শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
জয়া সেনগুপ্তার বিরুদ্ধে একাট্টা ৬ মনোনয়ন প্রত্যাশী

জয়া সেনগুপ্তার বিরুদ্ধে একাট্টা ৬ মনোনয়ন প্রত্যাশী

amarsurma.com

আমার সুরমা ডটকম:

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন মেরকরণ স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। বর্তমান সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত পতœী ড. জয়া সেনগুপ্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছয় নেতা একাট্টা হয়ে তার বিরুদ্ধে সভা করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তার মনোনয়নের বিরোধিতা করেছেন। নির্বাচন পূর্ব এই সভা ও মনোনয়ন বিরোধিতা তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। শনিবার দিরাইয়ে যৌথসভা করে সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) সংসদীয় আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন দলীয় ৬জন মনোনয়ন প্রত্যাশী। যারা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় চালিয়ে ইতোমধ্যে তৃণমূলে পরিচিতি পেয়েছেন। সভায় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছয় নেতাসহ বর্তমান জেলা কমিটির পদবীধারী ও কার্যকরী কমিটির দিরাই-শাল্লার একাধিক সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। শনিবার বেলা ১টায় দিরাইয়ে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর হল রুমে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া শীঘ্রই এ বিষয়ে ছয় মনোনয়ন প্রত্যাশী মহাসমাবেশের ডাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ও দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলতাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী শাল্লা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ- সভাপতি অ্যাডভোকেট অবনী মোহন দাস, এমসি কলেজের সাবেক ভিপি আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল হোসাইন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও এপিপি অ্যাডভোকেট সামছুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার অনুকূল তালুকদার ডাল্টন, যুক্তরাজ্য শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সামছুল হক চৌধুরী। এই ছয়জন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর পর থেকেই মনোনয়নের জন্য লবিং করার পাশাপাশি তৃণমূলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাদের মধ্যে এডভোকেট শামছুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন তৃণমূলে বেশ সাড়াও ফেলেছেন।
ছয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুর আলম চৌধুরী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর চৌধুরী, উপ প্রচার সম্পাদক হুমায়ুন রশিদ লাভলু, জেলা পরিষদ সদস্য আবু আবদুল্লাহ চৌধুরী মাসুদসহ দিরাই-শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদবীধারী নেতাকর্মীরা।
মতবিনিময় সভায় ক্ষুব্ধ নেতাকর্মী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বলেন, প্রয়াত জননেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ৩৬ বছরের রাজনৈতিক অর্জনকে উনার স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তা ১৮ মাসেই শেষ করে দিয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট অবনী মোহন দাস বলেন, জয়া সেনগুপ্তা কোন রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন না, উনার কোন রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও নেই। নিজে কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। শাল্লায় ৬ জন ও দিরাইয়ে ৬ জনসহ এক ডজন লোক ছাড়া উনি কাউকে চিনেন না। তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই। কোন নেতাকর্মীকে চিনারও প্রয়োজন মনে করেন না তিনি।
তিনি আরো বলেন, এই অনভিজ্ঞ নেত্রীর কারণে কতিপয় নেতা রাতারাতি কোটিপতি হয়েছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন দিরাই-শাল্লার সাধারণ মানুষের কাছে এসে পৌঁছায়না। তাই এভাবে আর চলতে পারে না। জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে সার্বিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
আশির দশকের তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা ও সিলেট এমসি কলেজের সাবেক ভিপি ও মনোনয়ন প্রত্যাশী ইকবাল আহমদ বলেন, দিরাই-শাল্লার মানুষ পরিবর্তন চায়। আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র রক্ষা করতে হলে পরিবর্তনের বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগকে দুর্বৃত্তায়ন থেকে মুক্ত করতে হবে। বর্তমানে কিছু ব্যক্তি জনপ্রতিনিধির উদাসীনতায় আখের গোছাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সিলেট ল’ কলেজের সাবেক ভিপি ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট সামছুল ইসলাম বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন। এখানকার কিছু লোকের স্বৈরচারী মনোভাব আর অনিয়ম দুর্নীতির কারণে সাধারণ নেতাকর্মীরা অতিষ্ঠ হয়েই এমন দাবি তুলছেন। দু-চারজন লোক ছাড়া এখানে কারোই কোন মূল্যায়ন নেই, আমরা সবাই আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। অথচ এখানে আমাদের সাধারণ কর্মীর মূল্য নেই। ক্ষমতার মোহে কোন কর্মীকে চিনেন না তিনি।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ব্যারিস্টার অনুকূল তালুকদার ডাল্টন বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ চাই। আওয়ামী লীগে বৃহৎ ঐক্যের মাধ্যমে নৌকার জয় চাই। আমি নেতৃবৃন্দকে বলে আজকের এই আয়োজন করিয়েছি। আমাদের মধ্য থেকে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করা হবে।
জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুর আলম চৌধুরী বলেন, নির্বাচন আসন্ন, দলীয় ঐক্য ছাড়া সব ভেস্তে যাবে। ড. জয়া সেনকেই এ উদ্যোগ নিতে হবে। যদি উনি উদ্যোগ না নেন তা হলে বুঝতে হবে তিনি দলীয় ঐক্য চান না।
জেলা পরিষদ সদস্য আবু আবদুল্লাহ চৌধুরী মাসুদ বলেন, এমপি জয়া সেনগুপ্তার চারপাশে থেকে কতিপয় নেতারা লুটপাট করছেন। লুটপাটকারীদের সাথে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের ঐক্য হতে পারে না। তিনি লুটপাটকারীদের বাদ দিয়ে তৃণমূলের ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের আহ্বান জানান।
মতবিনিময় সভা থেকে দিরাই-শাল্লা দুটি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় জেলা নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ৬ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী ঐক্যবদ্ধভাবে জনসভা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। শীঘ্রই একটি বৃহত্তম সমাবেশ ডাকা হবে বলে সভায় ঘোষণা করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: