মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪০ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩

পবিত্র আশুরা: গুরুত্ব ও তাৎপর্য

amarsurma.com

অধ্যক্ষ সৈয়দ রেজওয়ান আহমদ:

হিজরি সনের প্রথম মাস মহরম। যা মহান বরকতময় মাস। এটি কুরআনে বর্ণিত ‘আশহুরে হুরুম’ এর অন্যতম৷ মাস। ‘আশহুরে হুরুম’ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহর কিতাবে মাসসমূহের গণনায় বারটি মাস। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত মাস। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন জুলুম করো না।” (আল কুরআন-৯ : ৩৬)
তাৎপর্যপূর্ণ মাস মহরম সম্পর্কে মহানবী৷ সা. বলেন, “বারোটি মাসের সমষ্টিই হলো বছর, তার মধ্যে চারটি অতি সম্মানিত। তিনটি পর পর জিলকদ, জিলহজ ও মুহররম আর (চতুর্থটি হলো) রজব। (সহীহ বুখারী)

‘আশুরা’ এর নামকরণ:

কারো কারো মতে, যেহেতু এ দিনটি মহররমের দশ তারিখে তাই একে আশুরা বলা হয়। আর এটা স্পষ্ট। আবার কোনো ওলামায়ে কেরাম বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ দিনে দশজন নবীকে দশটি মোজেঝা দিয়ে সম্মানিত করেছেন, তাই একে আশুরা বলা হয়।

আশুরার রোজার ফজিলত:

আশুরার দিনটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে খুবই প্রিয়। তাই তিনি এ দিনে রোজা পালনের সওয়াব প্রদান করে থাকেন বহুগুণে। হযরত আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হল আল্লাহর প্রিয় মুহাররম মাসের সওম। এবং ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের সালাত” (সহীহ মুসলিম)।
হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. মদীনায় এসে দেখলেন যে, ইহুদীরা আশুরার দিনে রোজা পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন “এটা কোন দিন যে তোমরা রোজা পালন করছ? তারা বলল, এটা এমন এক মহান দিবস যেদিন আল্লাহ তায়ালা মুছা আ. ও তার সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরআউনকে তার দলবলসহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। মুছা আ. শুকরিয়া হিসেবে এ দিনে রোজা পালন করেছেন। এ কারণে আমরাও রোজা পালন করে থাকি। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সা. বললেন, “তোমাদের চেয়ে আমরা মুছা আ. এর অধিকতর ঘনিষ্ট ও নিকটবর্তী।” অতঃপর রসূলুলাহ সা. এ দিনে রোজা পালন করলেন ও অন্যদেরকে রেজা পালনের নির্দেশ দিলেন। (সহীহ মুসলিম)
এ দিনে রোজা পালনের ফজীলত সম্পর্কে হাদীসে আরো এসেছে, আবু কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত যে, রসূলুলাহ সা. কে আশুরার রোজা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল, তিনি বললেন, “ বিগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা হিসেবে গৃহীত হয়।” (সহীহ মুসলিম)

আশুরার সাথে নবম দিনের রোজাও মুস্তাহাব:

আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বর্ণনা করেন, যখন রাসূলুল্লাহ সা. আশুরার রোজা রাখলেন এবং (অন্যদেরকে) রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন, লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটিতো এমন দিন, যাকে ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা সম্মান জানায়। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, আগামী বছর এদিন আসলে, আমরা নবম দিনও রোজা রাখব, ইনশাআল্লাহ। (সহিহ মুসলিম)
ইমাম শাফেয়ী ও তাঁর সাথীবৃন্দ, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক প্রমুখ বলেছেন, আশুরার রোজার ক্ষেত্রে দশম ও নবম উভয় দিনের রোজাও মুস্তাহাব। কেননা নবী করিম সা. দশ তারিখ রোজা রেখেছেন এবং নয় তারিখ রোজা রাখার নিয়ত করেছেন। এরই উপর ভিত্তি করে বলা যায়, আশুরার রোজার কয়েকটি স্তর রয়েছে, সর্ব নিম্ন হচ্ছে কেবল দশ তারিখের রোজা রাখা। এরচে’ উত্তম পর্যায় হচ্ছে তার সাথে নয় তারিখের রোজা রাখা। এমনিভাবে মুহররম মাসে রোজার সংখ্যা যত বেশি হবে মর্যাদা ও ফজিলতও ততই বাড়তে থাকবে।

আশুরা দিনে করণীয়-বর্জনীয়:

আল্লাহর রাসূল সা. এর উক্ত হাদীসসমূহের উপর আমল করে কেউ যদি নফল রোযার বিষয়ে যত্মবান হন তাহলে তা অনেক সৌভাগ্যের বিষয়। এরপর ‘আশহুরে হুরুম’ বা সম্মানিত চার মাসের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার কারণে কেউ যদি এ মাসে গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য বিশেষভাবে চেষ্টা করে এবং নেক আমলে বেশী যত্মবান হয় তাহলে সেটাও কল্যাণকর বিষয়। কেননা আল্লাহ তায়ালা এই দিবসে অনেককে ক্ষমা করে দেন। যেমন হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, “হযরত আলী রা. হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী করীম সা. কে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি আমাকে রমযানের রোযার পর কোন রোজা রাখার আদেশ করেন যে, মুহাররম মাসের রোজা পালন কর। কেননা এটা আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে যেই দিনে আল্লাহ এক সম্প্রদায়কে ক্ষমা করে দেন এবং এর উপর অপর এক সম্প্রদয়কে ক্ষমা করে দেন।
কিন্তু এসব আমলের পরিবর্তে একশ্রেণির মানুষের আগ্রহ আনুষ্ঠানিকতাপূর্ণ বিভিন্ন কাজ। যার অনেক কিছু অর্থহীন আনুষ্ঠানিকতাই শুধু নয়, নানা নিষিদ্ধ ও গর্হিত কাজও বটে। যেমন, শোকগাঁথা পাঠ, শোকপালন, মিছিল ও র‌্যালী বের করা, শোক প্রকাশার্থে শরীর রক্তাক্ত করা ইত্যাদি। তেমনি এ মাসে বিয়ে শাদি থেকে বিরত থাকা এবং এ মাসটিকে অশুভ মনে করার প্রবণতাও অনেকের মাঝে দেখা যায়।
এটা ঠিক যে, এ মাসে নবী আ.-এর দৌহিত্র ও সাহাবী হযরত হুসাইন রা. মর্মান্তিকভাবে শাহাদাত বরণ করেছেন। কিন্তু একে কেন্দ্র করে শোক পালন করা, মাতম করা ইত্যাদির স্বপক্ষে শরীয়তের কোন দলীল আছে কিনা আমার জানা নেই। নবী সা. আরো বলেছেন, ‘তাদের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই, যারা মুখ চাপড়ায় কাপড় ছিঁড়ে আর জাহেলী যুগের কথা বলে।’ (সহীহ বুখারী)

লেখক: প্রিন্সিপাল-সৈয়দপুর সৈয়দিয়া শামছিয়া আলিম মাদরাসা, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: