শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪৮ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
সুনামগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম নিয়ে লঙ্কাকান্ড

সুনামগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম নিয়ে লঙ্কাকান্ড

আমার সুরমা ডটকমসুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম নিয়ে লঙ্কাকান্ড শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে যাচাই-বাছাই কমিটির আওতাভূক্ত নির্বাচিত ও সরকার মনোনিত কোন কোন জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার,যুদ্ধকালীন কোম্পানী কমান্ডারগং যাদের কাছ থেকে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা হারে ঘুষ পাচ্ছেন তাদেরকেই সুকৌশলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভূক্ত করার সিদ্বান্ত চুড়ান্ত করছেন। কথিত কমিটিগুলোতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদেরকে সদস্যসচিব করে দায়িত্ব প্রদান করা হলেও সঠিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সরকারী কর্মকর্তারা হুমকী ও বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছেন। ভূক্তভোগীদের অভিযোগ সচিবের মাথায় লবন রেখে বড়ই খাচ্ছেন দুষ্ঠ কমিটির কোন কোন সদস্যরা। জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা কমিটিতে নির্বাচিত কমান্ডার আতাউর রহমান,সদর উপজেলার কমান্ডার আব্দুল মজিদ আদৌ মুক্তিযোদ্ধা নন বলে চ্যালেঞ্জ করেছেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা।
তারা বলেন,১৯৭১ সালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বিরামপুর গ্রামের মৃত সিকন্দর আলীর পুত্র আব্দুল মজিদ সুনামগঞ্জ সরকারী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়ন করেন। তার সহকর্মী হাছননগর নিবাসী আব্দুর রাজ্জাক তালুকদার এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন,৭১ এর ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হয়। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কমিটির যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি হাজী নুরুল মোমেন কিশোরগঞ্জ জেলার মুক্তিযোদ্ধা। সদর উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য গুল আলীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন তার প্রতিপক্ষ মুক্তিযোদ্ধারা। তাই সুনামগঞ্জ জেলায় কেবা কারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তারা আদৌ জানার কথা নয়। বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ কমিটির সদস্যরা কিভাবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভূক্ত করবেন এ প্রশ্ন যাচাই-বাছাই কমিটির সামনে আগত কোন কোন সাক্ষী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাগনের। মুক্তিযোদ্ধা মালেক হোসেন পীর বলেন,সদর উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির ৭জনের মধ্যে ৩ জনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আপত্তি রয়েছে। এসব অভিযোগের সুরাহা করে পরে যাচাই-বাছাই করলে ভালো হতো।
এছাড়া ৪ ক্যাটাগরীতে যেসব মুক্তিযোদ্ধাদেরকে যাচাই বাছাই করা হচ্ছে তাদের সঠিক কোন তালিকা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে বা যাচাই-বাছাইস্থানের দেয়ালে সাঁটানো হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে যাচাই বাছাই কমিটির জনৈক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বলেন,আমরাতো খায়েশ করে টাকা নেইনা। যাচাই বাছাই কমিটির অনুমোদন আনতে গিয়ে মন্ত্রণালয় ও জামুকাকে টাকা দিতে হয়েছে। যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হওয়ার পর মন্ত্রীকে আরেক দফা টাকা দিতে হবে। তাই টাকা যারা দেবে তারাই মুক্তিযোদ্ধা হবে। এখন আর কোন গরীব লোক বা প্রকৃত উপেক্ষিতরা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সুযোগ নেই। অনলাইনে আবেদনকারী উপেক্ষিত মুক্তিযোদ্ধারা তালিকাভুক্তির জন্য সাক্ষীদেরকে ঘটনাস্থলে হাজির করলে কমিটির আওতাভূক্ত মুক্তিযোদ্ধারা সাক্ষীদেরকে অপমানিত করে বিদায় করে দেন বলেও জানা গেছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কমিটির সদস্য-সচিব ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান বলেন,মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে কমিটির কোন কোন মুক্তিযোদ্ধারা টাকাপয়সার লেনদেন করছে তা আমি অবগত নই।
কানে শুনলেও কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। কোন অভিযোগ থাকলে আমার কাছে অথবা জেলা প্রশাসকের কাছে দাখিল করার জন্য আমি ভূক্তভোগীদেরকে অনুরোধ জানাবো। যাচাই-বাছাইয়ের ব্যাপারে তিনি সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সততার আশ্রয় নিয়ে কাজ করছেন বলে চ্যালেঞ্জ করেন। প্রয়োজনে যেসব মুক্তিযোদ্ধার ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে তাদের সকলের নাম তালিকা দেয়ালে দেয়ালে টাঙ্গানো হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন,আমরা লালবই অর্থাৎ মুক্তিবার্তা,যেকোন একটি গেজেটে যাদের নাম আছে সেসব মুক্তিযোদ্ধা,প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষরিত সনদপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও অনলাইনে আবেদনকারী এই ৪ ক্যাটাগরীর মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যপারে কারো কোন অভিযোগ আপত্তি আছে কিনা সে ব্যপারে তদন্ত করছি। কমিটির সভাপতি হাজী নুরুল মোমেনসহ সংশ্লিষ্টরা আবেদনকারীদেরকে বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে সঠিক মুক্তিযোদ্ধা কিণা তা নির্নয় করছেন।
তবে অনলাইনে যারা আবেদন করতে পারেননি অর্থাৎ এই মুহুর্তেও যারা আবেদন করছেন আমরা তাদের আবেদনও রাখছি। জেলা প্রশাসকের এবং জামুকার সিদ্ধান্ত নিয়ে এসব আবেদনের ব্যপারেও যাচাই-বাছাই করবো। জেলা কমান্ডার হাজী নুরুল মোমেন যথাসম্ভব সততার সাথে যাচাই-বাছাই কার্যক্রম সুচারুরুপে সম্পন্ন করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবাণ জানানোর পাশাপাশি তালিকাভূক্তির ব্যপারে কাউকে টাকা না দেয়ার জন্য আবেদনকারীদের আহবাণ জানিয়েছেন। এদিকে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ও তালিকা বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন দিলীপ জেলা প্রশাসকের কাছে যাচাই বাছাই কার্যক্রম নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। তিনি বলেন,বিতর্কিত কমিটি বাতিল করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামীলীগ নেতা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান প্রতিনিধি,মানবাধিকার কর্মী সমন্বয়ে কার্যকর যাচাই-বাছাই কমিটি গঠনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আমি অনুরোধ জানিয়েছি। এ ব্যপারে তিনি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীরও কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। মুক্তিযোদ্ধারা বলেন জসীম উদ্দিন দিলীপ সুনামগঞ্জ জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আছদ্দর আলী চৌধুরী লাল মিয়া ও মুজিবুর রহমান চৌধুরী এবং আনসার কমান্ডার নওয়াব আলীর দেয়া প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা।
মুক্তি সংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্টের সাবেক সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক মতিউর রহমান বলেন,তথাকথিত যাচাই-বাছাই কমিটির তালিকায় বিতর্কিত যেসব ব্যক্তির নাম রয়েছে তাদেরকে অবিলম্বে কমিটি থেকে বাদ দিয়ে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রহনযোগ্য কমিটি করা হউক। আর যেসব মুক্তিযোদ্ধাদেরকে যাচাই বাছাই করা হচ্ছে তাদের নাম তালিকা সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ,সুনামগঞ্জ পৌরসভা,জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা তথ্য অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নোটিশ বোর্ডে ঝুলানো হউক। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের বক্তব্য জানতে চেয়ে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: