শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩

কিংবদন্তী ম্যারাডোনার চিরবিদায়

amarsurma.com

আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:

ফুটবল যাদুকরের চিরবিদায়। আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তী ডিয়েগো ম্যারাডোনা আর নেই। গতকাল হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনাকে প্রায় একাই বিশ্বকাপ জেতানো এই কিংবদন্তি। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম খবরটি নিশ্চিত করেছে। দেশটির ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ম্যারাডোনার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি টুইটে লিখেছে, ‘আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ও সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া আমাদের কিংবদন্তি ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছেন। আপনি সব সময় আমাদের হৃদয়ে থাকবেন।’
এর আগে বেশ কয়েক দিন অসুস্থ ছিলেন তিনি। তিগ্রেতে নিজ বাসায় মারা যান ম্যারাডোনা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। গত মাসে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছিলেন ম্যারাডোনা। বুয়েনস এইরেসের হাসপাতালে তার মস্তিষ্কে জরুরি অস্ত্রোপচার করা হয়। মস্তিষ্কে জমাট বেঁধে থাকা রক্ত অপসারণ করা হয়েছিল। তখন মাদকাসক্তি নিয়ে ভীষণ সমস্যায় ভুগেছেন ম্যারাডোনা। তাকে পুনর্বাসনের জন্য নেওয়া হয়েছিল তিগ্রের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে।
আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘টিওয়াইসি স্পোর্টস’ জানিয়েছে, গতকাল স্থানীয় সময় বিকেলে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন এই কিংবদন্তী। এই অসুস্থতা থেকে আর বেঁচে ফিরতে পারেননি তিনি। এ ছাড়া সংবাদমাধ্যম ‘ক্লারিন’ও নিশ্চিত করেছে ম্যারাডোনার মৃত্যুর খবর।
গত মাসে ম্যারাডোনার মস্তিস্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। তখন তার আইনজীবি জানিয়েছিলেন, মদে আসক্তির চিকিৎসা করাতে হবে তার। এরপর চিকিৎসা চললেও সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন কিংবদন্তি এ ফুটবলার। মৃত্যুর আগে তিনি আর্জেন্টিনার ক্লাব জিমনাসিয়ার কোচ ছিলেন।
বুয়েন্স এইরেসের লানুস শহরে ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর জন্ম দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনার। চিতরো দিয়েগো ম্যারাডোনা ও দোনা তোতা দালমা সালভাদর ফ্রাঙ্কোর তিন কন্যা সন্তানের পর তিনি আসেন ঘর আলো করে। এই দরিদ্র পরিবারের সন্তানের হাত ধরেই বিশ্বকাপ ফুটবল জিতেছিল আর্জেন্টিনা।
ম্যারাডোনার শুরুটা বলবয় হিসেবে। কাজটা ভালো লাগতো সেই সঙ্গে কিছু উপার্জনও হতো। টাকার জন্যই একসময় হয়ে গেলেন পেশাদার ফুটবলার। ১৯৬৮ সালে এসত্রেয়া রোজার হয়ে শুরু। এরপর সিনিয়র দলে ম্যারাডোনার যাত্রা শুরু আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স হয়ে। ১৯৭৭ সালে সুযোগ পান জাতীয় দলে। ২৭ ফেব্রæয়ারি ১৬ বছর বয়সে হাঙ্গেরির বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ। ১৯৭৯ সালে আর্জেন্টিনার হয়ে ১৮ বছর বয়সে ফিফা অন‚র্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে অংশ নেন। ফাইনালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় আর্জেন্টিনা। আসরে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে নজর কাড়েন ম্যারাডোনা।
১৯৮২ সালে ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নামেন ম্যারাডোনা। তবে, আলো ছড়াতে পারেননি। ব্রাজিলের সঙ্গে লাল কার্ড দেখে দ্বিতীয় পর্ব থেকেই বিদায় নেন।
চার বছর পর আবার বিশ্বকাপের মঞ্চে এসে দুর্দান্ত খেলতে থাকে আর্জেন্টিনা। সেই মেক্সিকো বিশ্বকাপে গ্রæপ পর্ব থেকেই ভালো করছিল আলবিসেলেস্তেরা। কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। দু’দেশের মধ্যে ফকল্যান্ড যুদ্ধের কারণে খেলায় ছড়িয়ে পড়ে বাড়তি উত্তেজনা। ম্যাচের ৫১ মিনিটে শূন্যে লাফিয়ে উঠে হাত দিয়ে গোল করেন ম্যারাডোনা। হেডের ছলে তার হাতের টোকায় করা গোল এতটাই নিখুঁত ছিল যে রেফারি আলী বিন নাসের টেরই পাননি। ইতিহাসে সে গোলেরই নাম দেয়া হয়েছে ‘হ্যান্ড অব গড’। ম্যাচে এরপর আরো একটি গোল করেন ম্যারাডোনা। যা ইতিহাসের গোল অব দ্য সেঞ্চুরি হিসেবে খ্যাত।
সেমিফাইনাল ফাইনাল সব জায়গাতেই ম্যারাডোনা ছিলেন অনন্য। ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির ফুটবলাররা তাকে শুরু থেকেই কড়া নজরদারিতে রাখে। এর মধ্যেও তার পাসে জয়স‚চক গোল করেন বুরুচাগা। ৩-২ গোলের জয়ে বিশ্বকাপ জিতে নেয় আর্জেন্টিনা। আসরে আর্জেন্টিনার ১৪টি গোলের ১০টিই অবদান ছিল ম্যারাডোনার। আসরে গোল্ডেন বলও জিতে নেন তিনি। এর আগে অন‚র্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপেও গোল্ডেন বল জিতেছিলেন ম্যারাডোনা।
১৯৯০ বিশ্বকাপে আবারো সুযোগ এসেছিল। কিন্তু ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির বাধা অতিক্রম করতে পারেনি আলবিসেলেস্তেরা। রানার্সআপ হয়েই শেষ হয় ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ যাত্রা। ১৯৯৪ বিশ্বকাপ। নিষিদ্ধ মাদক এফিড্রিন নেয়ার দায়ে বিশ্বকাপ থেকে ম্যারাডোনাকে বহিষ্কার করে ফিফা। দ্বিতীয় পর্ব থেকে বিদায় নেয় আর্জেন্টিনা। এ বিশ্বকাপের পর ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন ম্যারাডোনা। পুরো ক্যারিয়ারে তিনি ৯১টি ম্যাচে ৩৪টি গোল করেন।
ক্লাব ক্যারিয়ারে খেলেছেন বোকা জুনিয়র্স, বার্সেলোনা, নাপোলি, সেভিয়া, নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে। ম্যারাডোনা বিশ্ব একমাত্র ফুটবলার যিনি দলবদলে রেকর্ড গড়েন। একবার বার্সেলোনায় যাওয়ার সময় আরেকবার নাপোলিতে গিয়ে। কোচিং ক্যারিয়ারে আর্জেন্টিনা জাতীয় দল ছাড়াও তিনি দুবাইয়ের ক্লাব আল ওয়াসলের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। সর্বশেষ দ্য জিমনাসিয়া ক্লাবের কোচ ছিলেন।
১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে শিরোপা জেতানো ছাড়াও ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলির হয়ে স্মরণীয় মৌসুম উপহার দিয়েছেন ম্যারাডোনা। নাপোলিকে দু’বার সিরি ‘আ’ ও উয়েফা কাপ জিতিয়েছেন ম্যারাডোনা। তবে ম্যারাডোনা অমর হয়ে আছেন আর্জেন্টিনার জার্সিতে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে তার নেতৃত্বে দ্বিতীয় বিশ্বকাপের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। সেই বিশ্বকাপের পরই প্রতিষ্ঠিত হয়ে ম্যারাডোনার অমরত্ব-ফুটবল মাঠে পা রাখা সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের একজন।
তবে ম্যারাডোনাকে বিশ্ব মনে রাখবে তার অসম্ভব সুন্দর ফুটবল কারুকার্যের জন্য। মাঠের সবুজ গালিচায় তার পায়ের তুলিতে আঁকা অসংখ্য মুহূর্ত ফুটবলপ্রেমীদের স্মৃতির পাতায় সাজানো থাকবে চিরকাল।

amarsurma.com

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: