শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:০৮ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
খাদিজার বাবার কান্নায় অশ্রুসিক্ত হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরা

খাদিজার বাবার কান্নায় অশ্রুসিক্ত হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরা

q2-5আমার সুরমা ডটকমহাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট-আইসিইউ) জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে শুয়ে আছে মেয়ে। দূরপ্রবাস থেকে ছুটে এসে আদরের মেয়ের শয্যাপাশে দাঁড়িয়ে অসহায় বাবা। জলভরা চোখে বাবার আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে শীতল কক্ষটি। বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটের কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে দেখতে এসেছেন তার সৌদী প্রবাসী বাবা মাসুক মিয়া। রাতে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তিনি সৌদিআরব থেকে দেশে আসেন। ভোরে পৌঁছান স্কয়ার হাসপাতালে, যেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের সাদা বিছানায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে একমাত্র আত্মজা।

হাসপাতালে পৌঁছেই মাসুক মিয়া মেয়েকে দেখতে ছুটে যান ছয় তলায় আইসিইউতে। মেয়েকে দেখে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি। মাথা ও শরীরে সাদা ব্যাণ্ডেজ বাঁধা মেয়ের এই নিথর দশা কেমন করে সইবেন বাবা। অঝর কাঁদতে থাকেন। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন দায়িত্বরত চিকিৎসক আর নার্সরা। কিন্তু তারা সামাল দেবেন কি, তাদের চোখেও যে জল ছাপিয়ে আসে বাবার হাহাকারে। এ সময় মাসুক মিয়ার সঙ্গে ছিলেন খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুস ও মামা আব্দুল বাছিদ। হাসপাতালের আইসিইউর সামনে আব্দুল কুদ্দুসের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

বাবা মাসুক মিয়া ভোরে আসেন হাসপাতালে। মেয়ের শয্যপাশে প্রায় ২০ মিনিট অবস্থান করেন তিনি। পুরোটা সময় তিনি কেঁদেছেন মেয়ের কষ্ট দেখে। কাঁদতে কাঁদতে বারবার আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেছেন, ‘কী হবে আমার মেয়ের! আল্লাহ আমার মেয়েকে সুস্থ করে দাও…।” দীর্ঘ বিমানযাত্রার ক্লান্তি আর মেয়ের জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় বিধ্বস্ত মাসুক মিয়াকে এরপর নিয়ে যাওয়া হয় ‘রেস্ট রুমে’। খাদিজার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে চাচা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “অবস্থা এখনো অপরিবর্তিত। চিকিৎসকরা বলেছেন আরও দুই দিন পর পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে পারবেন তারা।” তবে খাদিজার মামা আব্দুল বাছিদ বলেন, “খাদিজার অবস্থা উন্নতির দিকে। চিকিৎসকরা বলেছেন আগের চেয়ে কিছুটা উন্নত।”

wqসিলেটের জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সি এম তোফায়েল সামি খাদিজাকে দেখে এসে সাংবাদিকদের বলেন, “খাদিজার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, খাদিজার  অবস্থা ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।”

এদিকে চীনে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অধ্যয়নরত খাদিজার ভাই শাহীন আহমেদও দেশে এসে পৌঁছেছেন। তিনি এখন আছেন একমাত্র বোনের পাশে। প্রেমের ডাকে সাড়া না দেয়ায় গত সোমবার এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ফেলে খাদিজাকে চাপাতি দিয়ে কোপান সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক বদরুল আলম। সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা সেদিন এমসি কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। খাদিজার ওপর হামলার ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশ হয়েছে ওই দিনই।

এই ঘটনার পর বদরুলকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দেয় স্থানীয় লোকজন। খাদিজার চাচার মামলায় বদরুলকে সিলেটের একটি আদালতে তোলার পর বুধবার তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বদরুল বলেছেন, তাকে পাত্তা না দেয়ায় খাদিজাকে কুপিয়েছেন তিনি। সারা দেশে আলোড়ন তোলা এ ঘটনার দ্রুত বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে পার পাবে না বদরুল। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বদরুলের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়ে বলেছেন, এ বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ হাতেই আছে। দ্রুতই চার্জশিট দিয়ে বিচার শুরু করার আহ্বান জানান তিনি। সূত্রঢাকাটাইমস

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: