শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩৩ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
সুনামগঞ্জের টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ডের অগ্নিকান্ডের ১৪ বছর পুর্ণ হলেও ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণের দাবী

সুনামগঞ্জের টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ডের অগ্নিকান্ডের ১৪ বছর পুর্ণ হলেও ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণের দাবী

Amar surma logo

গ্যাস ফিল্ডে বিদেশী কোম্পানী নাইকো কর্তৃক দু’দফা বিস্ফোরন

কাজী জমিরুল ইসলাম মমতাজ, স্টাফ় রিপোর্টার সুনামগঞ্জ:
সুনামগঞ্জের টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ডের অগ্নিকান্ডের একযুগ পরও এলাকার নারী, পুরুষ ও শিশুরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন এলাকায়। গ্যাসফিল্ডের আশপাশের গ্রামবাসী  শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, চর্মরোগ, আর্সেনিকসহ বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে ভোগছেন।
কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকোর অদক্ষতার কারণে পরপর দুই দফা অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ হয় গ্যাস ফিল্ড এলাকার টেংরাটিলা, আজবপুর, গিরিশনগর, ইসলামপুর, ভুজনা, আলীপুর, শান্তিপুর ১০টি গ্রামের মানুষ। ২০০৫ সালের (আজকের সোমবার) ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন কানাডিয়ান কোম্পানী নাইকো সুনামগঞ্জের ছাতক গ্যাসফিল্ডের
টেংরাটিলা গ্যাসকূপে রিলিফ ওয়েল করতে গিয়ে ব্লো আউটের ঘটনায় দুই দফা আগুন লাগে।

অগ্নিকান্ডে তিন হাজার একর ফলের বাগান, শতাধিক পুকুরের মাছ, সবজি বাগান নষ্ট হয়ে যায়। টিউবওয়েলের পানিতে মাত্রতিরিক্ত আর্সেনিক থাকায় এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে। টেংরাটিলা গ্রামে গভীর নলকূপের মাধ্যমে ২১৬টি পরিবারে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া সামর্থ্যবানরা ব্যাক্তিগত উদ্যোগে গভীর নলকূপ স্থাপন করে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু হতদরিদ্র বৃহৎ জনগোষ্ঠী এ সুবিধার বাইরে রয়েছেন। এখনো গ্যাসফিল্ড সংলগ্ন এলাকায় দু’একটি জলাশয়ে বুদবুদ করে গ্যাস বের হচ্ছে। বুদবুদ আকারে বের হওয়া গ্যাস স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার অনিরাপদ ভাবে রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহার করেছেন গ্যাসফিন্ডের নিকটবর্তী আবাসিক এলাকার দুইশতাধিক পরিবার।

সিভিল সার্জন অফিস সুত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের অগাস্ট মাসের প্রতিবেদনে টেংরাটিলা কূপ খনন কালে গ্যাস ব্লো আউটের ফলে প্রতিকুল স্বাস্থ্যগত প্রভাব বিষয়ক প্রতিবেদনে দেখাযায় শ্বাসকষ্ট জনীত রোগে ৪৫ জন, হৃদরোগে ২২ জন, চর্মরোগে ৩৬ জনসহ অন্যান্য রোগে ২২ জনসহ মোট ১২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে এসব রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও বেশি। গ্যাসফিল্ড এলাকার গ্রামের লোকজনের স্বাস্থ্য সমস্য প্রকট আকার ধারন করেছে। গেল বার ফেব্রুয়ারী মাসে অগ্নিকান্ডে গ্যাস সিপেজ ও ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে ড্রোন দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার তথ্য উপাত্য সংগ্রহ করেন। সরকার আর্ন্তজাতিক আদালতে ক্ষতিপুরণ মামলা দায়ের করে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলাটি বিচারধীন রয়েছে।
গ্যাস ফিল্ড এলাকার নারী ও পুরুষরা জানান, অনিয়ন্ত্রিতভাবে গ্যাস বের হওয়ার ফলে তাদের কৃষি, মাছচাষ, স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।
আন্তর্জাতিক আদালতে দায়ের করা নাইকো ক্ষতিপূরণ মামলার অন্যতম স্বাক্ষী ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ অগ্নিকান্ডের ফলে সৃষ্ট ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করে বলেন, স্থানীয় ৯নং সুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খন্দকার মোঃ মামুনুর রশীদ এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, এই অঞ্চলের মানুষজন একদিকে যেমন বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকটে ভুগছে, অন্যদিকে নানান ধরনের রোগভোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু নারীসহ বিভিন্ন বয়সের লোকজন।
এ ব্যাপারে টেংরাটিলা কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি ) মরিয়ম আক্তার বলেন, প্রতিদিন ক্লিনিকে শ্বাসকষ্ট ও আর্সেনিক জনীত রোগে আক্রান্ত হয়ে বিপুল সংখ্যক রোগী আসেন। গেল মাসে তিনি ৭০০ জন রোগীর চিকিৎসা দিয়েছেন যাদের মধ্যে তিনশতাধিক রোগী হলেন শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ ও আর্সেনিকে আক্রান্ত বলে জানান।
এ ব্যাপারে টেংরাটিলা কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মরিয়ম বেগম জানান, গ্যাসের বুদবুদের কারণে প্রতিমাসে ১৫শত থেকে ১৬শত রোগী আসে, শ্বাসকষ্ট, চুলপড়া, আর্সেনিকে আক্রান্ত। ঔষদের পরিমাণ কম থাকায় তাদের অনেক সময় চিকিৎসা সেবা দেয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট ডাঃ বিষ্ণু প্রসাদ চন্দ বলেন, টেংরাটিলা গ্যাসফিল্ডে অনিয়ন্ত্রিতভাবে যে গ্যাস বের হচ্ছে এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুকিপুর্ন । এভাবে গ্যাস বের হতে থাকলে গ্যাসফিল্ড এলাকার মানুষের চোখে ঝাপসা দেখা, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ হতে পারে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট ডাঃ বিষ্ণু প্রসাদ চন্দ, টেংরাটিলা এলাকায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে যে প্রাকৃতিক গ্যাস উৎগ্রীবন হতে থাকে ফলে এটা জনস্বাস্থ্যর জন্য খুবই ঝুকিপূর্ণ। এই গ্যাস উৎগ্রীবনের ফলে শ্বাসকষ্ট মাথা ঘুরানো থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগের আর্বিভাব দেখা দিতে পারে। মানুষজন অঞ্জান হতে পারে পাশাপাশি মৃত্যুবরণ ও করতে পারে। তাই গ্যাস উৎগ্রীবন এলাকা তেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে দোয়ারাবাজার কল্যাণ সমিতি উপদেষ্ঠা এডভোকেট আব্দুল মজিদ খসরু বলেন, নাইকো কর্তৃক এই টেংরাটিলা এলাকায় দু’দফা যে গ্যাস বিস্ফোরন ঘটে। কিন্ত নাইকো কোম্পানী ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দেয়নি। অবিলম্বে নাইকো কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ প্রদানে সরকারের নিকট দাবী জানান।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ বলেন, টেংরাটিলা গ্যাসফিল্ডের সার্বিিক অবস্থা প্রশাসন সরকারকে অবহিত করেছে। কিছু গ্যাস বুদবুদ আকারে বের হচ্ছে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এসব গ্যাস জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক নয় বা কোন বিস্ফোরণ ঘটবে না। কোন দূর্ঘটনার আশংকা আমরা করছি না। গ্যাস উত্তোলন করা হলে গ্যাসের বুদবুদ আর থাকবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: