শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪০ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
পরকীয়ার অভিশাপে আক্রান্ত সমাজ: উত্তরণের উপায় নিয়ে কী ভাবছেন চিন্তাবিদ আলেমরা?

পরকীয়ার অভিশাপে আক্রান্ত সমাজ: উত্তরণের উপায় নিয়ে কী ভাবছেন চিন্তাবিদ আলেমরা?

amarsurma.com

আতাউর রহমান খসরু:

চট্টগ্রামের তরুণ চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের মৃত্যু এই সময়ের একটি আলোচিত ঘটনা। তিনি স্ত্রীর পরকীয়া ও বহুগামিতার যন্ত্রণা সহ্য না করে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। একটি ভিডিও ক্লিপসে দেখা গেছে আকাশের স্ত্রী–যিনি নিজেও একজন চিকিৎসক- অন্তত ৩ জন পুরুষের সাথে বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছেন। ডা. আকাশের ঘটনা সময়ের আলোচিত হলেও প্রতিদিন পত্রিকাজুড়ে নারী-পুরুষের বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক এবং তার জেরে আত্মহত্যা, খুন; এমনকি নিজের সন্তান হত্যার মতো ভয়াবহ ঘটনার খবর প্রকাশিত হচ্ছে। খবরের অন্তরালে থেকে যাচ্ছে এমন অনেক ঘটনা। কিন্তু কেন? কেন মানুষ ধর্মীয়, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ উপেক্ষা করে এমন বহুগামিতার পথে পা বাড়াচ্ছে? কেন এতো নৃশংস হচ্ছে দিনদিন?

চট্টগ্রাম গণি এমইএস কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইন মনে করেন, মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ধর্মের চর্চা না থাকায় মানুষের নৈতিক অবক্ষয় ঘটছে। আর সে কারণেই মানুষ পরকীয়ার মতো পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছে।

জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া ড. খালিদের বক্তব্যের সঙ্গে আরেকটু যোগ করে বলেন, আমাদের দেশে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় শিশুর জীবনই শুরু হয় সহশিক্ষার মধ্য দিয়ে। একজন মানুষ যখন শৈশব থেকে যৌবনপ্রাপ্ত হওয়ার পর দীর্ঘদিন পর্যন্ত পরপুরুষের সঙ্গে উঠে বসে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন তার ভেতর লজ্জা-শালীনতা ও পবিত্র জীবনের গুরুত্ব অবশিষ্ট থাকে না। বিপরীতে উচ্চাশার নামে বর্তমান শিক্ষা ও সমাজব্যবস্থা; এমনকি পরিবারও তাকে এমন অবাস্তব জীবনের স্বপ্ন দেখায় যা তাকে নিজের প্রতি, নিজের পরিবারের প্রতি, স্বামী ও সংসারের প্রতি অতৃপ্ত করে তোলে। তখন উন্নত জীবনের আশায় সে যা খুশি তাই করতে পারে।

তারা উভয়েই একশ্রেণির মিডিয়ার ভূমিকা নিয়েও যথেষ্ট হতাশা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, মিডিয়া যেখানে জাতি ও আগামী প্রজন্মকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করবে, সেখানে তারাই অনৈতিকতাকে উস্কে দিচ্ছে। তারা বিশেষত টেলিভিশনগুলো নাটক-সিনেমার মাধ্যমে এমন জীবনকে মানুষের সামনে উপস্থাপন করছে যেখানে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক অপরাধ নয়; বরং মানবিক বিষয়।

#তারা উভয়ে এ ক্ষেত্রে ভারতীয় মিডিয়ায় প্রচারিত টিভি সিরিয়ালগুলোকে বিশেষভাবে দায়ী করেন। তাদের ভাষায় ভারতীয় সমাজে পরকীয়া ও অনৈতিক সম্পর্ক এখন অপরাধ নয়। ভারতীয় আদালত পরকীয়াকে মানবিক বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই তাদের প্রচারিত নাটক-সিনেমা-সিরিয়ালে তার প্রতিফলন থাকাই স্বাভাবিক। যা দেখে দেখে আমাদের সমাজের মানুষের ভেতর থেকে অনৈতিকতার প্রতি বিদ্যমান ঘৃণাবোধ দূর হয়ে যাচ্ছে।

মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া দেশীয় মিডিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, কিছু কিছু মিডিয়া অনৈতিক সম্পর্কের কারণে সংঘটিত অপরাধগুলোর পেছনে থাকা মানুষের প্রতি সহমর্মী মনোভব নিয়ে কাজ করে। বিশেষত সে যদি নারী হয়। মিডিয়া এ ক্ষেত্রে নারীর নির্মমতা স্পষ্ট না করে পুরুষের পেছনেই লেগে যায়। অথচ পরকীয়া বা অনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নারী বা পুরুষ কারো ভূমিকা খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।

অবশ্য আ ফ ম খালিদ আরো কিছু যৌক্তিক বিষয় উপস্থাপন করেছেন। যার সহজ সমাধান না থাকায় নারী-পুরুষ পরকীয়ার পথ বেছে নিচ্ছে। যেমন, সামাজিকভাবে বিবাহ বিচ্ছেদকে অত্যন্ত নিন্দনীয় ভাবা–যার মাধ্যমে মানুষ দাম্পত্য জীবনে অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে পারে, দাম্পত্য জীবনে পরস্পরের প্রতি ছাড় দিতে না শেখা, পরস্পরের প্রতি আস্থাহীনতা এবং পুরুষের অক্ষমতা গোপন করে সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা। তিনি মনে করেন, মানুষ এসব বিষয়ে সচেতন হলে পরকীয়া ও অবৈধ-অনৈতিক সম্পর্ক সমাজ থেকে কমবে। একইভাবে তিনি স্বামীর অসহনীয় প্রবাস জীবনকেও পারিবারিক অশান্তির অন্যতম কারণ বলে মনে করেন।

এগুলোর বাইরে এই দুই আলেম চিন্তাবিদ আইনি শিথিলতাকেও দায়ী করেন। ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইন বলেন, পরকীয়া আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে কোনো অপরাধ নয়। পরকীয়ার ব্যাপারে আইনে যতোটুকু পাওয়া যায় তাতে পুরুষের শাস্তির বিধান থাকলেও নারীর শাস্তির বিধান নেই।

তারা মনে করেন, পরকীয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ ঘোষণা করা উচিৎ। তাদের যুক্তি, যে কাজ পরিবার ও সমাজকে অস্থিতিশীল করছে, মানুষের জীবন ও সম্পদ ধ্বংস করে দিচ্ছে; মানুষকে সন্তান হত্যার মতো নৃশংস করে তুলছে তা অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ হওয়ার যোগ্য।

মানবতা বিরোধী এই স্খলন যদি রোধ করা না যায় তবে পশ্চিমা বিশ্বের মতো আমরাও পরিবার ও সমাজব্যবস্থা হারিয়ে যাবে–বলেন ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইন।

কঠোর আইন প্রণয়নের পাশাপাশি তিনি ধর্মীয় শিক্ষার বিস্তার, পরিবার ও সমাজে ইসলামের চর্চা বাড়ানো, তাকওয়ার জীবনযাপন, বিশেষত রাসুল সা.-এর পারিবারিক জীবন মানুষের সামনে তুলে ধরা, মুসলিম মহীয়সী নারীদের জীবনী পাঠেরও পরামর্শ দেন।

মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া শিক্ষা কারিকুলামে উপরের শ্রেনিগুলোতে নারী-পুরুষের অনৈতিক সম্পর্ক ও অনৈতিক জীবনের ভয়াবহতা তুলে ধরার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে শালীন জীবনের শান্তি ও স্বস্তি-মাধুর্য তুলে ধরার ওপরও জোর দেন তিনি।

সূত্র : লেখাটি ফেইসবুক থেকে নেয়া

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: