শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:২২ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
রহস্যময় গুহাশ্বাসরুদ্ধকর অভিযান শেষ, সবাইকে নিরাপদে উদ্ধার

রহস্যময় গুহাশ্বাসরুদ্ধকর অভিযান শেষ, সবাইকে নিরাপদে উদ্ধার

আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:

থাইল্যান্ডের চিয়াং রাইপ্রদেশের রহস্যময় গুহায় আটকে পড়া ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে বের করে এনেছেন উদ্ধারকর্মীরা। ১৮ দিন ধরে সেই অন্ধকার পানি ভর্তি গুহায় তারা আটকে ছিল। তাদের উদ্ধারে অত্যন্ত সুদক্ষ ১৮ জন ডুবুরি তিন দিনের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চালিয়ে আজ মঙ্গলবার (১০ জুলাই) তাদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

সংশ্লিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ তথ্যের সত্যতা জানিয়েছে। এর আগে সকালের দিকে তৃতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযানে নামে ডুবুরিরা।

উদ্ধারের সময় খবর আসে ভেতরে থাকা চার কিশোর ও তাদের ফুটবল কোচ ভেতরে সুস্থ আছেন। এছাড়া তারা বন্যায় ভেসে যাওয়া গুহাটির সংকীর্ণ পথ দিয়ে ডুবুরির সঙ্গে বের হয়ে আসতে প্রস্তুত রয়েছেন।

এর আগে রবিবার ও সোমবার চারজন করে আটজন কিশোর ফুটবলারকে উদ্ধার করা হয়। আজ মঙ্গলবার অভিযানের তৃতীয় দিনে এসে বাকি চার ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধার করা হলো।

বিশ্বব্যাপী সবার আলোচনায় ছিল রহস্যময় সেই গুহাটি। উদ্ধার হওয়ার পর কেমন আছে তারা? এ প্রশ্নও ছিল সবার মনে।

সোমবার সন্ধ্যায় চারজনকে গুহা থেকে বের করে আনার পর তাদের স্ট্রেচারে করে পাশের চিয়াং রায়ে শহরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে রবিবার উদ্ধার করা হয় আরো চার কিশোরকে। তাদের সবাইকে আরও অন্তত সাত দিন হাসপাতালে আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এরইমধ্যে যে আট কিশোরকে উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের কাউকেই জনসমক্ষে আনা হয়নি।

থাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উদ্ধারকারী কিশোররা জাউ ভাত খেতে পারছে। তারা মাংস খেতে চাইলেও হজমে সমস্যা হতে পারে এমন আশঙ্কায় তাদের সেটা দেয়া হচ্ছে না। কেননা তারা প্রত্যেকেই গত ১০ দিন ধরে না খেয়ে ছিল।

এদিকে আজ সকালে দেশটির স্থায়ী স্বাস্থ্য সচিব জেসাদা চোকেদাম্রংসুক জানান, উদ্ধার হওয়া আট কিশোরের স্বাস্থ্য ভালো এবং তারা ক্ষুধার্ত। তাদের কারও জ্বর নেই। তাদের চোখের দৃষ্টিতে কোনও সমস্যা নেই। রবিবার উদ্ধার হওয়া প্রথম চার জন দাঁড়াতে পারে এবং বিছানার চারপাশে হাঁটতে পারে। কিশোরদের স্যালাইন ও জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয়েছে। দুই কিশোরের এক্স-রেতে অস্বাভাবিকতা ধরা পড়েছে। সংক্রমণ বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। প্রথম চার জনের বয়স ১৪-১৬ বছর, দ্বিতীয় চার জনের বয়স ১২-১৪ বছর।

তিনি আরও জানান, সোমবার রাতে প্রথম দিনে উদ্ধার হওয়া চার কিশোরের সঙ্গে তাদের পরিবারের সাক্ষাৎ হয়েছে। যদিও তা কাঁচের দরজার মধ্য দিয়ে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন আসতে আরও ২/৩ দিন লাগতে পারে। যদি কোনও সংক্রমণের চিহ্ন পাওয়া না যায় তাহলে পরিবারকে হাসপাতালে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য সচিব জানান, প্রাথমিক রক্ত পরীক্ষায় সব কিশোরের শরীরে সংক্রমণের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হাসপাতালে তাদের এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।

‘সব সংকটের মধ্যেও সাফল্য’

থাই নৌবাহিনীর এক সদস্য তার ফেসবুকে জানান, পুরো কাজ চলছে ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে। অ্যাম্বুলেন্সগুলো যখন গুহার প্রবেশদ্বার থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছিল। তখন গাড়ির হেডলাইটের ঝলকানিতে দেখতে পেলাম আরেকটি ছেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এভাবে প্রত্যেকের মধ্যে আশা জেগেছে।

এই ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানটি খুবই সূক্ষ্মতা ও সাবধানতার সঙ্গে পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু এই উদ্ধার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন একদিকে যেমন ছিল সাহসী, বিপজ্জনক তেমনি ভীষণ জটিল।

তবে সব সংকটের মধ্যেও প্রতিটি পর্যায়ে সাফল্য এসেছে। এই মানসিক স্বস্তি ধীরে ধীরে সবাইকে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে থাকা উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তা থেকে পরিত্রাণ দিয়েছে।

কারা ওই কিশোর? তাদের কোচই বা কে?

ওই ফুটবল দলের সদস্য এবং তাদের কোচের কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ক্যাপ্টেন ডুগানপেট প্রমটেপ- বয়স ১৩ বছর, তিনি দলের অত্যন্ত সম্মানিত সদস্য যিনি দলকে উজ্জীবিত রাখতে কাজ করেন। তিনি থাইল্যান্ডের বেশ কয়েকটি পেশাদার ক্লাব থেকে স্কাউটিংয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

আদুল স্যাম-অন- ১৪ বছর বয়স, মিয়ানমার বংশোদ্ভূত, কয়েকটি ভাষায় কথা বলতে পারেন এবং দলের একমাত্র সদস্য যিনি ব্রিটিশ ডুরিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। যারা সর্বপ্রথম তাদের সন্ধান পায়।

পিরাপাত সোমপিয়াংজাই- বয়স ১৭ বছর, যেদিন তারা গুহায় আটকে পড়ে অর্থাৎ ২৩ জুন তার জন্মদিন ছিল। তার জন্মদিন উদযাপনের জন্য সবাই যে খাবারগুলো এনেছিল, সেগুলোই তাদের এতদিন টিকে থাকতে সাহায্য করেছে।

একাপোল চান্টাওং- বয়স ২৫ বছর, দলের সহযোগী কোচ, উদ্ধারকারীদের মতে তিনি সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় আছেন। কারণ তিনি বার বার খাবার খেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং তার পরিবর্তে সেগুলো ওই কিশোরদের খেতে বলেছেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ জুন ওই গুহার ভেতর ঢোকার পর ভারী বর্ষণের কারণে ভেতরে আটকা পড়ে ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচ।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: