস্থিতি ছিল, তারা প্রাণের তাগিদে সেখানে গিয়েছেন।
“এর কয়েকদিন আগে ৩০ ডিসেম্বর দেশজুড়ে পৌরসভা নির্বাচনে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে বিএনপির সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। ৫ জানুয়ারি সেই মিটিংয়ে খুব কম মানুষ হবে ভেবেই হয়ত কর্তৃপক্ষ শেষ মুহূর্তে অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু স্বতঃস্ফূর্তভাবে এতো মানুষ উপস্থিত হয়ে ম্যাডাম খালেদা জিয়ার বক্তৃতা শুনে এটাই প্রমাণ করেছে যে, বিএনপির জনসমর্থন এখনো অটুট-অদ্বিতীয়।”
বিএনপির এই জনপ্রিয়তা বুঝতে পেরে ক্ষমতাসীনরা এদেশে কখনো নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেবে না মন্তব্য করে প্রবীণ এই সাংবাদিক বলেন, “তারা পাতানো নির্বাচন দিতে চাইবে। বিএনপিকে সবসময়ই তাতে অংশ নেয়ার উদাত্ত আহ্বান জানাবে। “বিএনপি সে ধরনের নির্বাচনে অংশ নিলে দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় স্থান অর্থাৎ জাতীয় পার্টির পরের স্থান পেতে পারে। এই অর্থে আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় থেকে যাবে। এটা অভাবনীয় কিছু নয়। কারণ আওয়ামীলীগ বার বার বলছে, তারা ২০২১, ২০৩১, ২০৪১ সাল প্রভৃতি সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চায়।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য রাখেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: