শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
রমজানে ফাযিল পরীক্ষা কেন এবং কার স্বার্থে?

রমজানে ফাযিল পরীক্ষা কেন এবং কার স্বার্থে?

NYX

মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার
সারাবছর ঘুরে আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস মাহে রমজান। এ মাসে অনেক নিয়মের পরিবর্তন করে দেয়া হয়, যাতে লোকজন স্বাচ্ছন্দবোধের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধিমূলক কাজ করে মাওলায়ে হাক্বিকির নৈকট্য লাভ করতে পারে। অফিস-আদালত থেকে শুরু করে সকল প্রকার কাজের নিয়ম ও সময় পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, আগামী ১৪ জুন ২০১৫ ইংরেজি মোতাবেক ২৫ শাবান ১৪৩৬ হিজরি থেকে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের অধীন বাংলাদেশের সকল আলিয়া মাদরাসা সমূহের ফাযিল øাতক ১ম বর্ষ, ২য় বর্ষ ও ৩য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হবে ১৯ আগস্ট ২০১৫ ইংরেজি। এর মধ্যে রয়েছে রহমত, বরকত ও নাজাতে পরিপূর্ণ মাস মাহে রমজান। ৩০টি দিন ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী মুসলমানগণ দিনের বেলায় রোজা বা সিয়াম সাধনা করবেন। অথচ এই মাসে রয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বোর্ডের ৩টি ক্লাসের ফাইনাল পরীক্ষা। কেন এবং কার স্বার্থে এই পবিত্র মাসে ইবাদত বন্দেগির সুযোগ হাতছাড়া করে দিয়ে পরীক্ষার মতো জটিল এবং মেধার অবমূল্যায়ন করতে পরীক্ষার আয়োজন-তা পরীক্ষার্থীসহ তাদের সচেতন অভিভাবকদের ভাবিয়ে তুলছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কী আদৌ এ নিয়ে ভেবে দেখেছেন যে, এর কারণে হাজার হাজার পরীক্ষার্থীর জীবনে কী অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
দেশে ইসলামি শিক্ষায় উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার একমাত্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহে অবস্থিত ‘ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়’। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাজার হাজার শিক্ষার্থী জ্ঞান অর্জন করছে। এই শিক্ষার্থীর তালিকায় যেমনি রয়েছেন স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা মেধাবীরা, তেমনি রয়েছেন হাজার হাজার মাদরাসা শিক্ষার্থীও। কাজেই এই কথা বলা যায় যে, শিক্ষা গ্রহণ সবার জন্য সমান সুযোগ থাকার কথা থাকলেও আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ভিন্নতার কারণে অনেক নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে মাদরাসার শিক্ষার্থীদেরকে সেই সুযোগ দেয়া হচ্ছেনা। অজ্ঞাত কারণেই বছরের পর বছর আন্দোলন করার পরও কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়নি এই দ্বিমুখি সিদ্ধান্তের। ফলে যেই উদ্দেশ্য ও আশা নিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে আসে শিক্ষার্থীরা, তাদের সেই আশা অধরাই থেকে যাচ্ছে।
‘ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়’-এ মুসলিম শিক্ষার্থীর পাশপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্ভী শিক্ষার্থীরাও জ্ঞানার্জনের জন্য এখানে এসে ভর্তি হয়ে থাকেন। তবে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কারণে মুসলিম শিক্ষার্থী বিশেষ করে ক্বওমী ও আলিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী বেশি। এদের মধ্যে আবার অনেকেই পবিত্র আল ক্বোরআনের হাফেজ, ক্বারী ও মুফাসিসর। তাদের অনেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে ইসলামি জ্ঞান ও শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে জাতিকে পথভ্রষ্টতার অন্ধকার পথ থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে থাকেন। সেই কারণে আল ক্বোরআনের হাফেজগণ পবিত্র রমজান মাসে খতমে তারাবিহের নামাজ পড়ান, ক্বারীগণ আল ক্বোরআনের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত শিক্ষা দিয়ে থাকেন এবং মুফাসিসরগণ সারা মাস পবিত্র ক্বোরআন শরিফের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে থাকেন। অথচ এই মাসে পরীক্ষা হওয়ার কারণে অনেক হাফেজে ক্বোরআন, ক্বারী ও মুফাসিসরকে তাদের অত্যন্ত মূল্যবান খতমে তারাবিহ, ক্বিরাআত শিক্ষা প্রদান ও আল ক্বোরআনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বন্ধ রেখে পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে এবং পরীক্ষা দিতে হবে।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, দেশের অন্যান্য অনেক পরীক্ষা রমজান মাসে নেয়া হয়না। কারণ, সারা বছরেই ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস-পরীক্ষার কারণেই তারা ব্যস্ত সময় পার করে থাকেন। রমজান মাসে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন ক্লাস করেই আবার প্রতিষ্ঠনটি বন্ধ দেয়া হয়। যাতে শিক্ষার্থীরা এই পূণ্যময়ী মাসে একটু করে হলেও পূণ্য অর্জন করতে পারে। কিন্তু এ মাসে পরীক্ষার কারণে অনেক কাজেই নিয়ম ভঙ্গ হবে এবং আমলের মধ্যে কিছুটা হলেও বিচ্যুতি ঘটবে। এর দায়ভার কে নেবে? যে মাসে একটি ক্বোরআন খতম করলে অন্য মাসের চেয়ে ৭০ গুণ সওয়াব বেশি হয়, সেই রমজান মাসে পরীক্ষা দিয়ে তা থেকে বঞ্চিত করা হলো।
প্রতিটি কাজের জন্য একটি ভালো সময় সাধারণত নির্ধারণ করা হয়। আর তা যদি হয় জাতীয় কোন ইস্যু, তবে এক্ষেত্রে দেশি ও বিদেশি ক্যালেণ্ডার দেখে ও যাচাই-বাছাই করেই কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। কিন্তু ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত এই ফাযিল পরীক্ষার ক্ষেত্রে সম্ভবত সেই নিয়ম মানা হয়নি। কেন এবং কার স্বার্থে ও কাকে খুশি করতে এই রমজান মাসে ফাযিল পরীক্ষা-সচেতন শিক্ষার্থীসহ অভিভাকদের মধ্যে এই আলোচনা সর্বত্র। মুসলিম দেশে ইসলামি শিক্ষার গ্রহণের পরিবেশ রক্ষার স্বার্থেই ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তাদের এই পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন করতে হবে বলে মনে করেন সচেতন জনগণ। ইতিমধ্যেই এই পরীক্ষার সময় পেছানোর দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। আশা করবো, কাউকে খুশি না করে বৃহত্তর স্বার্থেই ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফাযিল পরীক্ষা পেছাবেন এবং রহমত, বরকত ও নাজাতের মাসে মানুষকে আত্মশুদ্ধি করার সুন্দর পরিবেশ করে দেবেন।

লেখক ঃ সাংবাদিক ও কলাম লেখক

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: