বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩৫ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
সুনামগঞ্জে অকাল বন্যা কৃষকের বুকফাটা আর্তনাদ

সুনামগঞ্জে অকাল বন্যা কৃষকের বুকফাটা আর্তনাদ

মোঃ আবুল কালাম জাকারিয়া, জামালগঞ্জ: সিলেটের পশ্চিম ও নেত্রকোনার পূর্বে ভাটি অঞ্চল সুনামগঞ্জে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কৃষকের বুকফাটা অর্তনাদ ও মাথায় হাত। একমাত্র ফসল বোরো ধান এখনো কাঁচা-পাকা। চোখের সামনে তলিয়ে যাচ্ছে পানির নিচে। এ দৃশ্যটি যে কত হৃদয় বিদারক, সেটি ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝতে পারবেনা! বৃষ্টির পানিতেই তলিয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ হাওর। বেড়িবাঁধগুলোর অবস্থাও নাজেহাল। আবার কোন কোন বেড়িবাঁধ ফেটে ভেঙ্গে পানিও ঢুকছে। কোনটি তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির জন্য যে গুলো তলিয়ে গেছে এজন্য তো কাউকে দোষ দেয়া যায়না। কিন্তু কিছু অকর্মাদের অর্থ লোভে আর অলসতায় যে সমস্ত হাওর তলিয়ে যাচ্ছে, তাদের ব্যাপারে কি করা যায়-এখন জনমনে প্রশ্ন। এভাবেই বলছিলেন ভীমখালীর এক কৃষক। জামালগঞ্জের কৃষকেরা এখন স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষায় গ্রাম ছেড়ে হাওরের ফসর রক্ষা বাঁধে কাজ করছেন। জীবন-জীবিকার একমাত্র সম্বল বোরো ফসল রক্ষার তাগিদে উরা-কোদাল, রশি ও বাঁশ নিয়ে সর্বক্ষণ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন হাজারো কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের পেশাজীবিরা। এজন্য পানি উন্নন বোর্ডেকে দায়ী করে চরম ক্ষোভে কাজ করছেন কৃষকরা। সুরমা নদীর পানি ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে চলতি বোরো ধান ঘরে উঠবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
টানা ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় হারাম হয়েছে কৃষকের ঘুম। জনপ্রতিনিধিদের বাঁধ নির্মাণ কাজের উপর নজর নেই। ভীমখালী জাল্লাবাজ বাঁধের অবস্থাও তেমন ভালো নয়। সরেজমিন দেখা যায় তার নাজুক অবস্থা, তবে এলাকার জনগণসহ জনপ্রতিনিধিগণ সজাগ দৃষ্টিতে আছেন। প্রতিদিনই কাজে আছেন তারা। সকাল থেকেই এলাকাবাসীসহ ভীমখালীর নওয়াগাঁও বাজারের ইমাম-মোয়াজ্জিন ঐক্য পরিষদের কর্মীগণও ছিলেন। তাঁরা এলাকার মেম্বার, চেয়ারম্যানসহ সর্বসাধারণের নিয়ে মাঠের পাশেই এক মোনাজাত করেন। আল্লাহর কাছে আজাব আর গজব থেকে পানাহ চান। পরে বাঁধকে আরো শক্ত করার জন্য কাজে লেগে যান তারা। উপস্থিত ছিলেন অত্র ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ দুলাল মিয়া, ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল ওয়াকিব, নূরুল আমিন, তহুর মিয়া, সৈয়দুল ইসলাম, জিল্লুর রহমান প্রমুখ। তারা বলেন, এ বাঁধ ভাঙ্গলে শুধু ভীমখালীই নয় বরং ফেনারবাঁক, ভীমখালী, লিপশা, দিরাইসহ অনেক হাওরের ক্ষতি হবে। তাই স্বেচ্ছাসেবী হয়ে কাজ করে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করা দরকার।
ভারী বর্ষণে ফসল ক্ষতির ব্যাপারে উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান ও হাওর বাঁচাও দেশ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি ইউসুফ আল আজাদ বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিনিধিরা পিআইসিদের জোগ-সাজেসে কাজ বিলম্ব ও দুর্নীতি করে কৃষক নিধনের পায়তারা করছে। এ বছর আগাম বন্যায় বাঁধ ভেঙ্গে ফসল তলিয়ে গেলে কৃষকদের নিয়ে আন্দোলনে নামব। অতিসত্বর বাঁধ নির্মান কাজ সম্পন্ন না করলে কৃষকরা সংশ্লিষ্ট পিআইসি ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করতে বাধ্য হবে। পিআইসি প্রতিনিধি ফেনারবাক ইউপি চেয়ারম্যান করুনা সিন্দু তালুকদার বলেন, কাজ প্রায় সম্পন্ন করেছি, কিন্তু অর্থ পাই নাই। বেহেলী ইউপি চেয়ারম্যান অসীম তালুকদার বলেন, সময়মতো পর্যাপ্ত অর্থ না পাওয়ায় কাজ সম্পন্ন করতে বিলম্ব হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাফায়েত আহমদ সিদ্দিকী বলেন, ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। ফসল রক্ষা বাঁধগুলোও ঝুকিপূর্ণ রয়েছে। এ বছর আবহওয়া ফসলের প্রতিকুলে রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রসূণ কুমার চক্রবর্তী বলেন, আমরা পিআইসিদের সর্তক করে দিয়েছি, আমরাও সুদৃষ্টি রাখছি, অতিসত্বর বাঁধ ও বেরী বাঁধ নির্মাণ করার জন্য। অসমাপ্ত কাজগুলোতে বস্তা পাঠিয়েছি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মহোদয় হাওর রক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করেছেন, অকাল বন্যায় যেন ফসল তলিয়ে না যায়, সরকারের পক্ষে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: