শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
সেই কবরেই দাফন গালিবাকে

সেই কবরেই দাফন গালিবাকে

galibআমার সুরমা ডটকমফরিদপুরের সেই কবরে দাফন করা হলো গালিবা হায়াতকে। আজ সোমবার সন্ধ্যায় শহরের আলীপুর কবরস্থানে দাফন করা হয় গত বৃহস্পতিবার দাফনের আগ মুহূর্তে কেঁদে ওঠা নবজাতক গালিবাকে। রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার রাতে মারা যায় শিশুটি। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গালিবাকে নিয়ে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশে মাইক্রোবাসে রওনা দেন পরিবারের সদস্যরা। বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁরা ফরিদপুর শহরের কমলাপুরের বাড়িতে পৌঁছান। গালিবার কফিন বাড়িতে নিলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন মা, বাবা, দাদা, দাদিসহ স্বজনেরা। এ সময় সেখানে উপস্থিত অনেকেই চোখের জল ধরে রাখতে পারেন নি। সেখানে গোসল শেষে গালিবাকে কাফনের কাপড় পরানো হয়।
সাদা কাফনের কাপড় পরে বাবা নাজমুল হুদার কোলে চড়ে ১৫০ গজ দূরে অবস্থিত ঈদগাহ ময়দানে গালিবাকে নিয়ে যাওয়া হয় বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে। জানাজা শেষে আলীপুর কবরস্থানে দাফন করা হয় গালিবাকে। যে কবরস্থান থেকে গত বৃহস্পিতবার ফিরে এসেছিল গালিবা, সেখানেই আজ সন্ধ্যায় পরম মমতায় সজল চোখে অন্য অনেকের সঙ্গে দাদা আবুল কালাম মিয়া গালিবাকে মাটির বিছানায় চিরকালের জন্য শুইয়ে দেন। এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে গালিবার দাদা আবুল কালাম মিয়া বলেন, ‘আমাদের মন ভেঙে গেছে। প্রথম নাতির মুখ দেখব বলে বড় আশা করেছিলাম। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তাকে আমরা বাঁচাতে পারলামনা।’
ওই শিশুর বাবা ফরিদপুর শহরের কুঠিবাড়ী কমলাপুর এলাকার বাসিন্দা ফরিদপুর জেলা ক্রিকেট দলের সাবেক সদস্য নাজমুল হুদা মিঠু। মা আইনজীবী নাজনীন আক্তার পপি। শিশুর দাদা আবুল কালাম মিয়া বলেন, ‘গত বুধবার রাত নয়টার দিকে নাজনীনের প্রসববেদনা শুরু হয়। তাঁকে রাত ১১টার দিকে ডা. জাহিদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাঁকে হাসপাতালের দোতলায় চিকিৎসকের কক্ষে নেওয়া হয়। এ সময় চিকিৎসক রিজিয়া আলম অস্ত্রোপচার কক্ষে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি এসে জানান হাসপাতালে আসন নেই। তারপরও তাঁকে অনুরোধ করা হলে “দেখব” বলে চলে যান তিনি। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে চিকিৎসকের কক্ষে স্বাভাবিকভাবে নবজাতকটি জন্মগ্রহণ করে। এ সময় হাসপাতালের কেউ কক্ষে ছিলেন না। কিছুক্ষণ পর আমাদের ডাকাডাকিতে ওই চিকিৎসক আবার আসেন এবং নবজাতকটি মৃত বলে জানান। এরপর শিশুটিকে একটি কাগজের কার্টনে ভরে দোতলায় মেঝের ওপর রেখে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।’

নবজাতক মৃত হয়েছে ভেবে সময়ক্ষেপণ না করে দাদা আবুল কালাম মিয়াসহ পরিবারের লোকজন ওই দিন রাত তিনটার দিকে হাজির হন শহরের আলীপুর কবরস্থানে। কিন্তু কবরস্থানের লোকজন রাতে কবর খুঁড়তে অস্বীকৃতি জানিয়ে দাদাকে বলে সকালে আসতে। বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টার দিকে দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কবর দেওয়ার আগে কেঁদে ওঠে নবজাতক। যে হাসপাতাল তাকে মৃত ঘোষণা করেছিল, সেই হাসপাতালেই নেওয়া হয় নবজাতককে।
এরপর চিকিৎসার জন্য গত শনিবার বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একটি হেলিকপ্টারে করে শিশুটিকে ঢাকায় পাঠানো হয়। স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার রাতে মারা যায় শিশুটি। এরমধ্যে নবজাতককে নিয়ে ঘটে যায় অনেক ঘটনা। নবজাতকের নাম রাখা হয় গালিবা হায়াত। এর অর্থ মৃত্যুঞ্জয়ী। জীবিত নবজাতককে মৃত ঘোষণা করায় গঠিত হয় দুটি তদন্ত কমিটি। চিকিৎসার জন্য গঠন করা হয় বোর্ড।

একটি কমিটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে : এ ঘটনার জন্য শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গঠিত ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কে এম কামরুজ্জামান দুপুরে বলেন, ‘এই কমিটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থাৎ ২৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক বেগম উম্মে সালমা তানজিয়ার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।’ তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে চিকিৎসকের কাজে গাফিলতি রয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া ওই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার ব্যাপারেও উঠে এসেছে নানা গলদ। ফরিদপুরের সিভিল সার্জনের কার্যালয় কর্তৃক গঠিত তিন সদস্যের দ্বিতীয় তদন্ত দলের প্রধান ঊষারঞ্জন চক্রবর্তী জানান, ‘আমাদের তদন্তও বর্তমানে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে এ কমিটির আরও সাত দিন সময় প্রয়োজন হবে।’

ফরিদপুরের সিভিল সার্জন অরুণ কান্তি বিশ্বাস জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদের নির্দেশনায় এ ঘটনা তদন্তে রাজবাড়ী জেলার সিভিল সার্জন মো. রহিম বক্সকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের আরও একটি তদন্ত দল গঠন করেছে। তিনি বলেন, ওই কমিটি শিগগিরই তদন্তকাজ শুরু করবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: