শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৯ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩

আল্লামা আব্দুল মুমিন ইমামবাড়ী: আলোকিত জীবন ও কর্ম

amarsurma.com

ড. সৈয়দ রেজওয়ান আহমদ:

প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, খলিফায়ে মাদানী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি শায়খুল হাদীস আল্লামা আব্দুল মোমিন শায়খে ইমামবাড়ী আজ ৮ মার্চ’ ২০২০ খ্রি. মঙ্গলবার তিনির নিজ বাস ভবনে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজেউজন)। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম একজন শায়খুল হাদীস ও আধ্যাত্মিক রাহবর। তিনি ছিলেন এক বর্ণাঢ্য ও সমৃদ্ধ জীবনের অধিকারী। দাওয়াত- তাবলিগ, ওয়াজ-নসিহত, সমাজ সংস্কার, শিক্ষকতা, আধ্যাত্মিকতা ও রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে ছিল তাঁর সরব পদচারণা। তাঁর মৃত্যুতে এক বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে।

নাম মোঃ আব্দুল মুমিন। তবে বৃহত্তর সিলেট তথা সারা বাংলায় ‘ইমামবাড়ী হুযুর’ নামে সকলের নিকট পরিচিত। পিতা মরহুম মোঃ আব্দুস সাত্তার একজন খোদাভিরু ব্যক্তি ছিলেন। মাতার নাম গুলবাহার বেগম। মরহুম আব্দুল মুমিন রহ. ১৯৩১ খ্রি. হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার পুরানগাঁও গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মলাভ করেন।

শিক্ষাজীবন:

গ্রামের মসজিদ থেকে শিক্ষাজীবন শুরু। প্রাথমিক শিক্ষার্জন করেন শিবগঞ্জ প্রাইমারী স্কুলে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত। পরে ইলমে দ্বীন শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে তিনি তৎকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠিত ইমামবাড়ী জামেয়া ইসলামিয়া আরাবিয়ায় ছাফেলা আউয়ালে ভর্তি হয়ে নাহুমির পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে কিছুদিন বি-বাড়িয়া জামেয়া ইউনুসিয়া এবং রায়ধর মাদরাসায় অধ্যয়ন করে পূণরায় ইমামবাড়ি ফিরে এসে শরহে জামি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ট বিদ্যাপীঠ ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসায় ভর্তি হয়ে একাধারে প্রায় ছয় বছর লেখাপড়া করে ১৯৫৬ খ্রি. দারুল হাদীস পাশ করে শিক্ষা সমাপন করেন। হযরতের উস্তাদবৃন্দ মধ্যে অন্যতম হলেন শায়খুল ইসলাম সৈয়দ হুসাইন আহমদ মাদানী রহ., মাওলানা ইবরাহীম বালিয়াভী, ক্বারী মাওলানা মোঃ তৈয়্যব, মাওলানা সৈয়দ ফখরুল হাসান, মাওলানা মেরাজুল হক, মাওলানা সৈয়দ নাসির আহমদ, মাওলানা সৈয়দ মাহমুদুল হাসান খলীফায়ে থানভি, মাওলানা আখতার হাসান বুলন্দ শহরী, মাওলানা মাহমুদ হাসান বিহারী প্রমূখ।

কর্মজীবন:

দেশে প্রত্যাবর্তন করে তিনি ১৯৫৭ খ্রি. ইমামবাড়ি মাদরাসায় শিক্ষকতায় যোগদান করে ১৯৬৫ খ্রি. পর্যন্ত প্রায় আট বছর শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে হবিগঞ্জের বালিধারা মাদরাসায় এক বছর, উমেদনগর দারুল হাদীস মাদরাসায় দুই বছর এবং বিশ্বনাথ জামেয়া মাদানিয়া মাদরাসায় দুই বছর শায়খুল হাদীস ছিলেন। পরবর্তীতে জামেয়া মাদানিয়া নবীগঞ্জ-এর মুহতামীম হিসেবে চার বছর ছিলেন। পরবর্তীতে ইমামবাড়ী মাদরাসায় পূণরায় যোগদান করে তিনি ক্রমান্বয়ে শিক্ষাসচিব, মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস পদে ১৯৮৯ খ্রি. থেকে ২০১০ খ্রি. পর্যন্ত দায়িত্বরত ছিলেন। অতঃপর দক্ষিণকাছ হোসাইনিয়া মাদরাসা সিলেট-এর শায়খুল হাদীস হিসেবে কিছুদিন ছিলেন, এরপর জামিয়া দারুল কুরআন সিলেট-এর প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত (প্রায় আট বছর) প্রধান শায়খুল হাদীস ছিলেন। ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম মাওলানা মুফতি আব্দুল কাইয়ুম কালাঞ্জুরা, মুফতি হাফিজ মাওলানা তাজুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস লরছপুরী, মাওলানা শামছুল হুদা শ্রীমতপুরী, মাওলানা কারী মুতিউর রহমান, মুফতি মাওলানা আব্দুস সাত্তার, মাওলানা আব্দুর জলীল মুমেনশাহী, মুফতি মাওলানা আব্দুল আউয়াল ওয়াইসী, মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম জালালাবাদী, মাওলানা কাজী হারুন রশীদ, মাওলানা লুৎফুর রহমান নবীগ্জী, মুফতি মাওলানা তালিব উদ্দীন প্রমূখ।

আধ্যাত্মিকতাঃ

১৯৫৬ খ্রি. দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে তাকমীল ফিল হাদীস শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শেষ করে ইলমে ওহীর পাশাপাশি ইলমে তাসাউফের আলো প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে আওলাদে রাসুল সাইয়্যেদ হোসাইন আহমদ মাদানী রহ.-এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেন। এবং দীর্ঘ এক বছর স্বীয় পীরের খেদমতে তাযকিয়ায়ে ক্বলবের মেহনতের ফলে ১৯৫৭খ্রি. পবিত্র রমজান মাসের ২৯ তারিখে আসামের বাশকান্দিতে এতেকাফকালীন সময়ে খেলাফত লাভ করেন। তিনি নিজেকে সবসময় গোপন করে রাখতেন। খেলাফত প্রদানে ও তিনি কঠোর ছিলেন। মরহুমের খলিফাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মুফতি মাহবুব উল্লাহ, মরহুম মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা আব্দুল বছীর প্রমুখ।

রাজনীতি:

তিনি দ্বীনি শিক্ষা বিস্তার ও ইলমে তাসাউফের পথে জনসাধারণকে প্রশিক্ষিত তরার পাশাপাশি রাজনীতি ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ইসলামি রাজনৈতিক পরিমন্ডলে তিনি একজন উচুঁমানের রাজনীতিবীদ ছিলেন। তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম হবিগঞ্জ জেলার দীর্ঘদিনের সভাপতি ছিলেন। তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ২০০৫ খ্রি. থেকে সভাপতি ছিলেন।

পারিবারিক জীবন:

পারিবারিক জীবনে তিনি বানিয়াচং থানাধীন আমিরপুর গ্রামে আলহাজ্ব আসকির মিয়ার কন্যা মোছা. জায়দা খাতুনের সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ৬ ছেলে, ২ কন্যা সন্তানের জনক। তারা হলেন শহীদ মুফতি মাওলানা আব্দুল্লাহ, যিনি ঐতিহ্যবাহী জামেয়া ফারুকিয়্যার শিক্ষক ছিলেন। তিনি শিয়া বিরুধী আন্দোলনে করাচীতে শাহাদত বরণ করেন। মৌলভি উবায়দুল্লাহ, মৌলভি ওলীউল্লাহ, কারী মাওলানা ইমদাদুল্লাহ, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, হাফিজ মাওলানা জুবায়ের আহমদ, সাইয়িদা খাতুন ও হামিদা খাতুন। আল্লামা আব্দুল মুমিন রহ. ইসলামী শিক্ষাদান তথা দ্বীনের খেদমতে ছিলেন এক উজ্জল ব্যক্তিত্ব। আমল আখলাকে ছিলেন তিনি রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম এর আদর্শ নমূনা। তাঁর আধ্যাত্মিক সবক ও দ্বীনি শিক্ষা দানে অসংখ্য হৃদয়ে ইসলামের আলোকমালা প্রজ্জ্বলিত হয়েছে যা, ইসলামি রেনেসাঁর ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তথা দেশে-বিদেশে অসংখ্য আলেম ও সুনাগরিক সৃষ্টিতে তঁর রয়েছে অসামান্য ভূমিকা। বরেণ্য এ বুযুর্গ আলেমের মৃত্যুর সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়তেই দেশ বিদেশে আলেম-উলামা, ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও ছাত্র-শিক্ষকসহ হযরতের ভক্ত-মুরিদদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। আল্লাহ হযরত কে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন। আমীন।

লেখক: প্রিন্সিপাল, সৈয়দপুর সৈয়দিয়া শামছিয়া ফাযিল মাদরাসা

amarsurma.com

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: