মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০০ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩

বাংলাদেশে ভিআইপি কারা, কী কী সুবিধা পান?

amarsurma.com

আমার সুরমা ডটকম:
বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকদের ভিভিআইপি, ভিআইপি ও সিআইপি এই তিন ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়েছে এবং তাদেরকে নিরাপত্তা ও বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকে রাষ্ট্র। এজন্য প্রশাসনের কাছে একটি রেডবুক আছে। রেডবুক অনুযায়ী ভিভিআইপি হলেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।

রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা হলেন ভিভিআইপি (ভেরি ভেরি ইম্পর্টেন্ট পার্সন)৷ এর পরের ধাপের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বলা হয় ভিআইপি (ভেরি ইম্পর্টেন্ট পার্সন)৷ আর ব্যবসা-বাণিজ্যে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তাদের বলা হয় ‘কমার্সিয়ালি ইম্পর্টেন্ট পার্সন’ (সিআইপি)৷

প্রথম দুই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় বিবেচনায় নির্ধারিত হন। আর সিআইপি ঠিক করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)৷

পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, যেসব ব্যক্তি অবস্থান, দায়িত্ব ও মর্যাদার দিক দিয়ে বিশেষ গুরুত্ব বহন করেন এবং যাদের নিরাপত্তাহানি হলে দেশ ও জাতি গভীর সংকটে পতিত হয় তাদের ভিভিআইপি এবং ভিআইপি বলা হয়। বাংলাদেশের আইন অনুসারে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান ভিভিআইপি মর্যাদা ও নিরাপত্তা ভোগ করেন। তাছাড়া জাতির জনকের পরিবারের সদস্যদের বিশেষ নিরাপত্তা বিধানের আইন আছে।

কারা বিমানবন্দরে ভিভিআইপি ও ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করতে পারবেন। কারা কোন ধরনের নিরাপত্তা ও সুযোগ সুবিধা পাবেন রাষ্ট্রীয়ভাবে তা সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট করা রয়েছে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হলেন ভিভিআইপি। আর ভিআইপি হলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, সংসদ সদস্য, সিনিয়র সচিব, সচিব, তিন বাহিনী প্রধান ও পুলিশের প্রধান। তবে সরকার প্রয়োজন অনুয়ায়ী অন্য যে কাউকে ভিআইপি মর্যাদা দিতে পারেন।

পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত এসপি সুদীপ্ত সরকার এ প্রতিবেদককে জানান, ‘বিধি অনুযায়ী সরকারের এসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রটোকল, নিরাপত্তা, গার্ড, গানম্যান পেয়ে থাকেন।

তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী বলতে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী সবাইকে বোঝায়। বিচারপতি বলতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট দুই বিভাগের বিচারপতিরাই ভিআইপি। আর সচিব বলতে সচিব পদমর্যাদার সবাইকে বোঝায়৷’

বাংলাদেশে পুলিশের দুই বিভাগ থেকে ভিআইপিদের নিরাপত্তা দেয়া হয়। একটি হলো পুলিশের প্রটেকশন টিম। আরেকটি পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ। এছাড়া বিদেশি দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তায় আছে চ্যান্সারি পুলিশ।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর জন্য আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও গার্ড রেজিমেন্ট আছে। রাষ্ট্রপতির জন্য আছে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট। আর প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় আছে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)৷ এরসঙ্গে পুলিশ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার টিমও কাজ করে। পুলিশের সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়নও এই নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত৷

সড়কে ভিভিআইপি এবং ভিআইপি
বাংলাদেশের কোনো সড়কেই কোনো ভিআইপি’র জন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থাপনা থাকার কথা নয়। বিধি অনুযায়ী তাদের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল থাকবে। কিন্তু তাদের চলাচলের জন্য কোনো সড়ক বন্ধ বা অন্য কোনো যানবাহনের চলাচল বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। তারা সড়কে কোনো অগ্রাধিকারও পাবেন না। উলটো পথে চলা বা অন্য গাড়ি সরিয়ে চলাচলের কোনো সুযোগ নেই কোনো ভিআইপির।

কেবল রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের সময় সড়কের একপাশ খালি করে চলাচলের বিধান আছে। ভিভিআইপিদের যাতায়াতের নির্দিষ্ট সড়কটির এক পাশ ফাঁকা করে দেয়া হয়। সেখানে সাধারণ যান চলাচল বন্ধ করা হয়। তাদের চলাচলের ১৫ মিনিট আগে এ সম্পর্কিত তথ্য এসএসএফকে জানায় ট্রাফিক বিভাগ। আর এসএসএফও আগে বিষয়টি জানায় ট্রাফিক বিভাগকে।

‘রেডবুক অনুযায়ী ব্যবস্থা নিই’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম বলেন, ‘নিরাপত্তা প্রটোকলের রেডবুক অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কারো জন্য সময় রাস্তার একপাশ ফাঁকা করে নিরাপত্তা দেয়ার বিধান নেই। আর বিদেশি রাষ্ট্রীয় মেহমানদের বেলায় সরকার কেস টু কেস সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা তা অনুসরণ করি। কোনো বাংলাদেশি ভিআইপি এই সুবিধা পাবেন না৷ তারা সাধারণ নিয়মেই চলাচল করবেন।’


জানা গেছে, সাইরেন বাজিয়ে রাস্তা ফাঁকা করে কোনো ভিআইপির সড়কে চলাচল অনুমোদিত নয়। মন্ত্রী পদমর্যাদার কেউ সড়কে চলাচলের সময় শুধু পুলিশি নিরাপত্তা পান, এর বেশি কিছু নয়।

গতবছর ভিআইপিদের চলাচলের জন্য ঢাকা সড়কে আলাদা সার্ভিস লেন করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল মন্ত্রিসভায়। এই সার্ভিস লেন দিয়ে ভিআইপি ছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ব্যাপক সমালোচনার মুখে তা বাস্তবায়িত হয়নি৷

গানম্যান-বডিগার্ড
ভিআইপিরা তাদের নিরাপত্তার জন্য গানম্যান ও বডিগার্ড পেয়ে থাকেন। তবে থ্রেট বিবেচনা করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এর বাইরেও কোনো ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্য গানম্যান বা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারে। আবার অনুমোদন পেলে কেউ নিজস্ব খরচে গানম্যান বা বডিগার্ডের বিকল্প উপায়ের ব্যবস্থা করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট এবং প্রয়োজনীয় অনুমোদন লাগে। একই বিবেচনায় আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সও দেয়া হয়৷

যেমন নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করে অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের নিরাপত্তার দায়িত্বে মোট ৩৬ জন পুলিশ রয়েছেন। তারা পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেন। তার বাসা, কর্মস্থল সবখানেই নিরাপত্তা দেয়া হয়। তিনি বাইরে গেলেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে। ওই টিমে একজন গানম্যানও আছেন।

পুলিশ কর্মকর্তরা জানান, কেউ গানম্যান চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলে ‘থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট’করা হয়৷ আর এই থ্রেট অ্যাসেসমেন্টের দায়িত্ব পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি)৷

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশেষ শাখার একজন কর্মকর্তা জাফর ইকবালের ওপর সিলেটে হামলার পর এ প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন, ‘আমরা থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান, তাঁর ঝুঁকি কতটুকু, তার ব্যক্তিগত ট্র্যাক রেকর্ড এসব খতিয়ে দেখি। আমাদের তদন্তে যদি মনে হয় তার বাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে, তাহলে আমরা গানম্যান বা পুলিশি নিরাপত্তা দেয়ার সুপারিশ করি। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশ সদরদপ্তরের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়। এই নিরাপত্তার খরচ পুরোটাই সরকার বহন করে। আর প্রয়োজন অনুযায়ী, গানম্যান ছাড়াও ওই ব্যক্তি যখন চলাফেরা করেন, তখনো আলাদা নিরাপত্তা দেয়া হয়।’

প্রাইভেট গানম্যানের বিধান নেই
ওই কর্মকর্তা তখন আরো জানান, ‘প্রাইভেটভাবে গানম্যান রাখার বিধান নেই। তবে কেউ যদি সন্তুষ্ট করতে পারেন, তাকে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়। আর ওই আগ্নেয়াস্ত্র পরিচালনা বা বহন করা ব্যক্তিদেরও অনুমোদন দেয়া হয়। তখন ধনী ব্যক্তিরা নিজ খরচে নিজেদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারেন৷’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার জন্য গানম্যান সাদা পোশাকে দেয়া হয়, আবার প্রটেকশন ফোর্স থেকে পুলিশও দেয়া হয়। আর এই কাজে যাদের দেয়া হয়, তারা কনস্টেবল থেকে সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) পর্যন্ত হতে পারেন। তাদের আগ্নেয়াস্ত্র পুলিশ বাহিনী থেকেই সরবরাহ করা হয়। গানম্যানদের ৩০ দিনের একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। আবেদন করলেই গানম্যান পাওয়া যাবে না। সরকার যদি মনে করে কারুর নিরাপত্তা বিধান করা জরুরি, তখন নিজ উদ্যোগেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ছাড়াও আরো কয়েকটি সংস্থা কাজ করে৷ আমরা সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখি। আর বডিগার্ড ও গানম্যানের কারুর প্রয়োজন হলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। কারুর নিরাপত্তার প্রয়োজন হলেও আমরা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেই। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে বেশি কোনো তথ্য দেয়ার সুযোগ নেই।’

ভিআইপি নিরাপত্তায় কত পুলিশ
বাংলাদেশে ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর একটি অংশকে নিয়োজিত থাকতে হয়। ভিভিআইপি এবং ভিআইপিদের চলাচলের সময়ও তাদের নিরাপত্তা দেখতে হয়। তারা ঢাকার বাইরে গেলেও তাদের সঙ্গে বিধি অনুযায়ী নিরাপত্তা টিম থাকে।

পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দুই হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্য ভিআইপিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন। আর ২২ হাজারের মতো পুলিশ সদস্য রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।

ভিআইপিদের ঢাকার বাইরে মুভমেন্টের কারণে গড়ে প্রতিদিন ১৫টি গাড়ি এবং ৯০ জন ফোর্সকে কাজ করতে হয়। পুলিশের সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়নে ১৪শ’র মতো সদস্য আছে।

২০১৭ সালে ভিআইপিদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশে ‘গার্ড অ্যান্ড প্রটেকশন পুলিশ’নামে বিশেষ ইউনিট করার প্রস্তাব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে। ওই প্রস্তাবে তখন তিন হাজারেরও বেশি সদস্য নিয়ে এ ইউনিট গঠনের কথা বলা হয়েছিল। পুলিশের সদরদপ্তর বর্তমানে ওই ইউনিট গঠন নিয়ে কাজ করছে।

সূত্র: ডয়চে ভেলে

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: