বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
সৌদি রাজপরিবারে রাজনৈতিক ঝড় বইছে

সৌদি রাজপরিবারে রাজনৈতিক ঝড় বইছে

we170আমার সুরমা ডটকম ডেক্স : বাদশা সালমানের পর কে হবেন সৌদি সাম্রাজ্যের কর্ণধার তা নিয়েই বিভক্ত হয়ে পড়েছে রাজপরিবার। একদিকে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ ও অন্যদিকে তার সহকারী বর্তমান বাদশার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান। এছাড়াও রাজপরিবারের একটা অংশ দাবি করছে, তৃতীয় আরেকজন প্রিন্সকে পরবর্তী বাদশা বানানোর জন্য পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যের সমর্থন রয়েছে। দেশটির অভ্যন্তরীণ বিতর্ক বহির্বিশ্বের কাছে এতদিন গোপন থাকলেও এবারে অস্বাভাবিকভাবেই ব্যাপারটি উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ ও তার সহকারী মোহাম্মদ বিন সালমানের দ্বন্দ্ব আরব বিশ্বে মুখরোচক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজপরিবারের ভিন্নমতাবলম্বীদের পাঠানো খোলা চিঠি অনলাইনে হাজার হাজার পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

দ্বন্দ্বের সূত্রপাত গত সেপ্টেম্বরে: ৭৯ বছর বয়সী বাদশা সালমান ওয়াশিংটন সফরে তার ৩০ বছর বয়সী ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে সফরসঙ্গী করেন। মার্কিন কর্মকর্তারা এই তরুণ ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে দেখা করার জন্য উদগ্রীব ছিলেন। যদিও মার্কিন কর্তারা জানেন ‘এমবিএস’ নামে পরিচিত এই তরুণ প্রিন্স তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফকে ক্ষমতার লড়াইয়ে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম। বছরের পর বছর বয়স্ক ও রক্ষণাত্মক নেতৃত্বের বদলে এখন সৌদির দরকার তার মতো নেতা। বৈচিত্র্যময় অর্থনীতি, বর্ধিত প্রাইভেটকরণ এবং আরব আমিরাতের মতো খোলামেলা মডেলের দেশ হিসেবে সৌদিকে গড়ে তুলতে চান সালমান। আধুনিকীকরণের জন্য তিনি আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় কনসালটিং ফার্ম থেকে পরামর্শ নিবেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে দীর্ঘ সময়ব্যাপী আলোচনাকারী এক সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘তার লক্ষ্যের পরিধি, বিস্তৃতি ও গতি ব্যাপক চমকপ্রদ। তিনি দ্রুতই সৌদি আরবকে আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য শক্তিতে পরিণত করতে পারবেন।’ তবে সমালোচকরা বলছেন, মোহাম্মদ বিন সালমান আবেগপ্রবণ ও অনভিজ্ঞ। তারা আরো বলছেন, ইয়েমেন যুদ্ধের ফলে আল-কায়েদার অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়েছে এবং সৌদি সীমান্তে অভিবাসী ও বিদ্রোহীদের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। সৌদি রাজপরিবারে আলোচিত অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পেয়েছে গত মাসে। ওয়াশিংটন থেকে ফেরার পরের দিনই বাদশা সালমান তার ছেলের অনুরোধে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফের প্রধান উপদেষ্টা ও মন্ত্রী সাদ-আল জাবরিকে বরখাস্ত করেন। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। কারণ জাবরি পশ্চিমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী একজন অন্যতম ব্যক্তি। জাবরি ইয়েমেনে মোহাম্মদ বিন সালমানের রণকৌশল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং বলেন আল-কায়েদা সেখানে আরো শক্তিশালী হচ্ছে। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফের রাজকীয় দরবার বসানোর অধিকার খর্ব করা হয়েছে যা পূর্ববর্তী ক্রাউন প্রিন্সরা বসাতে পারতেন।

নিজের দরবার না থাকার কারণে দায়িত্বে তার সহকারী মোহাম্মদ বিন সালমানের দরবারে তাকে যেতে হয় এবং তার সিদ্ধান্ত মানতে হয়। এই ধারাবাহিক দ্বন্দ্বের ফলে পরিবারের ভিতরের বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, যার প্রমাণ বাদশা ও ক্রাউন প্রিন্সের অপসারণ চেয়ে ওই ৪টি খোলা চিঠি। গার্ডিয়ানের কায়রো প্রতিনিধি হিউ মাইলস বলেন, ‘আমি একজন জ্যেষ্ঠ প্রিন্সের সঙ্গে কয়েকবার ফোনে কথা বলেছি, যিনি কমপক্ষে ২টি চিঠি লিখেছেন।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রিন্স বলেন, সৌদি রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা বাদশা আব্দুল আজিজ ইবনে সৌদের পুত্র প্রিন্স আহমেদ বিন আব্দুল আজিজকে সৌদি সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার হিসেবে রাজপরিবারের ৮৫% সদস্য পছন্দ করেন। প্রিন্স আহমেদ বর্তমানে অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী হিসেবে কর্মরত থাকলেও তিনি গত জানুয়ারিতে প্রয়াত বাদশা আব্দুল্লাহর উত্তরাধিকারী তালিকায় কখনো ছিলেন না। ওই প্রিন্সের প্রথম চিঠিতে ‘বাদশা আব্দুল আজিজ ইবনে সৌদের পুত্রকে অবহেলা’ এবং ‘এই পরিবারের ক্ষমতার জন্য ভাঙ্গনের সুর’ শিরোনামে বিভিন্ন কীর্তিকলাপ তুলে ধরা হয়। পরের চিঠিতে বাদশা সালমানের ‘দুর্বলতা’ ও ‘তার পুত্রের ইচ্ছাধীন রাজকর্ম’ শীর্ষক বর্ণনা পাওয়া যায়। আরো দুটি চিঠি অন্য অজ্ঞাত সদস্যরা পাঠিয়েছেন বলে গার্ডিয়ান জানিয়েছে। ক্ষমতার এই লড়াই আরো কিছুদিন চলতে থাকবে। কারণ বাদশা সালমান টাকা নিয়ন্ত্রণ করেন, মোহাম্মদ বিন নায়েফ অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় চালান এবং মোহাম্মদ বিন সালমানের অধীনে গুরুত্বপূর্ণ তেল ও অর্থমন্ত্রণালয়। ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান সম্প্রতি এক ঘনিষ্ঠজনকে বলেন, তিনি ৫৫ বছর বয়সের আগে বাদশা হতে চান না। এটি মোহাম্মদ বিন নায়েফের বর্তমান বয়স নির্দেশ করলেও এরকম সম্ভবনা খুবই কম। কিভাবে সৌদি রাজপরিবারের এই রাজনৈতিক ঝড় থামবে? গত ৯ মাসের উত্তাল পরিস্থিতি দেখে বর্ষীয়ান সৌদি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রশ্নের উত্তর কেউ জানে না।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: