বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩

সৌদি-ইরানের তীব্র শত্রুতার কারণ কি?

আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক: সৌদিআরব আর ইরান সবসময়ই পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল, কিন্ত গত কয়েকমাসে এ সম্পর্ক প্রকাশ্য বৈরিতায় রূপ নিয়েছে। এই দুটি দেশ কেউ কাউকে দেখতে পারে না কেন? এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছেপেছে বিবিসি বাংলা। বিবিসির বিশ্লেষক জোনাথন মার্কাস বলছেন, সৌদিআরব এবং ইরান- দুটিই শক্তিশালী দেশ এবং তারা এখন আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের জন্য তীব্র লড়াইয়ে রত। এই বৈরিতা কয়েক দশকের পুরোনো এবং এর একটা ধর্মীয় দিকও আছে। ইরান প্রধানত: শিয়া মুসলিমদের আবাসভূমি, অন্যদিকে সৌদিআরব মনে করে তারাই সুন্নি মুসলিমদের প্রধান শক্তিধর দেশ।

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এই প্রাচীন ধর্মীয় বৈরিতার প্রভাব পড়েছে। কারণ এ অঞ্চলে বিভিন্ন দেশ আছে যারা হয় শিয়া নয়তো সুন্নি প্রধান। সৌদিআরব ইসলাম ধর্মের জন্মভূমি এবং একটি রাজতন্ত্র। তারা নিজেদের মুসলিম বিশ্বের নেতা মনে করতো। কিন্তু ১৯৭৯ সালে ইরানে যখন ইসলামী বিপ্লব হলো-তার ফলে এ অঞ্চলে একটি নতুন ধরনের দেশের জন্ম হলো যারা এক ধরনের ‘থিওক্রেসি’ বা ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র। শুধু তাই নয় তাদের প্রকাশ্য লক্ষ্য ছিল এই বিপ্লবের মডেলকে অন্য দেশেও ছড়িয়ে দেয়া। বিশেষ করে গত ১৫ বছরে সৌদিআরব এবং ইরানের মধ্যেকার বিভেদ তীব্রতর হয়েছে বেশ কিছু ঘটনার কারণে।
২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন এক অভিযানে ক্ষমতাচ্যুত হন সাদ্দাম হোসেন-যিনি ছিলেন একজন সুন্নি আরব এবং ইরানের এক বড় শত্রু এবং সামরিক দিক থেকেও সমানে সমান। তার প্রস্থানের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বৃদ্ধির পথে এক বিরাট বাধা অপসারিত হয়ে যায় এবং তার পর থেকেই ইরানি প্রভাব বাড়ছে। এরপর ২০১১ সালে আরব বিশ্বজুড়ে গণ অভ্যুত্থানের ফলে সেখানে তৈরি হয় এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি। এই পরিস্থিতির সুযোগে ইরান এবং সৌদিআরব তাদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করে সিরিয়া বাহরাইন ও ইয়েমেনের মতো দেশগুলোতে। তাতে এই দুই দেশের মধ্যে আরো সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি হয়।
ইরানের সমালোচকরা বলেন, তারা চাইছে পুরো অঞ্চল জুড়ে তাদের প্রক্সিদের প্রতিষ্ঠা করতে-যাতে ইরান থেকে শুরু করে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত পুরো ভূখণ্ডটিতে ইরানের নিয়ন্ত্রণ কায়েম হয়। বিবিসির বিশ্লেষক জোনাথন মার্কাস বলছেন, এখন এই কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে কারণ ইরান এই প্রভাব বিস্তারের খেলায় অনেক ক্ষেত্রেই জয়লাভ করছে। সিরিয়ায় ইরান এবং রাশিয়ার সমর্থনপুষ্ট বাশার আসাদে বাহিনী সৌদিআরব সমর্থিত বিদ্রোহী গ্রুপগুলোকে হারিয়ে দিয়েছে।
সৌদিআরব এখন প্রাণপণে চেষ্টা করছে ইরানের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে আনতে। অন্যদিকে সৌদিআরবে এখন যিনি কার্যত শাসক সেই প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সামরিক অ্যাডভেঞ্চারগুলো আঞ্চলিক উত্তেজনাকে আরে বাড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি ইয়েমেনে যুদ্ধ চালাচ্ছেন, কিন্তু তিন বছর পর এই ঝুঁকি নেয়ার জন্য তাকে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে।
অনেক পর্যবেক্ষকই মনে করছেন, লেবাননেও প্রধানমন্ত্রী হারিরকে পদত্যাগ করার জন্য সৌদিআরবই চাপ দিয়েছে, যাতে লেবাননকে অস্থিতিশীল করে তোলা যায়-যেখানে ইরানের মিত্র শিয়া মিলিশিয়া হেজবোল্লাহ সামরিক ভাবে অত্যন্ত শক্তিধর। এর বাইরেও বিভিন্ন শক্তি কাজ করছে এখানে। সৌদিআরব ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থন পেয়ে সাহসী হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে ইসরায়েল যাদেরকে ইরান দেখে চরম শত্রু হিসেবে। তাদের মনে হচ্ছে তারা যে ইরানকে নিয়ন্ত্রণে আনার এই সৌদি প্রয়াসকে সহায়তা দিচ্ছে। ইসরায়েল তাদের সীমান্তের কাছে সিরিয়ায় ইরানপন্থী যোদ্ধাদের উপস্থিতি নিয়েও শংকিত।
সৌদিআরব এবং ইসরায়েল উভয়েই ২০১৫ সালে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করতে যে আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়েছিল তার ঘোর বিরোধী-কারণ তাদের মতে ইরানের পরমাণু বোমা বানানো ঠেকাতে এ চুক্তি যথেষ্ট নয়। মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি শিবিরে আছে প্রধানত সু্ন্নি দেশগুলো। সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, বাহরাইন , মিশর এবং জর্ডন।
ইরানের শিবিরে আছে সিরিয়ার সরকার, হেজবোল্লাহ সহ শিয়া মিলিশিয়া গ্রুপগুলো। শিয়া প্রধান ইরাকি সরকারও এখন ইরানের একজন ঘনিষ্ঠ মিত্র, যদিও তারা ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ওয়াশিংটনের সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা করছে। সৌদি-ইরান রেষারেষিকে অনেকটা স্নায়ুযুদ্ধের সাথে তুলনা করা যায়। তারা সরাসরি একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করলেও নানা জায়গায় প্রক্সি যুদ্ধ চালাচ্ছে। সিরিয়া এবং ইয়েমেন এর দুটি উদাহরণ। লেবাননেও এরকম একটা অবস্থা তৈরি হতে পারে, এবং তা হয়তো ইসরায়েলকে যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলতে পারে।
এমন একদল বিশ্লেষকও আছেন যারা বলেন, সৌদি যুবরাজের আসল পরিকল্পনা হয়তো এটাই-ইসরায়েল আর হেজবোল্লাহর মধ্যে একটা যুদ্ধ বাধানো। যাতে হেজবোল্লাহু বিরাট ক্ষতিসাধন করানো যায়!
সৌদিআরব আর ইরানের মধ্যে কি সরাসরি যুদ্ধ হবে?
সরাসরি যুদ্ধ এ দুটি দেশের কেউই চায় না। কিন্তু রিয়াদে একটি সফল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়তো এ ধারনাকে উল্টে দিতে পারে। সৌদিআরব আর ইরানের অবস্থান উপসাগর এলাকায় দুই তীরে। কিন্তু এখানে সরাসরি যুদ্ধ হবার সম্ভাবনা কম। কারণ তেল এবং অন্যান্য পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের এ পথটি মুক্ত রাখা যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য পশ্চিমা শক্তিগুলোর জন্য অত্যাবশ্যক। এখানে কোনো গোলমাল হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তার নৌ ও বিমানবাহিনী নামিয়ে দেবে।
বহুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা ইরানকে একটি অস্থিতিশীলতা তৈরির শক্তি হিসেবে দেখে আসছে। সৌদিআরব ইরানকে দেখে তার অস্তিত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে।
মনে হচ্ছে, সৌদি যুবরাজ তেহরানের প্রভাব খর্ব করতে যে কোন কিছু করতে তৈরি। কিন্তু এর ফলে যা হচ্ছে তা হলো মধ্যপ্রাচ্যে আরো বেশি উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: