শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:৪৪ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
হযরত ইবরাহিম (আ.) চেতনায় উজ্জীবিত হয়েই কোরবানি করতে হবে

হযরত ইবরাহিম (আ.) চেতনায় উজ্জীবিত হয়েই কোরবানি করতে হবে

আমার সুরমা ডটকম:

হযরত ইব্রাহীম  আলাইহিস সালামের আদর্শ এবং চেতনায় উজ্জীবিত হয়েই আমাদেরকে কোরবানি করতে হবে। কোরবানির পশুর প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে আল্লাহপাক নেকী দান করবেন। ইবরাহিম (আ.) চেতনা হলো জীবনের সর্বস্তরে নির্ভেজাল তৌহিদ প্রতিষ্ঠা করা। গুনাহ বিবর্জিত জীবনযাপনের লক্ষে আমাদেরকে কোরবানির পবিত্র আমল করতে হবে। আজ পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ পূর্ব বয়ানে বিভিন্ন মসজিদের ইমামরা এসব কথা বলেন। কোরবানির পশুর রক্ত এবং অন্যান্য বর্জ্য দ্রুত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন ইমামরা। মসজিদে মসজিদে করোনাভাইরাস মহামারী থেকে মুক্তি এবং দেশ জাতি ও মুসলিম উম্মার শান্তি সমৃদ্ধি উন্নতি কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান আজ সকাল ৭ টায় ঈদুল আজহার নামাজ পূর্ব বয়ানে বলেন, কোরবানি হচ্ছে হযরত ইবরাহিম (আ.) এর আদর্শ। কোরবানির মৌলিক শিক্ষা নিয়েই জীবন গড়তে হবে। আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার জন্যই ইবরাহিম (আ.) তার প্রিয় সন্তান ইসমাইল (আ.) কে জবেহ করতে উদ্যত হয়েছিলেন। পেশ ইমাম বলেন, আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার লক্ষ্যেই কোরবানির বিধান বাস্তবায়ন করতে হবে। হিংসা বিদ্বেষ, পরনিন্দা, গীবত, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতিসহ সকল প্রকার অপরাধ পরিহার করে গুনাহমুক্ত জীবন গড়ে প্রমাণ করতে হবে আমরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা।
চকবাজার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতীব শাইখুল হাদীস মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী ঈদুল আজহার নামাজপূর্ব বক্তব্যে বলেছেন। হযরত আদম (আ.) এর দুই ছেলে হাবীল ও ক্বাবীলের দেয়া কোরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়া না হওয়ার যে পদ্ধতি তৎকালীন সময়ে প্রচলিত ছিল তা যদি এখনো চালু থাকতো তাহলে আমাদের কোরবানির ফলাফলটাও দুনিয়াবাসীর কাছে স্পষ্ট হয়ে যেতো। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অনুকম্পা প্রদর্শন করে উক্ত পন্থা বিলুপ্ত করে আমাদের ইজ্জত সম্মান রক্ষা করেছেন। তাই কোরবানি করার আগে আমাদের সবার বারংবার ভাবা উচিৎ যে আমাদের এই কোরবানি আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য হচ্ছে কি না? আল্লাহ যেন আমাদের সকলকে শুধুমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির জন্যই কোরবানি করার তাওফীক দান করেন। (আমীন) পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে কোরবানির পশুর গোশ্ত ও রক্ত কোনটাই আল্লাহর কাছে পৌঁছেনা। আল্লাহর কাছে পৌঁছে তোমাদের অন্তরের অবস্থা। তিনি আরো বলেন, হযরত ইবরাহিম (আ.) এর সন্তান কোরবানি করার পরীক্ষাটা নিশ্চয়ই আমাদের কোরবানির চেয়ে হাজারগুণ বেশি কঠিন ছিল। তারপরেও তিনি শতভাগ উত্তীর্ণ হয়েছেন। এক্ষেত্রে তুলনামূলক এত সহজ পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হতে না পারা মুমিনের জন্য বড় দুর্ভাগ্যের। ঢাকার ডেমরার ঐতিহ্যবাহী দারুননাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা জামে মসজিদে আজ ঈদ জামাত পূর্ব বয়ানে মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আ খ ম আবু বকর সিদ্দিক বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে কোরবানির রক্ত গোশত কিছু পৌঁছে না। বরং মানুষের তাকওয়া বা খোদাভীতি আল্লাহর কাছে পৌঁছে। কোরবানির সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো ত্যাগ ও আনুগত্যের শিক্ষা।
কোরবানির সাথে ইবরাহিম (আ.) বড় একটি স্মৃতি জড়িত রয়েছে। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত শিক্ষণীয় বিষয়। প্রিন্সিপাল আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ইসমাইল আলাইহিস সালাতু সালাম যখন ছোট ছিলেন আল্লাহর হুকুমে তার মাকে এবং তাকে মক্কায় রেখে এসেছিলেন। সন্তানের প্রতি প্রচন্ড মায়া থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর বিধানের প্রতি তিনি ও তার স্ত্রী আনুগত্য প্রকাশ করেছেন।
আবার যখন আল্লাহ তায়ালা ইসমাইল আলাইহিস সালাতু সালামকে জবেহ করার আদেশ করলেন, তখন তিনি তার সন্তান এবং তার স্ত্রী সবাই আল্লাহর নির্দেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন যে, সন্তান সন্ততি স্ত্রী সবকিছুর ঊর্ধ্বে আল্লাহর হুকুম। তিনি বলেন, আল্লাহর হুকুমের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রেখেই কোরবানির ওয়াজিব আদায় করতে হবে। আল্লাহপাক সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমীন।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী আরমানিটোলা জামে মসজিদে ঈদ জামাত পূর্ব বয়ানে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মুসা বিন ইযহার বলেন, কোরবানি আল্লাহর মহান নবী খলীলুল্লাহ হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এর সুন্নত। ইবরাহিম আলাইহিস সালামের আদর্শ এবং চেতনায় উজ্জীবিত হয়েই আমাদেরকে কোরবানি করতে হবে। ইবরাহিমের চেতনা হলো জীবনের সর্বস্তরে নির্ভেজাল তৌহিদ প্রতিষ্ঠা করা। চিন্তা চেতনা কথা এবং কাজে সর্বাবস্থায় আল্লাহর একত্ববাদ এর প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহর বড়ত্ব এবং একত্ববাদকে প্রতিষ্ঠার পথে পরিবার সমাজ রাষ্ট্রশক্তি যে কেউ অন্তরায় হলে তাকে উপেক্ষা করে চূড়ান্ত ও সর্বব্যাপী সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়াই হলো ইবরাহহিম আলাইহিস সালামের জীবনের শিক্ষা।
তিনি বলেন, সর্বপ্রকার লৌকিকতা মুক্ত হয়ে গুনাহ বিবর্জিত জীবনযাপনের লক্ষে আমাদেরকে কোরবানির মহান পবিত্র আমল করতে হবে। তিনি আরো বলেন, পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে ইসলাম মানুষের সকল চাহিদা পূরণ করে। মানবিক চাহিদা আনন্দ উদযাপনের জন্য ঈদের বিধান দিয়ে এ কথাটাই প্রমাণিত হয়। মুসলমানদের আনন্দ উদযাপনও অন্য যে কোন মতবাদ ও ধর্মের তুলনায় ভিন্ন হয়। মুসলমান তার আনন্দ বেদনায় সবার আগে আল্লাহকে স্মরণ করে। তাই দিনের প্রথমভাগে ঈদের সালাত আদায় করার মাধ্যমে মুমিনের আনন্দ আরম্ভ হয়। আনন্দ উদযাপন করতে গিয়ে শরীয়তের চেতনাবিরোধী কোন কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়া গর্হিত অপরাধ।
তিনি বয়ানে বৈশ্বিক করোনা মহামারী এবং সর্বগ্রাসী ব্যাপক বন্যার আঘাতে বিপর্যস্ত মানুষের সহায়তায় বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান। লাখ লাখ গৃহহীন ও সহায়-সম্বলহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানো ঈমান ও নৈতিকতার দাবি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কামরাঙ্গীরচর বড় মাদরাসা মসজিদের খতিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াযী ঈদ জামাতের পূর্ব বয়ানে বলেন, এখলাছ ও সঠিক নিয়তের মাধ্যমেই কোরবানি দিতে হবে। গোশত খাওয়া বা এলাকাবাসিকে দেখানোর জন্য কোরবানি নয়; একমাত্র আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে কোরবানির পশু জবাই করতে হবে। কোরবানির পশুর গোশতের ওপর গরিব মিসকিনের হক রয়েছে। খতিব বলেন, ইসলামে গরিব মিসকিরে হক নিশ্চিত করা হয়েছে। সেগুনবাগিচা মসজিদে নূর এর খতিব মাওলানা আব্দুল কাইয়ূম সুবহানী বলেন, কোরবানির পশুর প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে আল্লাহপাক নেকী দান করবেন। কোরবানির গোশত শরীয়তের বিধান মতে বণ্টন করতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: