শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:৩২ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩

রামদা এলাকায় দ্বীনের হাওয়া: নেপথ্যে একটি জামেয়া

আমার সুরমা ডটকম:

জগদ্বিখ্যাত দ্বীনি প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম দেওবন্দের নীতি ও আদর্শের উপর গঠিত একটি ক্বাসিমী বাগান হলো “ঢাকাউত্তর মুহাম্মাদপুর জামিয়া দ্বীনিয়া আসআদুল উলূম রামধা”। প্রতিষ্ঠানটি সিলেট জেলার অন্তর্গত বিয়ানীবাজার উপজেলাধীন রামধাবাজারের পাশে অবস্থিত। এটি সর্বপ্রথম গড়ে ওঠে একটি দোকানকোঠাকে কেন্দ্র করে। সময়ের ব্যবধানে মরহুম মুহতামিম সাহেব রহ.-সহ উলামায়ে কেরামের ঘামঝরা প্রচেষ্টায়, এলাকাবাসীর একান্ত সমর্থন ও সার্বিক সহযোগিতায় আজ সেটিই একটি টাইটেল মাদ্রাসা। দ্বীনদরদী মহৎপ্রাণ কিছু মনীষীর হাত ধরে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠলেও সোটিই আজ আপন আলো ছড়িয়ে গোটা এলাকার প্রতিটি মানুষকে আলোকিত করছে। দ্বীনী সমস্যার সমাধান খোঁজতে এলাকার মানুষকে আর দূর-দূরান্তে ছুটতে হয় না। তাঁরা তাঁদের এলাকার মাদ্রাসা থেকেই সমাধান পেয়ে যায়।

এলাকার অসংখ্য ছেলে-মেয়ে জামিয়ায় লেখাপড়া করছে। জামিয়ার আসাতিযা ও তালাবাদের সোহবত (সাহচর্য) লাভে অনেক মানুষ দ্বীনের পথে আসছে। লক্ষ করলে দেখা যায় যারাই জামিয়ার সাথে সম্পর্ক জোড়েছে তারাই দ্বীনী হাওয়ায় আন্দোলিত হয়েছে। যে মানুষটি দ্বীনদারীর আশেপাশে ছিলো না সেও জামিয়ার বরকত লাভে ধন্য হয়ে আস্তে আস্তে দ্বীনের পথে আসতে শুরু করেছে। আজকে রামধা এলাকা তথা পুরো আলীনগর ইউনিয়ন জুড়ে যে দ্বীনি পরিবেশ বিরাজ করছে এবং জনগণের মধ্যে যে দ্বীনি মেযাজ তৈরি হয়েছে সেটর অধিকাংশেই এ জামিয়ার অবদান। জামিয়ার সাথে এলাকাবাসীর সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে জামিয়ার আসাতিযায়ে কেরাম ও তালাবাদের সাহচর্য এবং জামিয়ার জন্য তাদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।

এলাকাবাসী জামিয়ার সাথে তাদের ভালোবাসার প্রমাণ নানাভাবে দিয়ে আসছে। কেউ একজন ছাত্রকে লজিং দেয়। কেউবা কোনো হুজুরের একটি টিফিন দেয়। এছাড়া যারা মৌসুমী ফসলের সাথে সম্পৃক্ত তারা নানা অভাবকে পাত্তা না দিয়ে জামিয়ার জন্য তাদের ফসলের একটি অংশ রেখে দেয়। আর না পারলে অন্তত মাসিক মুষ্টির চাল দিয়ে হলেও মাদ্রাসার সাথে তাদের সম্পর্কটি ধরে রাখার চেষ্টা করে। ওয়াজ আসলে পরামর্শ দিয়ে, অর্থ দিয়ে, শক্তি দিয়ে নানাভাবে সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। তাঁরা মাদ্রাসার সব ধরণের সুবিধা-অসুবিধায় পাশে থাকে। তাঁদের এ সহযোগিতার একটি প্রভাব নিজেদের মধ্যেও পড়ে। দেখা যায়, যারাই মাদ্রাসার পাশে থাকে তাদের সকলেই দ্বীনি ও দুনিয়াবি সবদিক দিয়ে অগ্রসর হতে থাকে।

দেশবিখ্যাত এ জামিয়াটি ১৯৪৯ ইং সনে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মাদ্রাসার প্রাথমিক নাম ছিলো “রামধা হাফিযিয়া মাদ্রাসা”। শুধু হিফয বিভাগ দিয়ে শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে জামিয়ার কার্যক্রম অগ্রসর হতে থাকে। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে দীর্ঘ চার দশক অতিক্রম করে জামিয়া আপন পূর্ণতা লাভ করে। ১৯৯০ সালে জামিয়ায় টাইটেল ক্লাস খোলা হয়।

এ প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন জামিয়ার সাবেক মুহতামিম হযরত মাওলানা মু’তাসিম আলী রহ.। ১৯৭১ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আপন জীবনের এ দীর্ঘ সময়টি জামিয়া রামধার খেদমতের জন্য তিনি সপে দিয়েছিলেন। তার হাত ধরেই মাদ্রাসাটি হাফিজিয়া থেকে ইবতেদাইয়্যাহ> মুতাওসসিতাহ> সানাবিয়্যাহ> ফযীলত; অতঃপর দারুল হাদিস মাদ্রাসা।

২০০৫ সালে হযরত মাওলানা ইউছুফ আহমদ খাদিমানীকে মুহতামিম সাহেবের সহযোগী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি এ দায়িত্ব লাভ করার পর জামিয়ার শিক্ষা কার্যক্রমে প্রভূত উন্নতি সাধন করেন। তখন থেকে জামিয়ায় ভালো রেজাল্টধারী ছাত্রদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। হযরত মাওলানা মু’তাসিম আলী রহ. এর ওফাতের পর ২০১৩ সালে তাঁকে পূর্ণ মুহতামিমের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বর্তমানে জামিয়াটি রেজাল্টের দিক দিয়ে বাংলাদেশের আলোচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্থান দখল করে নিয়েছে। এটি আসাতেযায়ে কেরামের নিরলস প্রচেষ্টার ফল হলেও মূল কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন হযরত মাওলানা ইউছুফ আহমদ খাদিমানী দা. বা.।

তিনি জামিয়ার শিক্ষাগত ও অন্যান্য কাঠামোগত উন্নতির দিকে নজর দেয়ার পাশাপাশি জামিয়ার সাথে এলাকাবাসীর সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাঁর এই প্রচেষ্টার ফলে জামিয়ার প্রতি এলাকাবাসীর ঝোক দিন দিন আশাতীতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা আজ এই প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের প্রাণের প্রতিষ্ঠান মনে করে এবং মুহতামিম সাহেবকে নিজেদের পরিবারের একজন সদস্য মনে করে। জামিয়ার প্রতি এলাকাবাসীর এ দরদ আরও বৃদ্ধি লাভ করুক এবং জামিয়ার ফয়েয দ্বারা এলাকাবাসী আরও লাভবান হোক। আমিন।

লেখাটি মামুনুর রশিদ-এর ফেইসবুক থেকে নেয়া।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: