শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১০:৫৮ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩

বৃষ্টি নামতেই বাঁধে ফাটল

মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার: পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরাদ্দ দেয়া হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে প্রথম থেকেই দুর্নীতির অভিযোগ আসছে পিআইসিদের বিরুদ্ধে। সময়মত কাজ শেষ না হওয়া হওয়া, কাজের মান কম ইত্যাদি বিষয়ে এসব অভিযোগ করা হয় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অফিসে। গত বছর হাওর ডুবে যাওয়ার কারণে বেরিবাঁধের কাজে অনিয়মসহ নানা অভিযোগ ওঠে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের সাথে যুক্ত হয় সংশ্লিষ্ট বাঁধ কমিটি বা পিআইসিগুলো। তারপর ব্যাপক তদন্তে আসল রহস্য বেরিয়ে আসলে সরকার দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যায়। এ অনিয়মের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের বেরি বাঁধ ভেঙ্গে হাওর তলিয়ে যাওয়ার কারণে এ বছর প্রথম থেকেই কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকার, সাধারণ মানুষ, কৃষক, সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রথম থেকেই পিআইসি কমিটি ও বাঁধ নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতন হয়ে সোচ্ছার ভূমিকা পালন করে। তারপরও যে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি ও কাজে গাফিলতি হয়নি, তা হলফ করে কেউ বলতে পারবে না। তবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, গত বছরের চেয়ে এ বছর বরাদ্দ এসেছে বেশি, কাজও হয়েছে বেশি এবং সাথে দুর্নীতিও বেশি হয়েছে। এ বছর দিরাই উপজেলার বাঁধের কাজের মান নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন উঠেছে। ফলে প্রশাসন বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারী করেছে। তারপরও যে বাঁধে সঠিক নিয়ম মানা হয়নি, তা ইতিমধ্যেই প্রকাশ হচ্ছে। গত কয়েকদিনের সামান্য বৃষ্টিতেই বাঁধের মাটিতে ফাটল ধরা শুরু হয়েছে। উপজেলার বরাম হাওরের হাজার হাজার একর জমির একমাত্র বোরো ফসল রক্ষা ও তোলা হয়ে থাকে এসব বাঁধের মধ্যদিয়েই।
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের বোয়ালিয়া বাঁধ সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোর অন্যতম এ বাঁধে ইতিমধ্যেই ফাটল দেখা দিয়েছে। তাছাড়া বাঁধের উপরি অংশে ১৪ ফুট প্রস্থ হওয়ার কথা থাকলেও তা সঠিক মাপে হয়নি। ‘জেলা কমিটিতে ভুতাপেক্ষ অনুমোদনের জন্য বাঁধের প্রাক্কলন সংক্রান্ত তথ্য’ শীটে দেখা গেছে, ৭নং পিআইসি উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের আমিরপুর গ্রামের আব্দুর রউফ মিয়ার ছেলে ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য রাশেদ মিয়া। তিনি আমিরপুর আছকির মিয়ার বাড়ি হতে বোয়ালিয়া রেগুলেটর হয়ে আহমদ মিয়ার জমি পর্যন্ত এর মধ্যে ডুবন্ত বাঁধের ভাঙ্গা বন্ধকরণ ও মেরামত সংক্রান্ত প্রকল্প ২০১৭/১৮। তার বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ৮ লাখ ২৭ হাজার ১৯৬ টাকা ২৯ পয়সা। একই পার্শ্বের বাঁধের কাজ পেয়েছেন ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার ইউনিয়নের চন্দপুর গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে মোঃ মঞ্জুরুল হক। তিনি আলী আহমেদের জমি হতে আমিরপুর মকসদ আলীর বাড়ি পর্যন্ত ডুবন্ত বাঁধেল ভাঙ্গা বন্ধকরণ কাজটি পেয়েছেন। তার বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ১০ লাখ ৩৮ হাজার ২৪৬ টাকা ৫৬ পয়সা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পুরাতন একটি মাটি কাটা সড়কে সামান্য মাটি ফেলে দিয়ে পাউবোর বেরি বাঁধ নির্মাণের অপচেষ্টা চলছে। তাছাড়া উচ্চতা কম, ড্রেসিং নেই, ঠিকমতো দুরমুজ দেয়া হয়নি বলে দেখা গেছে। এ নিয়ে আশপাশের অনেকের সাথে কথা বলে স্থানীয় মেম্বারের নির্যাতনের ভয়ে কাজে অনিয়মের কথা তুলে ধরলেও নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তারা আরো জানান, কোন অন্যায় ও অনিয়মের কথা বলতে গেলে জনপ্রতিনিধিরা নানাভাবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করে থাকে, আমাদেরকে অসহায় অবস্থায় রাখা হচ্ছে। বাঁধ নির্মাণ নিয়েও অনেকের সাথে ঝামেলা হয়েছে। ফলে তাদের নির্যাতনের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি।
ওয়ার্ড মেম্বার রাশেদ মিয়ার কাছে বাঁধে ফাটলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাটি কাটার কাজ সঠিকভাবে হয়েছে, সঠিকভাবে দুরমুজও দেয়া হয়েছে। এখন যেখানে ফাটল ধরবে, সেখানে লোক ঠিক করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বাঁধের প্রস্থ কোথাও ১২/১৩ ফুট, মেইন ভাঙ্গায় ১৮/১৯ ফুট করা হয়েছে। আর উচ্চতা মেইন ভাঙ্গায় ১৮ ফুট, আরেক ভাঙ্গায় ৮ ফুট কোথাও ৩/৪ ফুট করা হয়েছে।
আরেক পিআইসি ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ মঞ্জুরুল হক বলেন, তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া নিয়ম অনুযায়ি বাঁধের কাজ করেছেন। তাদের দেয়া উচ্চতা অনুযায়ি ওয়াটার লেভেলে মাটি ফেলেছেন। তাছাড়া প্রস্থ হয়েছে ১২ ফুট বলে দাবি করলেও সঠিক মাপে তা পাওয়া যায়নি। তিনি আরো জানান, মাটি কাটার সময় ৬ ইঞ্চি উচ্চতা করার পর পরই দুরমুজ মেরেছেন। অথচ এখন সামান্য বৃষ্টিতেই বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, বৃষ্টির পানি পড়ে বাঁধে ফাটল ধরতেই পারে, তবে আমি লোক দিয়ে তা ঠিক করে দিচ্ছি।
বোয়ালিয়া বাঁধে ফাটলের বিষয়ে জানতে চাইলে তাড়ল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আমি শুনেছি, এ খবর পাওয়ার পরই এসওকে গতকাল (রোববার) বাঁধে পাঠাইছি, এখন পর্যন্ত সে কোন রিপোর্ট আমাকে জানায় নি। তিনি স্বীকার করে বলেন, আমি বাঁধে সরাসরি যাইনি।
এ ব্যাপারে দিরাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পওর) শাখার উপ-সহকারি প্রকৌশলী রিপন আলী বলেন, বোয়ালিয়া বাঁধে ফাটলের খবর আমি পেয়েছি, আগামিকাল (সোমবার) দেখতে যাব। ফাটল অংশে মেরামতের কাজ চলবে। একজন পিআইসি ৬ ইঞ্চি পর পর দুরমুজ মেরেছেন বলে দাবি করেন-এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ রকম কোন বিধান নেই। সম্ভবত ড্রাম ট্রাকে মাটি ফেলার কারণেই তা বলেছে।
দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন ইকবাল বলেন, বৃষ্টির পানিতে বোয়ালিয়া বাঁধে ফাটলের খবর কেউ আমাকে জানায় নি, আমি স্থানীয় এসওর মাধ্যমে খবর নিচ্ছি। তিনি আরো জানান, সামান্য বৃষ্টির পানিতেই বাঁধ ভেঙ্গে যাবে, এ রকম তো হওয়ার কথা নয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: