শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১৩ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
‘জনগণই দিলেন বেকসুর খালাসের রায়’

‘জনগণই দিলেন বেকসুর খালাসের রায়’

gauspic_110672আমার সুরমা ডটকম : কোন জোরজবরদস্তি নয়। পেলেন জনতার স্বত:স্ফুর্ত রায়। কারাপ্রকোষ্ঠে থাকা সত্ত্বেও জনতার রায়েই বিজয় ছিনিয়ে নিলেন তিনি। জনতার স্বত:স্ফুর্ত রায়েই কারার অন্ধকার আলো হয়ে দেখা দিলো তার সামনে। সারাদেশের মধ্যে একমাত্র তিনিই মেয়র পদে লড়েছেন কারাগার থেকে। বিজয়ের মালা পড়েছে তার গলায়। পৌরসভা নির্বাচনে যখন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কেবল পরাজয়ের বার্তা আসছিল, তখন হবিগঞ্জে উল্লাসে ফেটে পড়েছিল বিএনপির নেতাকর্মীসহ স্থানীয় জনতা। জিতে গেছেন গোলাম কিবরিয়া গউছ। তবে আদালতে তার মামলা বিচারাধীন। দোষী না নির্দোষ-আদালতই দেবে সে রায়। তবে তার আগে জনতার রায়ে তিনি যেন ‘বেকসুর খালাস’। হবিগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দারা জানিয়ে দিলেন তারা আবারও জিকে (গোলাম কিবরিয়া) গউছকেই তাদের অভিভাবক হিসেবে চান।

১৩৪ বছর বয়সী হবিগঞ্জ পৌরসভার শীর্ষ পদে বৃটিশ প্রতিনিধি থেকে শুরু করে কতজনই তো বসেছেন। জিকে গউছও ছিলেন সে চেয়ারে। তবে এবার যেমন করে তিনি এ চেয়ারটিতে বসার অধিকার পেলেন তেমন করে কেউ কি আর এসেছিলেন এ চেয়ারের কাছে? ব্যালট পেপারে সিল নয় যেন হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার ১০ হাজার ৭শ’ ৯৭টি নীলপদ্ম দিয়ে মালা সাজিয়ে পৌরবাসী তা পরিয়ে দিয়েছেন জিকে গউছের গলায়। নির্বাচনের প্রচারণা শুরুর পর থেকেই টের পাওয়া যাচ্ছিল  জিকে গউছই হয়তো আবার নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন হবিগঞ্জের মেয়র হিসেবে।

মাথায় ঝুলছে তার একটি আলোচিত হত্যা মামলা। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় অভিযুক্ত তিনি। প্রথম দিকে চার্জশিটে তার অন্তর্ভুক্তি না থাকলেও ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর দাখিল করা তৃতীয় সম্পূরক চার্জশিটে তিনিও যুক্ত হন অভিযুক্তের তালিকায়। পরে ঐ বছরের ২৮ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে জেলে পাঠান। এরপর সাময়িকভাবে হারাতে হয় মেয়র পদও। এরই মাঝে শেষ হয় পৌরসভার মেয়াদ। আবার নির্বাচন আসে। জনতার ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস রেখে জেল থেকেই সে নির্বাচনে প্রার্থী হন জিকে গউস।

৯.০৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত হবিগঞ্জ পৌর এলাকাজুড়ে নির্বাচনী উত্তাপ। প্রার্থী-সমর্থকদের মাঠজুড়ে ছুটোছুটি। কিন্তু নির্বাচনী মাঠের সে দৌড়ঝাঁপে কোথাও তিনি ছিলেন না। কারও কাছে ভোট চাইতে পারেননি, কারও সঙ্গে বুক মেলাতে পারেননি । কিন্তু যেন ছিলেন সবখানেই। চায়ের দোকানে-আড্ডায়-ঘরোয়া বৈঠকে তিনি ছিলেন মুখে মুখে। কারাগারে বন্দি থাকায় তার প্রতি মানুষের বাড়তি সহানুভূতি ছিল। নির্বাচনী মাঠে তার না থাকাটাই যেন সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে উঠে জিকে গউসের জন্য। সে শক্তিতেই পার হয়ে গেলেন নির্বাচনী বৈতরণী।

নির্বাচনী বৈতরণী পার হলেও জি কে গউছ কি নিতে পারবেন হবিগঞ্জ পৌরবাসীর অভিভাবকত্বের ভার- সে আশঙ্কা অনেকেরই মনে। কারণ তার ওপর থাকা মামলাটির মীমাংসা হয়নি এখনও। যে মামলার কারণে তিনি মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই বরখাস্ত হয়েছিলেন। আবারও কি বরখাস্ত হবেন? সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ই ইউ শহীদুল ইসলাম শাহীনও ধারণা করছেন, হয়তো আবার সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হবে জিকে গউসকে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, যদি তাকে বরখাস্তই করা হবে তবে তাকে কেন নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়। আইনের এ ধারাগুলোকে তিনি স্ববিরোধী বলেই মনে করেন। তিনি বলেন, কেউ যদি জনপ্রতিনিধিত্ব করার যোগ্য না হন, তবে তার ভোটে দাঁড়ানোর যোগ্যতা থাকাও উচিত নয়। আর যদি ভোটে দাঁড়ানোর যোগ্য হন তবে তার ক্ষমতা কেড়ে নেয়াও যৌক্তিক নয়। আমলা কর্তৃক একজন জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করার বিষয়টিকেও একজন জনপ্রতিনিধির জন্য অমর্যাদাকর বলে অভিমত ব্যক্ত করেন অ্যাডভোকেট ই ইউ শহীদুল ইসলাম শাহীন।

২০০৪ সাল থেকেই প্রায় ১ লাখ মানুষের আবাস হবিগঞ্জ পৌর এলাকা দেখভালের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন জি কে গউছ। খুব ছোট থাকতে তার দাদা মনসাদ মিয়াকে দেখেছিলেন গোপায়া ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব সামলাতে। এ ছাড়া তার ঘরেও আছে জনপ্রতিনিধির রক্তের উত্তরাধিকার। জি কে গউছের স্ত্রী ফারহানা গউছ হ্যাপীর বাবা অ্যাডভোকেট আতিকুল্লাহ ছিলেন হবিগঞ্জের সংসদ সদস্য।

সিলেট জেলা কারাগারে ডিভিশনে থাকা জি কে গউছের শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। মেরুদণ্ডে ব্যথার কারণে সপ্তাহে তাকে তিন দিন হাসপাতালে যেতে হয়, থেরাপি নিতে হয়। মেরুদণ্ডের এ ব্যথাটি তার সঙ্গী হয়েছে জেল জীবনেই। হবিগঞ্জ কারাগারে থাকার সময় গত বছরের ১৮ জুলাই এক কয়েদির ছুরির আঘাতে মারাত্মক আহত হন তিনি। কিন্তু নির্বাচনে জয়লাভের সংবাদে সব ব্যথা ভুলে আবারও তিনি আশাবাদী হয়ে উঠেছেন বলে জানিয়েছেন তার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া শুভানুধ্যায়ীরা। তাদের কাছেই পরদিন তিনি জেনেছিলেন নিজের বিজয় বার্তা।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: