শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২৫ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩

পীরের অভিশাপ!

we259

আমার সুরমা ডটকম ডেক্স : কিংবদন্তী আছে যে শিকারপুর জেলার একটি গ্রামে একদা এক বয়স্ক পীর ধ্যান করছিলেন। সেসময় দুই সন্তানসম্ভবা নারী ওই পীরের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং পীরের দুই হাতে মাত্র দুটি আঙ্গুল দেখে হাসাহাসি করছিলেন। ওই দুই নারীর মুখে বিদ্রুপের হাসি দেখে ক্রুব্ধ হলেন সেই পীর। আর তখন সেই ক্রুব্ধ পীর ওই দুই নারীকে এই বলে অভিশাপ দিলেন যে, যখন তোমাদের সন্তান হবে তখন তোমাদের বাড়িতে হাসির রোল বইবে, তখন যেন এই হাসিকে ভুলে যেও না। এই ঘটনা প্রায় ছয় প্রজন্ম আগে ঘটেছিল বলে জানা যায়। কিন্তু আজ অবধি শিকারপুর শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরবর্তী রুস্তম শহরের নিকটবর্তী মোহাম্মদ পানোয়ার গ্রামে মাঝে মধ্যেই বাড়তি একটি অথবা দুইটি আঙ্গুল নিয়ে অনেক সন্তান জন্মায়। শুধু হাতই নয় ওই সন্তানগুলোর পায়ের আঙ্গুলও কয়েকটি বাড়তি হয়। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানেই বাড়তি আঙ্গুল নিয়ে সন্তান জন্মায় কিন্তু পানোয়ার গ্রামের চিত্র কিছুটা ব্যাতিক্রম।

গ্রামের সবচেয়ে বয়সী মোহাম্মদ আলীর মতে, গ্রামের প্রতি পঁঞ্চাশটি ঘরের মধ্যে একটি অথবা দুইটি পরিবার পাওয়া যাবে যাদের ঘরে এরকম বাড়তি আঙ্গুলসহ সন্তান রয়েছে। আর এরা সবাই পানোয়ার গোত্রের অর্ন্তভূক্ত। পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘটনা তদন্তে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও, ঠিক কি কারণে এরকম ঘটনা ঘটছে সেবিষয়ে কোনো সুরাহা করা সম্ভব হয়নি।

পুরো গ্রামটির অবকাঠামো বলতে কয়েকটি রাস্তা, একটি কনফেকশনারি এবং একটি সরকারি বিদ্যালয়। এর বাইরে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো স্থাপনা নেই বললেই চলে। অন্যান্য গ্রামের তুলনায় এই গ্রামটি অনেকটাই পৃথক। কারণ অন্যান্য গ্রামে সকাল বেলা যেমন মুখর পরিবেশ দেখা যায়, এখানে ঠিক তার উল্টো। কোনো চাষীকে সকালবেলা মাঠ অভিমুখে দেখা যায় না, এমনকি চায়ের দোকানেও কাউকে দেখা যায় না। শুধু কিছু নারীকে বাড়ির সামনে মাখন বানাতে দেখা যায়। এর বাইরে পুরো গ্রামটিকে জনশূণ্যই মনে হবে। গ্রামের অধিকাংশের কাছেই বাড়তি আঙ্গুল নিয়ে জন্মানোকে পাপ বা পীরের অভিশাপ হিসেবে দেখা হয় এবং সমাজের অন্যান্যরা ওই পরিবারের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক রক্ষা করে না।

৯০ বছর বয়সী ফাইয়াজ মোহাম্মদ হলেন সেই ব্যক্তিদের একজন যার হাতে রয়েছে একটি বাড়তি আঙ্গুল। তার সঙ্গে কথা হলে জানা যায়, তাদের পরিবারে প্রথম বাড়তি আঙ্গুল নিয়ে জন্মেছিলেন তার নানা। এরপর থেকেই মূলত তাদের পরিবারের ভাগ্যের সঙ্গে এই বাড়তি আঙ্গুল জড়িয়ে আছে। অনেক বিধি নিষেধের পালা ডিঙ্গিয়ে সপ্তম শ্রেনি পর্যন্ত পড়ালেখা করতে পেরেছিলেন ফাইয়াজ। কিন্তু সরকারি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য সকল যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও শারীরিক অযোগ্যতা দেখিয়ে তাকে বঞ্চিত করা হয়। এ রকম আরও অনেককিছু থেকেই বঞ্চিত হয়েছেন তিনি। এখনও গ্রামের সন্তানসম্ভবা নারীদের মাতৃত্বকালীন সময়টি কাটে তীব্র ভয় আর শঙ্কায়। সকল নারীই ওই সময় পীরের মাজারে গিয়ে প্রার্থনা করেন স্বাভাবিক সন্তানের আশায়। পানোয়ার গোত্রে বিয়ে সংক্রান্ত জটিলতা দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে এই গোত্রের কোনো পুরুষ যখন অন্য কোনো গোত্রের নারীকে বিয়ে করেন তখন তাদের যে সন্তান হয় তার শরীরে কোনো বাড়তি আঙ্গুল থাকে না।

কিন্তু পানোয়ার গোত্রের নারীদের অন্য গোত্রের পুরুষ বিয়ে করলেও বাড়তি আঙ্গুল নিয়ে সন্তান জন্মানোর সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই জ্ঞানত কোনো গোত্রই পানোয়ার গোত্রের মেয়েদের বিয়ে করতে সম্মত হয় না। এখন পর্যন্ত পানোয়ার গ্রামের নারীদের অভিশপ্ত হিসেবে গন্য করা হয়। গ্রামের নারীদের পারতপক্ষে ঘরের বাইরে দেখা যায় না। বাড়তি আঙ্গুল থাকা বয়স্ক নারীদের মধ্যে অনেকেই খুব নিভৃতে মারা যান, যাদের মৃত্যুর সংবাদটি পর্যন্ত কাউকে জানানো হয় না। আর যারা একটু লড়াই করে টিকে থাকতে চান, তাদেরকে পরিবারের সকল কাজ করা থেকে শুরু করে অমানবিক জীবনযাপন করতে হয়। সূত্র : বাংলামেইল

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: