শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০৩ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
আশানুরুপ ফসল উঠছেনা কৃষকের গোলায় সুনাগঞ্জের হাওরে শ্রমিক সংকটে বোরো ধান কাটা ব্যাহত

আশানুরুপ ফসল উঠছেনা কৃষকের গোলায় সুনাগঞ্জের হাওরে শ্রমিক সংকটে বোরো ধান কাটা ব্যাহত

amarsurma.com

স্টাফ রিপোর্টার সুনামগঞ্জ:
সুনামগঞ্জের হাওরে কৃষি শ্রমিক সংকটের কারনে বোরো ধান কাটা ব্যাহত হচ্ছে। চাহিদার পরিমান শ্রমিক না থাকায় আশানুরুপ ফসল উঠচেনা কৃষকের গোলায। এ কারণে ফসল কাটার আনন্দ ক্রমেই ম্লান হয়ে পড়ছে কৃষকদের। প্রতি বছরের তুলনায় চলতি বোরো মৌসুমে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বেশ কয়েকটি জেলা থেকে এবার ধান কাটার শ্রমিক দল কম এসেছেন। গৃহস্থরা দলীয় শ্রমিকদের কয়েক ভাগে ভাগ করে ধান কাটাচ্ছেন। এতে প্রতি দিন গড়ে যে পরিমান ধান ফসলী জমি থেকে মাড়াই খলায় উঠে আসার কথা, তার চেয়েও অনেক কম পরিমান ধান উঠে আসছে। আর এতে চিন্তিত হয়ে পড়ছেন কৃষকরা। চৈত্রের প্রচ- তাপদাহে কিছু জমিতে চিটা, কাল বোশেখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে উঠতি বোরো ফসল আংশিক ক্ষতি হলেও মাঠ ভরা পাকা ধান নিয়ে এখন চরম শংসয়ে রয়েছেন কৃষকরা। বহু কৃষক পাকা ধান কাটাতে শ্রমিকের খোঁজে দ্বিগবিদ্বিগ ছুটছে বেড়াচ্ছেন। সময়মতো ফসল ঘরে তোলার অতঙ্ক যেন পিছু ছাড়ছেনা তাদের।
হাওর এলাকা ঘুরে কৃষক ও গৃহস্থদের সাথে আলাপকালে এই প্রতিবেদক কে তারা জানান, চৈত্রের খড়ায় আংশিক ধানে চিটা হওয়ায়, গড়ে চার আনা ফসল নষ্ট হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার ফলন মোটামুটি ভালো হলেও ধান কাটার শ্রমিক খুব কম এসেছেন। এক-এক জন গৃহস্থের কম পক্ষে ২০-৩০ জন ধান কাটার শ্রমিক প্রয়োজন। সেখানে অনেকই এবার শ্রমিক না পাওয়ার কারনে একজন গৃহস্থের শ্রমিক কে ভাগ করে কয়েক জন গৃহস্থ ধান কাটাচ্ছেন। আবার এলাকার আংশিক শ্রমিক ৫-৬ শত টাকা রোজ হারে যে পরিমান ধান কাটেন, এতে কৃষকদের ধান কাটা ও রোজের পারিশ্রমিক গড়-পরতায় পোষায়না। তাই প্রতি দিন আশানুরুপ ফসল ঘরে উঠছেনা। আবার অনেকেই শ্রমিক না পেয়ে নিজেরাই কিছু ধান কাটছেন এত লাভের চেয়ে লোকশানের পরিমান বেশী হচ্ছে। ধান কাটতে যাওযা এলাকার কৃষি শ্রমিক হারুন মিয়া বলেন, আমরা তো সারা বছর কাম (কাজ) করতে পাড়িনা বৈশাখ মাসে যে রোজি করি বউ-বাচ্চা নিয়া খাই, এই সময় ৫-৬ টাকা রোজ পড়ে।

ময়মনসিংহ থেকে আসা ধান কাটার শ্রমিক সর্দার ঠান্ডু মিয়া (ঠান্ডু বেপারী) জানান, তার নেতৃত্বে প্রতিবছরই ৩০-৩২ জনের একটি দল জামালগঞ্জের পাকনা হাওরে আসেন একজন (কৃষক) মহাজনের ধানী জমি কাটতে। কিন্তু এবার তিনি কয়েক জন কৃষকের ধান কাটছেন উপদলে বিভক্ত হয়ে। এতে তাদের কোন রকম কমতি না হলেও কৃষকদের (গৃহস্থ) কৃষি জমি থেকে সময়মতো ফসল উঠছে না। বিলম্বে ধান কাটলে বেশী পাকা ধান জমিতেই ঝড়ে পড়ে, এতে ক্ষতি শুধুই কৃষকদের। ফসল তোলার কজে ব্যস্ত গজারিয়া গ্রামের কৃষাণী নুরুন্নেছা বিবি বলেন, বৈশাখ মাসে সারা দিন খামকাজ করলেও কষ্ট লাগেনা। বেপারীসহ (ধান কাটার শ্রমিক) কত জনের রান্দা (রান্না) করি, ধান হুকাই (শুকাই), ধান ( চিটা ও চোঁছা ছাড়ানো ) উড়াই, কত খামকাজ করি কোন খামই শরীলে লাগেনা। কৃষক-কৃষাণীদের সাথে কাজে সহযোগী করছে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীরা। লক্ষ্মীপুর তাওয়া কুলিয়া দাখিল মাদ্রাসার ছাত্রী তাওহিদা আক্তার জানায়, সকালে বাবা-ভাই ও কাজের লোকদের ভাত খাইয়ে সে মাদ্রাসায় যায়। দুপুরে আবার হাওরে ভাত দিতে সে মাদ্রাসা থেকে চলে আসে। হঠামারা গ্রামের হতদরিদ্র শাহেদ আলীর পুত্র স্কুলছাত্র আফজল মিয়া ধান কাটার এক মাসে ১০-১২ মন ধানে বেতনে গৃহস্তের বাড়ীতে কাজ করছে। একই গ্রামের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র সোলেমান মিয়া জানায়, প্রতিদিন তার বাবার সাথে হাওরে কাজ করে। হাওর পাড়ের স্কুল গুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি এখন কমেছে বলে জানান স্কুল শিক্ষকরা। বৈশাখে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের মতোই আসা-যাওয়া করে, তাদের কে আটকানো যায়না। আটকানোর চেষ্টা করলে স্কুলে আসবেনা এ সব শিক্ষার্থী। ফসল তোলার এই মাসে তারাও বাড়ীতে সংসারিক কাজে সহযোগতিা করে।
এদিকে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন হাওরের ধান কাটার শ্রমিক সংকট নিরসনের জন্য জেলার ফাজিলপুর, যাদুকাটা নদীসহ বিভিন্ন বালু-পাথর কোয়ারি গুলোতে ফসল কাটা পর্যন্ত বালু-পাথরের কাজ আপাদত বন্ধ ঘোনা করে ধান কেটে ঘরে তোলার আহবান জানিয়েছেন। যে সকল শ্রমিকগন কোয়ারিতে কাজ করেন তাদের শুধু মাত্র বোরো ধান কাটার সময়ে ধান কাটার জন্য আসলে শ্রমিক সংকট কিচুটা হলেও কমবে। কারন এখন যারা ঐসব স্থানে কাজ করছেন, তারাই হাওরের বোরোর ধান কাটার সময় ধান কাটার শ্রমিক হিসাবেই কাজ করেন। এছাড়াও ৭-৮ বছর পূর্বে যুগ-যুগ ধরে ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ, বাজিতপুর, ময়মনংসিহ, সহ দেশের বিভিন্ন জেলার লোকজন দল বেঁধে আসত সুনামগঞ্জের হাওরে ধান কাটতে। এখন আর আগের মতো তারা না আাসার কারণে শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ বশির আহমদ সরকার জানান, সুনামগঞ্জের ২ লাখ ২৪ হাজার ৭১৯ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৯২ মেট্রিক টন ধান। টাকার অংকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। বোরো ফসলের ফলন ভালো হয়েছে। প্রায় ২৫ ভাগ জমির ধান পেকে গেছে। কিছু দিনের মধ্যে বাকি জমির ধানও পেকে যাবে। ধান পাকা শুরু করলেও শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে পারছেন না কৃষকরা। বাড়তি লোকবল নিয়োগ করে পাকা ধান দ্রুত কেটে ফেলতে কৃষকদের আহ্বান জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: