বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৮ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
পরাজয়ের অপমান সইতে না পেরে পঞ্চম শ্রেণির স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা

পরাজয়ের অপমান সইতে না পেরে পঞ্চম শ্রেণির স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা

amarsurma.com

আমার সুরমা ডটকম:

স্টুডেন্ট কাউন্সল নির্বাচন পরাজিত হওয়ায় সহপাঠিদের দেয়া অপমান সইতে না পেরে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে মেমোশা আক্তার প্রমি (১১) নামের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়–য়া এক মেধাবী স্কুল ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। সে উপজেলার বড়দল (উত্তর) ইউনিয়নের ব্রাম্মণগাঁও (নোয়াপাড়া) গ্রামের বাসিন্দা ও বাদাঘাট বাজারের বিশিষ্ট কয়লা এবং কাপড় ব্যবসায়ী মোশাহিদ শাহর একমাত্র মেয়ে ও বাদাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়–য়া এক মেধাবী ছাত্রী। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফা নামাজে জানাযা শেষে তাকে উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
সোমবার বিকেলে স্কুল থেকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর সহপাঠিদের দেয়া অপমান সইতে না পেরে উপজেলার বাদাঘাটের বাসায় ফিরে এসে শোবার ঘরের দরজা বন্ধ করে ফ্যানের সাথে গলায় ওরনা পেছিয়ে ওই ক্ষুদে শিক্ষার্থী আত্বহত্যা করেন।
স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা জানাজানি হলে এলাকা ও এলাকার বাহিরে থাকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী নেটিজেনরা ওই ছাত্রীকে আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী হিসাবে সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিপত্র তারিখ পরিবর্তন করে উল্টো রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষিত শোক দিবসে ২৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, নির্বাচন তদারকিতে থাকা সহকারি শিক্ষক ও কয়েকজন সহপাঠিকে দায়ী করেছেন।
ওই ছাত্রীকে আত্মহত্যার প্ররোচনায় বাধ্য করা হয়েছে বলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অপর সংশ্লিষ্টদের বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশী আইনি প্রক্রিয়ায় তাদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আইন-শৃংখলা বাহিনী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকারের প্রতি জোরালো দাবি তুলে ধরেছেন শোকাহত এলাকাবাসী।
সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ও নিহতের পারিবারিক এবং সহপাঠিদের সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিপত্র অনুযায়ী সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে একযোগে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য ২০ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের দিনক্ষণ নির্ধারিত করে দেয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার বাদাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্বাচনে তিনটি শ্রেণিতে মাত্র শুরুতে ৭ জন প্রার্থী হওয়ায় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে প্রার্থী সংখ্যা কম হওয়ায় সুনামগঞ্জের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, কয়েকজন সহকারি শিক্ষকের যোগসাজসে নিজের মনগড়া মতামত জারি করে নির্বাচনের ভোট গ্রহণ ২৫ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত করেন।
একই দিন রাজধানী ঢাকার চকবাজারের অগ্নিকা-ের ঘটনায় রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক দিবস পালনের কর্মসুচী থাকলেও ওই প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকরা তাও উপেক্ষা করে ভোট উৎসব করেন।
পরবর্তীতে অনেকটা চাপ প্রয়োগ করে প্রধান শিক্ষক ভোট উৎসবের নামে ২৫ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করলেও তিনটি শ্রেণিতে ১৭ প্রার্থীর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির মেধাবী স্কুল ছাত্রী মেমোশা আক্তার প্রার্থী হন। তার প্রার্থীতার বিষয়ে ওই প্রধান শিক্ষক কিংবা নির্বাচন তদারকিতে থাকা অপর সহকারি শিক্ষকগণও অভিভাবেকের কোন সম্মতি নেন নি।
অভিযোগ রয়েছে, ওই প্রধান শিক্ষক পঞ্চম শ্রেণি থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া তার এক নিকতাত্মীয়কে জিতিয়ে আনতে ভোটের আগে ও ভোটের দিন ব্যক্তিগত প্রভাব বিস্তার করেন। এক পর্যায়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টায় ওই বিদ্যালয়ে ভোট গ্রহণ শুরু হলে বিকেল ৪টার দিকে ঘোষিত ফলাফলে মেমোশা আক্তার প্রাপ্ত ভোটে তৃতীয় হয়ে পরাজিত হন।
এদিকে ভোটে পরাজিত হলে স্কুলেই কয়েকজন সহপাঠি মেমোশাকে ‘ফেইল ফেইল’ বলে অপমান সুচন নানান কথাবার্তা বলার এক পর্যায়ে কেদে কেদে সে দ্রুত বাদাঘাটের বাসায় ফিরে আসে। বাসায় থাকা মা ও স্বজনদের ভোটে পরাজয় হয়েছে জানিয়ে সে শোবার ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়।
মায়ের ধারণা অবুঝ শিশু কন্যা ভোটে পরাজিত হয়ে কিছুটা কষ্ট পেয়েছে, স্কুলের পোষাক পরিবর্তন করার জন্যই হয়ত শোবার ঘরের দরজা বন্ধ করেছে, ফের পোষাক পরিবর্তন করে খাবার টেবিলে ফিরবে আদরের একমাত্র শিশু কন্যাটি।
কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর খাবার টেবিলে শিশু কন্যা না ফেরায় শোবার ঘরের দরজা খুলে দেখেন আদরের মেয়েটি ফ্যানের সাথে ওরনা পেছিয়ে আত্মহত্যা করে ঝুলে আছে।
পরে শিশু কন্যাকে উদ্ধার করে বাসা বাদাঘাট বাজারে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে স্থানীয় চিকিৎসক ওইদিন সন্ধায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের মা একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে রাতভর আহাজারি করতে করতে বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী হলেও পরাজয় আঁচ করতে পেরে সোমবার সকাল থেকেই মেয়ে আমার স্কুলে যেতে চায়নি। এরপর প্রধান শিক্ষক স্কুলের অপর তিন ছাত্রীকে বাসায় পাঠিয়ে অপর এক সহকারি শিক্ষিকার কথা বলে আমার মেয়েকে চাপ দিয়ে স্কুলে ডেকে নিয়ে যান।
নিহততের বাবা ব্যবসায়ী মোশাহিদ শাহ মঙ্গলবার মেয়ের দাফন শেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, আমি কিংবা আমার স্ত্রীর কোন রকম সম্মতি ছাড়াই প্রধান শিক্ষক চাপ প্রয়োগ করে আমার মেয়েকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে বাধ্য করেন, কিন্তু নির্বাচনে হেরে যাবার পর তাৎক্ষণিকভাবে সহপাঠিরা কোন কটু কথা বলে থাকলেও শিক্ষকরাই তা সামাল দিতে পারতেন, সেদিকে খেয়াল না করে ওনারা নির্বাচনের নামে আমার মেধাবী শিশু কন্যাকে আত্মহত্যার দিকে প্ররাচিত করলেন। তিনি আরো বলেন, মেয়েকে তো ফিরে পাবই না, তাই জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট আবেদন করে বিনা ময়নাতদন্তে লাশ দাফনের আবেদন করি। বর্তমান সরকার, আইন-শৃংখলা বাহিনী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিকট আমার একটাই দাবি, বিষয়টি বিভাগীয় ও প্রচলিত আইনে তদন্ত করা হোক যেন আমার মেয়ে মেমোশার মত আর কোন ক্ষুদে শিক্ষার্থীকে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে আত্মহত্যার পথে ধাবিত হতে না হয়।
উপজেলার বাদাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান হাবিবের নিকট ওই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মঙ্গলবার রাতে গণমাধ্যমেকে বলেন, আমি আসলে বুঝতেই পারিনি নির্বাচনে হেরে গিয়ে এমন একটি কোমলমতি ছাত্রী আত্মহত্যা করে ফেলবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিপত্র অনুযায়ী নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ পেছানো, পরববর্তী রাষ্ট্রীয় শোক দিবস উপেক্ষা করে এমনকি শিক্ষা অদিপ্তরের পরিপত্র উপেক্ষা করে নিজের মনগড়া তারিখে ভোট গ্রহনের তারিখ নির্ধারণ, ভোট গ্রহণ এমনকি কোন কোন শিক্ষার্থীকে চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচনে প্রার্থী হতে বাধ্য করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন রকম সদুত্তর না দিয়ে বার বার প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন।
তাহিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আকিকুর রেজা খান বলেন, শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিপত্র অনুযায়ী নির্ধারিত ২০ ফেব্রুযারিতেই স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন সম্পন্ন করে ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দেযার কথা থাকলেও ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষক কোন প্রতিবেদন দেননি। এমনকি নির্বাচনের নতুন তারিখ পর্যন্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসকে অবহিত করেন নি। তিনি বলেন ওই স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা ও পুরো বিষযটি আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. জিল্লুর রহমানের বক্তব্য জানতে মঙ্গলবার রাতে উনার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে কল করা হলেও তা বন্ধ থাকায় কোন রকম বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: