বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১৭ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
বিভাগীর কমিশনার জামাল উদ্দীনের উদ্ভাবন সূচনা করেছে নতুন দিগন্তের

বিভাগীর কমিশনার জামাল উদ্দীনের উদ্ভাবন সূচনা করেছে নতুন দিগন্তের

আমার সুরমা ডটকমসিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. জামাল উদ্দীন আহমেদ উন্নয়নের নতুন দিগন্তের নব সূচনা করেছেন তার উদ্ভাবিত সিডিআই (সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প) কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে। মাটি ও মানুষের পাশাপাশি থেকে তিক্ত ও মধুর সম্পর্কের অভিজ্ঞতা তাকে অনুপ্রাণিত করেছে মানুষের উন্নয়নের কাজ করার একটি উৎকৃষ্ট পন্থা বের করে নিতে। ক্ষুধা, দারিদ্রতা, জনপীড়িত অপুষ্টি ও কুসংস্কারের কালো হাতকে ভেঙ্গেদিতে তার চিন্তাশীল উদ্ভাবন-সিডিআই। আপামর জনগোষ্টির অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ একটি পাথেয় তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রত্যেক সরকারে বিশাল কর্মকর্তা/কর্মচারীর বাহিনীর হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করেছে। নগর জীবনের নানা সমস্যার জটিলতা, গ্রামীণ জীবনের কুপমুন্ডকতার ও সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তির চির আলোকবর্তিকা হলো তার উদ্ভাবিত সিডিআই।

সিলেট বিভাগের সরকারি কাজ করতে গিয়ে জামাল উদ্দিন পরিচিত হয়েছেন, ভূমিপুত্র শব্দকর, চা-জনগোষ্টি, হাওর জনগোষ্টি ও সমতলের দারিদ্র জনগোষ্টিসহ এই অঞ্চলের সকল মানুষের সাথে। যারা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের ধারধারে না, খোঁজখবর রাখার প্রয়োজন যাদের নেই, সেই ভিক্ষাজীবি, দিনমজুর, ক্ষেতমজুর তাদের জীবনমান তাকে ভাবিয়ে তুলেছে।

সমাজের সকল স্তরের মানুষের আমুল ভিত্তিমুল পবিবর্তনে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সেবা  ঘরে ঘরে পৌছে দিতে তিনি এমন একটি সম্মলিত উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ পদ্ধতির উদ্ভাবন করলেন যা থেকে কোন নিদির্ষ্ট এলাকার কোন লোকও তার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়।

সিডিআই হলো অনাহার অশিক্ষা কুশিক্ষা ও চরম দারিদ্রের চরম অভিশাপ থেকে মানব মুক্তির একটি কল্যাণকর পথ। সেসব জনগোষ্টি ইচ্ছায়/অনিচ্ছায়/একান্ত নিরূপায় হয়ে দারিদ্রের স্থিতাবস্থার সৃষ্টি করছে। তিনি সেগুলোর মর্মমূলে দৃঢ় আঘাত করেছেন সিডিআই এর সম্মিলিত কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে।

এটি চালু হলে কাউকে কোন অশুভ অবস্থায়/ব্যবস্থায় দাবিয়ে রাখা সম্ভব নয়। যে শিশু বিদ্যালয়ে যায় না, অপুষ্টিতে ভোগে, প্রতিষেধক নেয়নি, অথবা যে মহিলা চির পতিত, বঞ্চিত রয়েছেন তাকে খোজেঁ বের করে আনা হবে। যারা শতাব্দী পর শতাব্দী ধরে পল্লীগ্রামে বা শহরের কোন বস্তিতে কাঠিয়েছেন এবং এ দারিদ্রের অবস্থায় সাথে তার একটি বোঝাপড়া হয়ে গেছে। কিছু লোক যারা একান্ত নিরুপায় হয়ে অশিক্ষা-কুশিক্ষা আর দারিদ্রকে মেনেও নিয়েছেন এবং এটা হয়ে গেছে তাদের স্বাভাবিকতা। তাদের সবার মধ্যে একটি কর্মচাঞ্চল্যতা ও জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে – সিডিআই এর মাধ্যমে।

এটি সারা বাংলায় বাস্তবায়ন করা হলে জেগে উঠবে পতিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত ও সর্বহারা জনমানব। যুগযুগ ধরে অদৃষ্টবাদিতাকে বিধিলিপি মর্মে যারা বিনা প্রতিবাদে মেনে নিয়েছেন সমাজের চরম অবস্থাকে তাদের জাগ্রত করবে সিডিআই এর বিশাল কর্মীবাহিনী। সিডিআই এর বিশাল সরকারি কর্মী বাহিনী হবেন উন্নয়ন ও গণজাগরণের প্রতীক।

বিগত একটি বিভাগীয় সভায় রির্পোট পর্যালোচনায় বিভাগীয় কমিশনার জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেছিলেন- যে পিতা তার ছোট্ট মেয়ের মুখে ঘা নিয়ে যন্ত্রণায় কাতর শিশুকে প্রচন্ত শীতের রাতে ঘুমের বিছানা থেকে পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেয়, এটি কোন স্বাভাবিক কার্য নয়।কানাইঘাটের এক মা তার মেয়েকে পুকুরে পানিতে ডুবিয়ে ফেলে হত্যা করে। এছাড়া সুনামগঞ্জ দুটি সন্তানকে স্মামী স্ত্রীর ঝগড়া হতে মাছ ধারার নামে হাওরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেন। এ সমস্ত ঘাটনা স্যারের চিরায়ত মহামানবের হৃদয় গোমড়ে কেঁদে উঠেছিল। তিনি বলেন, যে মাতা পিতা নিজের জীবন দিয়ে সন্তানের রক্ষা করেন তারা এমন আচরণ করতে পারেন না। কতটুকু সামাজিক চরম নিরাশা, হতাশা ও অস্থিরতার মধ্যে থাকলে তারা মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়ে এমন কাজ করতে পারেন। তাই তাদের সামাজিক কাউসিলিং নিশ্চিত করতে হবে মর্মে তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর সিডিআই-তে কাউসিলিং ইউনিট সংযুক্ত করতেও ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। যাতে গ্রামেগঞ্জের সকল আশাহীন নিরাশাগ্রস্থ, চির হতভাগ্যের দলকে সমান্য ব্যর্থতায় বড় অন্যায় করে বসেন তাদের সমস্যা দুর করে তুলে আনা যায়। তিনি সিডিআই পরিকল্পনার মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন মানুষের স্বাধিকার ও সক্ষমতা। দারিদ্র বিমোচনে চরম লক্ষই হচ্ছে মানুষের স্বাক্ষমতা সৃষ্টি করা।

সিডিআই হচ্ছে মানুষ কী করতে পারছে, কী করতে পারছে না তা চিহ্নিত করে প্রত্যক্ষ ও বাস্তবসম্মত রূপায়ন।স্যারে মনের কথা –প্রায়াই বলতেন- আমি তো নির্বাহী নই। আপনারা নির্বাহী কর্মকর্তা। তাই জনগণের সাথে একত্রে কাজ করার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে আপনাদের।সিডিআই হয়ত তারই ফলশ্রুতি। তিনি সরকারী কার্যক্রম সুষ্ঠু পরিচালনার স্বার্থে সিলেট বিভাগের গ্রামেগঞ্জে দাপিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন অকাতরে ।তিনি দেখেছেন কিভাবে দারিদ্রের দৃষ্ট চক্রে অষ্টে পৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে এগোচেছ সাধারণ মানুষ। তিনি দেখেছেন-জাতপাতের বেড়া জালে আটকা পড়া সর্বগ্রাসী দারিদ্রের অদৃশ্য বন্দনে বঞ্চিত জনগোষ্টিকে। তার ফলশ্রুতিতে হয়ত জামাল উদ্দীন আহমদের আন্তরিক উদ্ভাবন-সিডিআই পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন। তিনি প্রায়ই সভায় বলেছেন-যে আমরা সরকারি লোক মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখতে পড়ায় পাড়ায়, ঘরে ঘরে কখেনো যাই না।কিন্তু এজিও কর্মীরা তাই করেন।

একনজরে সিডিআই: সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগ বা Co-ordinated Development Initiative (CDI), এটিকে উন্নয়নের সিলেট মডেলও বলা যেতে পারে। এটি সিলেট বিভাগীয় কমিশনার অফিস এর একটি স্বপ্ন প্রসূত উদ্ভাবনী আইডিয়া। আমরা স্বপ্ন দেখছি সিলেট বিভাগের প্রতিটি ঘরে শিক্ষাহীন, টিকাবিহীন, অপুষ্টির শিকার কোন শিশু এবং হতদরিদ্র থাকবে না। গর্ভবতী নারীর হাতে পৌঁছাতে হবে আয়রন, ফলিক এসিড, ভিটামিন- A ক্যাপসুল, সাথে টিটি টিকা। পরিকল্পিত পরিবার গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সেবা পৌঁছে যাবে প্রতিটি ঘরের দরজায়। শতভাগ পরিবার ব্যবহার করবে স্যানেটারি ল্যাট্রিন। সরকারি সকল দপ্তর, জনপ্রতিনিধি আর স্কাউটসহ সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণে সিলেটের প্রতিটি ঘরে গিয়ে নিশ্চিত করা হবে এসব সরকারি সেবা।

কর্মপরিকল্পনা: সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগের পাঁচটি Component, এগুলো হলো-Education, Immunization, Contraception, Nutrition & Sanitation. মডেলটি এরকম যে একটি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডকে ৩ বা ততোধিক ভাগে ভাগ করা হবে। যে গুলোকে আমরা বলি Work Section ।  ৮ জনের একটি টিম -১. সরকারি দপ্তরের একজন কর্মকর্তা ২. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ৩. একজন স্বাস্থ্য সহকারি ৪. একজন পরিবার কল্যাণ সহকারি ৫. সরকারি দপ্তরের একজন অফিস সহকারি ৬. একজন Boy Scout ৭. একজন Girls Scout ৮. একজন স্থানীয় যুবক (স্বেচ্ছাসেবক)। প্রতিটি Work Section এর প্রতিটি ঘরের দরজায় গিয়ে সে ঘরের চাহিদা নিরূপণ (Need Assessment) করবে। সেটিকে সনাক্তকরণ পর্ব বলা যেতে পারে। Need Assessment হয়ে গেলে পরিবারের সদস্যগণের চাহিদা অনুযায়ী উক্ত টিম তাদের প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করবে। যেমন- বিদ্যালয়বিমুখ শিশু থাকলে তাকে বিদ্যালয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করবে। টিকাবিহীন থাকলে সম্ভব ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক টিকা দেবে নাহয় টিকা নেওয়ার জন্য কর্মসূচি জানিয়ে দেবে। প্রয়োজনে টিটেনাস টিকা কিংবা আয়রন ও ফলিক এসিড সরবরাহ করবে।পুষ্টিহীন শিশু সনাক্ত করে পুষ্টি কার্যক্রমের ছাতার নিচে নিয়ে আসা হবে। দুস্থ পরিবারকে স্যানেটারি ল্যাট্রিন সরবরাহ করা হবে। সকল পরিবার নিজ খরচে স্যানেটারি ল্যাট্রিন স্থাপনের ব্যবস্থা করবে। এছাড়া টিমের সদস্যরা চাহিদা থাকা সত্ত্বেও যারা ভাতা বঞ্চিত বিধবা, বয়স্ক/দুস্থ, প্রতিবন্ধী তাদের চিহ্নিত করে রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত করবে। এতগুলো কাজ হবে ঘরের দরজায় এবং তাও একদিনে। সবশেষে টিমের সদস্যরা বাড়িতে একটি ফলজ গাছের চারা রোপণ করে উক্ত বাড়ি থেকে বিদায় নিবে। তারপর চলবে Follow up action । সমস্যা এবং পরিবার চিহ্নিত হবার পর পরবর্তী সেবা প্রদান নিশ্চিত করা হবে নিয়মিত পরিবীক্ষণের মাধ্যমে।

উদ্দেশ্য: স্বল্পসময়ে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের সমগ্র জনগোষ্ঠিকে তাদের জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে একই সাথে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, পুষ্টি, নারী উন্নয়ন ইত্যাদি সেবার আওতায় নিয়ে আসা। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে সেবা প্রদানের মানসিকতা গড়ে তোলা। বিভিন্ন বিভগীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ একে অপরের সেবা সম্পর্কে অবহিত হওয়া। সকল শ্রেণী পেশার মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে লাগসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ। সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে কাউসিলিং প্রদান।
লক্ষ্য: সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট এলাকার জনগণকে স্বল্পসময়ে সমন্বিত সেবা প্রদান এবং Follow up action এর মাধ্যমে লাগসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ। উপকারভোগী: একটি নির্দিষ্ট দিনে কর্ম এলাকার সকল জনগণ।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: