বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১০:০০ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
মেঘালয়ের কুলঘেষা সুনামগঞ্জের ট্যাকেরঘাটে এবারের ইত্যাদি

মেঘালয়ের কুলঘেষা সুনামগঞ্জের ট্যাকেরঘাটে এবারের ইত্যাদি

আমার সুরমা ডটকম:

ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, শিল্প, সাহিত্য, প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন ও পর্যটন সমৃদ্ধ স্থানসমূহে গিয়ে ইত্যাদি ধারণের ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্যের অপূর্ব লীলাভূমি সুনামগঞ্জের দুর্গম অঞ্চল তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তঘেষা বিসিআইসির ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পে।
চলতি বছরের ১৯ নভেম্বর ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের কুলঘেঁষা ট্যাকেরঘাটের স্বচ্চ নীল জলের শহীদ সিরাজ লেকের তীরে সবুজ বনানী, পাহাড় আর অসাধারণ নৈসর্গিক দৃশ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে সাজানো মঞ্চে ধারণ করা হয় এবারের ইত্যাদি। সব সময় রাতের আলোকিত মঞ্চে ইত্যাদি ধারণ করা হলেও এই স্থানের নৈসর্গিক রূপ রাতের বেলায় দেখানো সম্ভব নয় বলে এবার দিনের আলোর পড়ন্ত আভায় ইত্যাদির ধারণ শুরু হয়।
শহীদ সিরাজ লেকের তীরে ইত্যাদির ধারণ উপলক্ষে হাওড়ের রাজধানী সুনামগঞ্জে ছিল উৎসবের আমেজ। অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় দুপুর ২টা থেকেই আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় অনুষ্ঠানস্থল।
প্রসঙ্গত: ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫নং সেক্টরের ৪নং ট্যাকেরঘাট সাব-সেক্টরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমুন্নত রেখে এখানে শায়িত মুক্তিদ্ধুদ্ধে অন্যতম শহীদ সিরাজ (বীর বিক্রম)’র নামানুসারে প্রকল্পের দৃষ্টি নন্দন পতিত কোয়ারটিকে ২০০৭ সালে ‘শহীদ সিরাজ লেক’ নামে নামকরণ করেন সাংবাদিক হাবিব সরোয়ার আজাদ।
আমন্ত্রিত দর্শক ছাড়াও হাজার হাজার মানুষ ওপার এপারের পাহাড়, ছোট ছোট টিলা, গাছ ও লেকের তীরে দাঁড়িয়ে ইত্যাদির ধারণ উপভোগ করেন। টিলার ওপর থাকা দর্শকদের সারিসারি লাইন ও কিছু কিছু স্থানের দৃশ্য দেখলে মনে হবে যেন মানুষের পাহাড় তৈরী করা হয়েছে।
এত দুর্গম অঞ্চলে অনুষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও অনুষ্ঠানস্থলে, প্রায় লক্ষাধিক দর্শক সমাগম হয়েছিল। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মোটর সাইকেল এবং ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করেও হাজার হাজার দর্শক এসেছিলেন অনুষ্ঠান উপভোগ করতে।
বাংলাদেশের যখন যে স্থানে ইত্যাদি ধারণ করা হয় সেই স্থানটির বৈশিষ্ট্যকে কেন্দ্র করেই সেট নির্মাণ করা হয়। ফলে দর্শকরা যেমন ঐ স্থানটি সম্পর্কে জানতে পারেন, তেমনি নিত্য-নতুন লোকেশনের কারণে প্রতিবারই সেট নির্মাণেও আসে বৈচিত্র্য। টেলিভিশন অনুষ্ঠানকে স্টুডিওর চার দেয়ালের ভিতর থেকে বাইরে এনে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে অনুষ্ঠান ধারণের ইত্যাদির এই ধারণাটিকে এখন অনেকেই গ্রহণ করেছেন। ফলে টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণেও বৈচিত্র্য এসেছে।
শিকড় সন্ধানী ইত্যাদিতে সবসময়ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার বিমুখ, জনকল্যাণে নিয়োজিত মানুষদের খুঁজে এনে তাদের বিভিন্ন কর্মকান্ড তুলে ধরা হয়। যাতে তাদের কাজ দেখে অন্যেরাও অনুপ্রাণিত হতে পারেন। এছাড়াও গত প্রায় তিন দশক ধরে ইত্যাদি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে দেশি-বিদেশি অচেনা-অজানা স্থানকে নিয়ে তথ্য ভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিবেদন করছে।
এবারের পর্বে রয়েছে সুনামগঞ্জের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত-দর্শনীয় ও পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানগুলোর উপর তথ্য ভিত্তিক প্রতিবেদন। এ পর্বে দেখানো হবে গাছ মাছ অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হিজল করচ সমৃদ্ধ ওয়াল্ড হেরিটেইজ অব টাঙ্গুয়ার হাওর, প্রায় ১২শ বছরের পুরনো লাউড় রাজ্যের হলহলিয়ার হাওলি দুর্গ ও রাজবাড়ি, বারেকটিলা, সপ্তগঙ্গার মিলনকেন্দ্র সীমান্তনদী জাদুকাটা, জয়নাল আবেদীনের শিমুল বাগান সহ অসংখ্য দৃষ্টি নন্দন দুশ্যাবলী।
বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের এক অপরিহার্য নাম সুনামগঞ্জ। দেওয়ান হাছন রাজা, রাধারমণ দত্ত, দুর্বিন শাহ এবং শাহ আব্দুল করিম, মহাভারতের প্রথম অনুবাদক ও মহাকবি সঞ্জয়’র কবিতার সমৃদ্ধ ভান্ডার সহ আরো বহু লোকজ সাধকদের অমর সঙ্গীতে মুখরিত এই সুনামগঞ্জ। তাদের উপর রয়েছে একটি তথ্যভিত্তিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।
ঢাকার আশুলিয়ার মাইনুল মাজেদিনের ঘড়ি সংগৃহের উপর রয়েছে একটি তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন। জার্মান প্রবাসী শৌখিন দূরপাল্লার দৌড়বিদ বাংলাদেশের নবাবগঞ্জের শিব শংকর পালের উপর রয়েছে আর একটি অনুপ্রেরণামূলক প্রতিবেদন। যিনি শুধুমাত্র ইত্যাদিতে অংশগ্রহণের জন্য সরাসরি নিউইয়র্ক থেকে সুনামগঞ্জের টেকেরঘাটে এসেছিলেন।
২০১০ সালের অক্টোবর মাসে প্রচারিত ইত্যাদিতে দু’জন তরুণকে দেখানো হয়েছিল, যারা হতদরিদ, অসহায় শিশুদের চিকিৎসা খরচের জন্য বিভিন্ন দোকান বা মলের সামনে দাঁড়িয়ে স্বচ্ছ কাচের বাক্সে অর্থ সংগ্রহ করতো। এবারের পর্বে জানা যাবে এই তরুণেরা এতদিন কি করেছে এবং এখন কি করছে? বিদেশি প্রতিবেদনে রয়েছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি দক্ষিণ আফ্রিকার উপর একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন।
এবারের ইত্যাদিতে মুল গান রয়েছে একটি। যেহেতু ইত্যাদি এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে ধারণ করা হয় এবং সেই অঞ্চলের শিল্পীদের দিয়েই গান করানো হয়, সেই ধারাবাহিকতায় এবারের ইত্যাদিতে সুনামগঞ্জের মরমী সাধক দেওয়ান হাছন রাজা, রাধারমণ দত্ত, দুর্বিন শাহ ও শাহ্ আব্দুল করিমের লেখা চারটি গানের অংশ বিশেষের সমন্বয়ে একটি গান গেয়েছেন এই সিলেটেরই সন্তান শিল্পী শুভ্রদেব, সেলিম চৌধুরী ও সহশিল্পীবৃন্দ। এছাড়াও সুনামগঞ্জকে নিয়ে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের কথায়, হানিফ সংকেতের সুরে এবং মেহেদীর সঙ্গীতায়োজনে একটি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেছেন টেকেরঘাটেরই স্থানীয় নৃত্যশিল্পীবৃন্দ। নাচটির কোরিওগ্রাফি করেছেন মনিরুল ইসলাম মুকুল, কণ্ঠ দিয়েছেন প্রতিক হাসান ও আনিকা।
দর্শকপর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণস্থান সুনামগঞ্জকে ঘিরে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে হাজার হাজার দর্শকের মাঝখান থেকে ৩ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। ২য় পর্বে নির্বাচিত দর্শকরা আঞ্চলিক ভাষায় একটি নাট্যাংশে অভিনয় করেন। যা ছিল বেশ উপভোগ্য।
নিয়মিত পর্বসহ এবারও রয়েছে বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু সরস অথচ তীক্ষè নাট্যাংশ। চাপমুক্ত থাকার উপায়, নির্বাচনার্থী প্রার্থীর আসল রূপ, কথা নিয়ে কথা, দান প্রতিদান, পারিবারিক কলহে অন্যের প্রভাব, এগিয়ে থাকার অসুবিধাসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর রয়েছে বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ। বরাবরের মত এবারও ইত্যাদির শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ইত্যাদির নিয়মিত শিল্প নির্দেশক মুকিমুল আনোয়ার মুকিম।
এবারের ইত্যাদিতে উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন-আজিজুল হাকিম, রোজী সিদ্দিকী, সোলায়মান খোকা, আব্দুল আজিজ, জিয়াউল হাসান কিসলু, কাজী আসাদ, আব্দুল কাদের, আফজাল শরীফ, কামাল বায়েজিদ, আমিন আজাদ, শবনম পারভীন, জামিল হোসেন, তারেক স্বপন, সাজ্জাদ সাজু, মনজুর আলম, নজরুল ইসলাম, মতিউর রহমান, নিপু, হাশিম মাসুদ, ইমিলা, সাদিয়া রুবায়েত, শান্তসহ আরো অনেকে। পরিচালকের সহকারী হিসাবে ছিলেন যথারীতি রানা ও মামুন।
গণমানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদির ধারণকৃত এ পর্ব একযোগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে-এ প্রচারিত হবে ৩০ নভেম্বর, রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর প্রচারিত হবে। অনুষ্ঠানটি পুনঃপ্রচার করা হবে আগামী ২ ডিসেম্বর, রবিবার রাত ১০টার ইংরেজি সংবাদের পর।
ইত্যাদির রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মান করেছে ফাগুন অডিও ভিশন।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: