শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩২ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ভিটে-বাড়িহীন এক শহীদ পরিবার: দেখার কেউ নেই!

দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ভিটে-বাড়িহীন এক শহীদ পরিবার: দেখার কেউ নেই!

amarsurma.com

স্টাফ রিপোর্টার সুনামগঞ্জ:
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের নাইন্দা নদীর তীরবর্তী আস্তমা গ্রামের ওকোতভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ আরশ আলী। আর তিনি সেদিন ত্যাগ করতে পেরেছিলেন জীবনের মায়া; অংশগ্রহণ করতে পেরেছিলেন আমাদের জাতীয় এই মুক্তিসংগ্রাম আর স্বাধীনতা যুদ্ধে। দুঃখজনক হল তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ দেখে যেতে পারেন নি; ১৫ সেপ্টেম্বর বাবনিয়া গ্রামে সম্মুখ যুদ্ধে শহিদ হন তিনি। বাবনিয়া গ্রামের আখরা লাগোয়া এই যুদ্ধে সময়টা ছিল তখন আনুমানিক বিকাল ৫টা। বলাবাহুল্য আরশ আলী শেষ নিঃশ্বাসটুকু থাকা পর্যন্ত খুব দক্ষতার সাথে সেদিন যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলেন।
শাহাদাৎ বরনের পর আরশ আলীকে দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া নামক গ্রামের দক্ষিণের হাওর তথা আহমদপুর মৌজা নামক টিলাতে সমাহিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৪৮ বছর চলে গেলেও সুনামগঞ্জ জেলার প্রথম শহিদ এই আরশ আলীর পরিবার এখনো রাস্তায়! এখনো অভাব অনটনে দিনাতিপাত করছে এই শহিদ আরশ আলীর পরিবার।
কোন জায়গা জমি না থাকায় এই শহীদ পরিবারের বাস এখন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ হ্যাচারীর পাশে জরাজীর্ণ এক কূড়ে ঘরে। দেশ থেকে সাঁকোবিলীন হলেও তাদের ওখানে আছে একটি। গোটা দেশ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হলেও আরশ আলীর পরিবার এখনো আধারে ডুবে আছে। এখানে নেই কোন বিদ্যুৎ, নেই কোন সোলার প্যানেল, হারিকেনের আলোই তাদের সম্বল। অবহেলা অনাদরে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন তারা। সরকারি অনেক খাস জায়গা প্রভাবশালী রাগব বোয়ালদের অধীনে থাকলেও এই অসহায় শহিদ পরিবারের জন্য এখনো জুটেনি একটুকরো জমি। রাস্থায় রাস্থায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন এই শহিদ পরিবার। তাদের দেখার যেন কেউ নেই! ভিক্ষুকের মত ঘুরছেন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। প্রশাসনের পক্ষথেকেও আজ পর্যন্ত নেয়া হয়নি কোন প্রদক্ষেপ। যে আরশ আলী তার বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এদেশ স্বাধীন করে গেলেন তার পরিবারের এমন অবস্থা বড়ই বেমানান!
শহিদ আরশ আলীর ভাই অসহায় হাসিম আলী জানান, ১৯৭১ সালে আমার ভাই তার তাজা রক্ত দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছে। আর এ দেশে আমরা না খেয়ে, শত কষ্টে দারিদ্রের মধ্যে মরে যাচ্ছি, আমাদের দেখার কেউ নাই। আমরা সবকিছু থেকে বঞ্চিত, সরকারি বেসরকারি কোন প্রকার সাহায্য আমরা পাইনা। দুবেলা দু’মুঠো ভাত ও আমাদের কপালে জুটেনা। আমি বৃদ্ধ মানুষ, কোন কাজ করতে পারিনা। আমার সহজ-সরল ছেলেটা এখন মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে পরিবার চালায়। পরিবারে আমরা ৬ জন মানুষ কি করুন জীবন যাপন করছি কেউই তা কখনো জানতেও চায়নি। তিনি আরও বলেন দেশ তো পেয়েছি, কিন্তু আগে যে কষ্ট করতাম এখনও তাই করি। অভাব তো ছাড়ে নাই। দেশে এখন অনেক ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সরকারী অনেক সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু আমরা সঠিক মুক্তিযুদ্ধা পরিবারের সদস্য হয়েও কোন সুযোগ সুবিধা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। তাই সরকারের কাছে আবেদন, আমাদের মত অসহায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে যেন কিছু হলেও সাহায্য করা হয়।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আতাউর রহমান বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষথেকে অনেক সময় তাদের সাহায্য সহযোগিতা করে থাকি। কিন্তু এই পরিবারের কোন জায়গা না থাকায় তারা এখন রাস্থায়। যদি সরকারের পক্ষথেকে তাদের কিছু খাস জমি এবং একটি ঘর বন্দোবস্ত দেয়া হত তাহলে এই অসহায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কষ্টটা কিছুটা হলেও লাগব হবে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: শফি উল্লাহ জানান, আমি এই অসহায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য খাস জমি বন্দোবস্তের আবেদন পেয়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে এ ব্যাপার যথাসম্ভব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক নুর হোসেনের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, শুনে কষ্ট লাগছে এই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কথা। আমরা নতুন নির্বাচিত হয়েছি। শপথ গ্রহণের পরপরই এই অসহায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে যতটুকু পারি সাহায্য সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: