শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪০ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
রক্ত ও পানি একই সঙ্গে বইতে পারে না: মোদি

রক্ত ও পানি একই সঙ্গে বইতে পারে না: মোদি

mudiআমার সুরমা ডটকম ডেক্সউরি আক্রমণের পর পাকিস্তানকে চাপে রাখতে সিন্ধু নদ চুক্তিকে এবার হাতিয়ার করতে চলেছে ভারত। আজ সোমবার সিন্ধু পানি চুক্তি খতিয়ে দেখার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্পষ্ট করেই সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রক্ত ও পানি একই সঙ্গে বইতে পারে না। নিজের সরকারি বাসভবনে আজ সোমবার ৫৬ বছরের পুরোনো এই পানি চুক্তির বিভিন্ন দিক পর্যালোচিত হয়। বৈঠক শেষে সরকারি সূত্রে জানা গেছে, চুক্তি রদ না করে চুক্তির মধ্যে থেকে ভারত এই বিপুল পানিসম্পদের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করবে। সে জন্য চন্দ্রভাগা নদীর ওপর তিনটি বাঁধ দেওয়ার কাজ দ্রুত শেষ করবে। সেগুলো হলো পকুল দুল বাঁধ, শিয়ালকোট বাঁধ ও বুরসর বাঁধ। সূত্রটি জানায়, প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, চুক্তি অনুযায়ী যাবতীয় আইনগত অধিকার ভারত এবার থেকে প্রয়োগ শুরু করবে। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্কর, পানিসম্পদসচিব শশী শেখর, প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সচিব নৃপেন্দ্র মিশ্রসহ অন্যান্য কর্মকর্তা। সরকারি সূত্র জানায়, এই চুক্তি অনুযায়ী ভারত পশ্চিম প্রান্তের তিনটি নদীর পানি ব্যবহার করে মোট ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। সেই কাজে ভারত এবার মনোযোগী হবে। তা ছাড়া তুলবুল নেভিগেশন প্রকল্পের বন্ধ কাজও শুরু করা হবে। ২০০৭ সাল থেকে এ কাজ বন্ধ রয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সর্বাত্মক যে আলোচনা বন্ধ রয়েছে, গুজরাটের সার ক্রিক ও এই তুলবুল প্রকল্প তার অন্তর্গত।

উরিতে জঙ্গি হানার পর থেকে এই উপমহাদেশে যুদ্ধ যুদ্ধ যে পরিস্থিতি শুরু হয়েছে, সেই পটভূমিতে পাকিস্তানকে ‘যোগ্য জবাব’ দিতে সিন্ধু চুক্তিকে হাতিয়ার করার দাবি হঠাৎই জোরালো হয়ে ওঠে। বিজেপির সাবেক অর্থ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশোবন্ত সিনহা সিন্ধু চুক্তি রদ করে পাকিস্তানকে ‘পানিতে মারার’ কৌশল গ্রহণের দাবি জানান। দলের শীর্ষ নেতা ও কাশ্মীরের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাম মাধব ‘দাঁতের বদলে চোয়াল’ নেওয়ার হুমকি দিয়েও চাপ সৃষ্টি করেছেন। প্রধানত কট্টরপন্থীদের এই চাপের মুখেই সিন্ধু চুক্তি নিয়ে সোমবার বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।

ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের মধ্যে ১৯৬০ সালে এই চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী কাশ্মীরের মোট ছয়টি নদী দুই দেশের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। ঠিক হয়, পশ্চিম দিকের তিন নদী—সিন্ধু, চন্দ্রভাগা ও ঝিলমের পানি পাকিস্তানে যাবে। পূর্ব প্রান্তের তিন নদী—বিপাশা, ইরাবতী ও শতদ্রুর পানি পাবে ভারত। চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানে যাওয়া সিন্ধু নদের ২০ শতাংশ পানি ভারত চাষ, পরিবহন ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করতে পারে। পাওনা হলেও এত বছরে কখনো ভারত তার দাবি আদায়ে সচেষ্ট হয়নি। চুক্তির পর দুই দেশ তিনটি যুদ্ধও লড়েছে। কিন্তু কখনো এভাবে পানিতে মারার কথা ভারত ভাবেনি। এই চুক্তির তৃতীয় শরিক বিশ্বব্যাংক। প্রধানত তাদেরই সহযোগিতায় ১০ বছর টালবাহানার পর এই চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল।

প্রাণে না মেরে পাকিস্তানকে পানিতে মারতে একতরফা সিন্ধু চুক্তি রদ করায় কোনো বিশেষজ্ঞেরই অবশ্য মত নেই। যশোবন্ত সিনহাদের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের অনুমোদন পায়নি। না পাওয়ার প্রধান কারণ অবশ্য চীন। ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান ও সাংসদ জয়ন্ত রায় চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিন্ধু নিয়ে ভারত যা-ই করুক, চীনের কথাটা মাথায় রাখা দরকার। কাশ্মীরের সব নদীর উৎপত্তি যেমন চীনে, তেমনই ব্রহ্মপুত্রের উৎপত্তিও। চীন আবার পাকিস্তানের পরম মিত্র। সিন্ধুর প্রতিক্রিয়া ব্রহ্মপুত্রের ওপর পড়ে কি না, সেই ভাবনা ভেবেই ভারতের এগোনো উচিত।’

আন্তর্জাতিক নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীর উজান ও ভাটির দেশের মধ্যে সংঘাত সব দেশে সব সময়েই রয়েছে। কাজেই নদীবিষয়ক কোনো সিদ্ধান্ত কখনো একতরফা হওয়া ঠিক নয়। তাতে সংঘাত বাড়ে। তা ছাড়া সিন্ধু চুক্তি একটা ত্রিপক্ষীয় আন্তর্জাতিক চুক্তি। জাতিসংঘের সনদেও এই জাতীয় আন্তর্জাতিক চুক্তির বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আগ্রাসী মনোভাবের কোনো স্থান নেই।’ অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জি মনে করেন, একতরফাভাবে চুক্তি রদের জন্য কট্টরপন্থীদের চাপ অবাস্তব। এতে ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নিয়ে চুক্তি করতে ভারতই চীনকে চাপ দিচ্ছে। আগ্রাসী মনোভাব সেই সম্ভাবনা নষ্ট করবে। তা ছাড়া ভারত আগ্রাসী কোনো মনোভাব নিলে তা কিন্তু বাংলাদেশকেও গভীর চিন্তাগ্রস্ত করে তুলবে।’ এই প্রসঙ্গে সাবেক কূটনীতিক দেব মুখোপাধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখন এই উপমহাদেশে জল ও অন্যান্য বিষয়ে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার কথা বলছি। এ অবস্থায় একটা স্থায়ী আন্তর্জাতিক চুক্তি নিয়ে একতরফা কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে গভীর চিন্তাভাবনার প্রয়োজন।’

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: