বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০০ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
পাকিস্তানে আল্লামা তাকির গাড়িবহরে হামলায় নিহত ২: ইমরান খানের নিন্দা

পাকিস্তানে আল্লামা তাকির গাড়িবহরে হামলায় নিহত ২: ইমরান খানের নিন্দা

amarsurma.com

আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:

পাকিস্তানের করাচিতে বিশ্বখ্যাত আলেম আল্লামা তাকি উসমানীর গাড়িবহরে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার দুপুরে চালানো এই হামলায় তিনি বেঁচে গেলেও তার ২জন নিরাপত্তারক্ষী নিহত হয়েছেন বলে জানা যায়। তার গাড়িবহরে গুলিবর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। খবর ডন ও জি নিউজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তাকি উসমানিকে বহনকারী গাড়িসহ অপর একটি গাড়িতে হামলা চালানো হয়। এতে তাকি উসমানী ও তার স্ত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন। পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। তবে হামলার স্থান সম্পর্কে পাকিস্তানের পুলিশের কয়েকটি বক্তব্য এসেছে। প্রথমে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল হাইওয়ের ফয়সাল নার্সারির কাছে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে, পরে বলা হয়েছে গুলশান ইকবালের নাপাপুল এলাকার কাছে গুলিবর্ষণ হয়। দারুল উলুম করাচির মুখপাত্র তালহা রহমানী জানিয়েছেন, আল্লামা তাকি উসমানী প্রাণে বেঁচে গেছেন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে রয়েছেন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অতিদ্রুত এ হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, বিশ্বখ্যাত এ আলেমকে হত্যাচেষ্টার পেছনে বড় কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, তা ও আমরা বের করার চেষ্টা করছি। হামলায় আল্লামা তাকি উসমানি প্রাণে বেঁচে যাওয়ায় শুকরিয়া আদায় করে পাকিস্তানের তিনি বলেন, ‘মুফতি তাকি উসমানির মতো সম্মানিত ব্যক্তির ওপর এমন নৃশংস হামলার ভয়ানক কোনো ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত করে। তার মতো এমন ব্যক্তিত্ব পাকিস্তান ও মুসলিম বিশ্বের অমূল্য বড় সম্পদ।’ তিনি মসজিদ মাদরাসাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার এবং আলেমদের নিরাপত্তা দিতে প্রাদেশিক গভর্নরদের নির্দেশ দিয়েছেন।
করাচির এডিশনাল আইজি আমির শেখ বলেছেন, এটি জঙ্গিবাদী কোনো হামলা নয়। পাকিস্তান ও করাচিকে অশান্ত করার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। সিন্ধু প্রদেশের আইজি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাকি উসমানীকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হলেও তিনি নিরাপদে রয়েছেন।
আল্লামা তাকি উসমানী বিশ্বখ্যাত মুসলিম স্কলার হিসেবে পরিচিত। আরব বিশ্বসহ পুরো বিশ্বের মুসলিম সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয় তিনি। দারুল উলুম করাচির এ ভাইস প্রিন্সিপাল পাকিস্তানের প্রথম গ্রান্ড মুফতি শফি রহঃ এর ছেলে এবং পাকিস্তানের বর্তমান গ্যান্ড মুফতি রফি উসমানির ছোট ভাই। তিনি পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টের শরীয়া বেঞ্চের সাবেক বিচারপতি।

amarsurma.comশাইখুল ইসলাম আল্লামা তাকী উসমানী হাফি. এর উপর সন্ত্রাসী হামলার বিবরণ হযরতের মুখেই 
.উপমহাদেশের বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন শায়খুল ইসলাম আল্লামা তাকি উসমানি হাফিজাহুল্লাহ এর উপর আজ ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়। হামলায় দুই জন শহিদ ও দুই জন আহত হন। কিন্তু তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপদে ফিরে আসতে সক্ষম হন। আল্লাহ তাআলা এই মহান শায়খকে সর্বোত্তম পন্থায় হেফাজত করুন।
.হামলার পর তিনি দারুল উলুম করাচিতে ফিরে সমবেত ছাত্র-শিক্ষক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করেন। সেখানে তিনি হামলার বিবরণ তুলে ধরেন। ওয়াটসঅ্যাপে পাওয়া অডিও ক্লিপের শ্রুতিলিখন করেছেন আবরার আবদুল্লাহ।
“আমি ধারণা করছি, আপনারা আজকের ঘটনা নিয়ে চিন্তিত ও পেরেশান। আমি আপনাদেরকে সংক্ষেপে ঘটনাটি বর্ণনা করছি। আমি বায়তুল মোকাররমে জুমা পড়াই। সে উদ্দেশ্যেই আমি বের হয়। আমার সাথে আমার স্ত্রী এবং এক পৌত্র ও এক পৌত্রি ছিলো। ছয়-সাত বছরের শিশু। একজন নিরাপত্তা কর্মী যিনি পুলিশের পক্ষ থেকে আসেন তিনি আমার সামনের সিটে বসা ছিলেন। আমার ড্রাইভার হাবিব ড্রাইভিং সিটে বসা ছিলো।যখন আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায় হঠাৎ বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ শুরু হলো। আমাদের গাড়িকে লক্ষ্য করেই গুলি ছুড়ছিলো। সামনের দিক থেকে, ডান ও বাম দিক থেকে ধারাবাহিকভাবে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ চলতে থাকলো। আমার ড্রাইভারের শরীরের এখানে এবং এখানে (হাতের ইশারায় দেখান) দুটি গুলি লাগে। নিরাপত্তা কর্মীরও এখানে গুলি আঘাত করে। আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ আমার শরীরে, আমার স্ত্রী ও বাচ্চাদের গায়ে ভেঙ্গে আসা কাঁচের টুকরো আঘাত ছাড়া তেমন কোনো আঘাত লাগেনি। আমাদের শরীরে কোনো গুলির লাগেনি।

হামলাকারীরা আক্রমণ করে সামনের দিকে চলে যায়। তাদের হয়তো খেয়াল হয় যাকে তারা লক্ষ্য বানাতে চেয়েছিলো তাকে লক্ষ্যে পরিণত করতে পারেনি, তখন আবার ফিরে আসে এবং চতুরদিক থেকে গুলিবর্ষণ শুরু হয়। আমার নিরাপত্তাকর্মী আবারও গুলিবিদ্ধ হন এবং শহিদ হয়ে যান। আমার ড্রাইভারের ডান হাত গুলি আঘাতে অকেজো হয়ে যায়। কিন্তু সে বাম হাত দিয়ে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যায়। সে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে জীবনবাজি রেখে গাড়ি চালাতে থাকে।

আমি তাকে বলেছিলাম, তোমার হাতে আঘাত লেগেছে। তুমি পেছনে এসো আমি গাড়ি চালাই। কিন্তু সে রাজি হয়নি। সে বললো, হজরত আল্লাহর ওয়াস্তে আপনি এমনটি করবেন না। ওরা আপনার উপর দ্বিতীয়বার হামলা করেছে। সম্ভাবনা আছে ওরা তৃতীয়বারের মতো হামলা চালাবে। আপনি পেছনে বসুন এবং মাথা নিচু করে বসুন যেনো আপনার শরীরে গুলি না লাগে।

তার হাত গুলির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত ছিলো, রক্ত ঝরছিলো এই অবস্থায় সে নিপা চৌরাঙ্গি থেকে লিয়াকত ন্যাশনাল হাসপাতালে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যায়। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর আমি তাকে তাকে গাড়ি থেকে নামাই। ড্রাইভার ও নিরাপত্তা কর্মীকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। তারা দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।

আমরা আশা করেছিলাম, নিরাপত্তা কর্মী বেঁচে যাবেন। কিন্তু ডাক্তাররা জানালেন, হাসপাতালে যাওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। ড্রাইভারের কথা বললো, এর চিকিৎসা সম্ভব। চিকিৎসা করলে সে বেঁচে যাবে এবং সুস্থ্ হয়ে উঠবে।

আমাদের পেছনের গাড়িতে একজন ড্রাইভার ও নিরাপত্তা কর্মী ছিলো। গুলির আঘাতে নিরাপত্তা কর্মী শহিদ হয়ে যান এবং ড্রাইভার মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। সে হাসপাতালে ভর্তি। তার অপারেশন হবে।

আল্লাহর তায়ালার কুদরত যে, তিনি আমাকে রক্ষা করেছেন। আপনাদের দোয়া ছিলো, আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ ছিলো। আল্লাহ তায়লা আমাকে কীভাবে রক্ষা করলেন তার ব্যাখ্যা আমি জাগতিক কোনো জিনিসের মাধ্যমে করতে পারবো না। আল্লাহর দয়ায় আমি পরিপূর্ণ সুস্থ আছি। ভালো আছি। বহাল তবিয়তে আপনাদের সামনে আছি। আমি ভয়ও পাইনি এবং চিন্তিতও নই। কিন্তু আমার দুইজন সাথী শহিদ হয়েছেন। তাদের জন্য আমার হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত। তাদের পরিবারের প্রতি আমার দোয়া ও সমবেদনা। দুইজন আহত হয়েছেন। তার মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে পরিপূর্ণ ও দ্রুত আরোগ্র দান করুন। আমিন।”

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: