শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩০ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩

রাষ্ট্র মেরামতে বিএনপির ২৭ দফা রূপরেখা

amarsurma.com
রাষ্ট্র মেরামতে বিএনপির ২৭ দফা রূপরেখা

প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রী পরপর দুই টার্মের বেশি নয় বেকার ভাতা প্রদান ও সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য

আমার সুরমা ডটকম:

সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ তুলে ধরেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। রূপরেখায় জাতীয় ঐকমত্য গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সরকার গঠনেরা রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐক্যমত্যের সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা হবে জানিয়েছে দলটি। পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার কমিশন, রেইনবো নেশন প্রতিষ্ঠা, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন, নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পরপর দুই টার্মের বেশি দায়িত্ব পালন করতে না পারা, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন, নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধন, জুডিশিয়াল, প্রশাসনিক সংস্কার, মিডিয়া, অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে।

গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ এর ২৭ দফা উপস্থাপন করেন। এরপর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন রূপরেখার বিস্তারিত তুলে ধরেন। বিএনপি জানিয়েছে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ঘোষিত বিএনপির ভিশন-২০৩০ এর আলোকে এ রূপরেখা প্রস্তুত করা হয়েছে।

রূপরেখা তুলে ধরতে গিয়ে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়া এক সাগর রক্তের বিনিময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল, সেই রাষ্ট্রের মালিকানা আজ তাদের হাতে নেই। বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার বাংলাদেশ রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে। এই রাষ্ট্রকে মেরামত ও পুনর্গঠন করতে হবে। দেশের জনগণের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের পর বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহের সমন্বয়ে একটি ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। উক্ত ‘জাতীয় সরকার’ রাষ্ট্র রূপান্তরমূলক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করবে। রূপরেখা ঘোষণা সময় সংবাদ সম্মেলনস্থল ওয়েস্টিন হোটেলের হল রুমটি কানায় কানায় পরিপূর্ণ ছিল।

রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখার ২৭ দফা :
১. সংবিধান সংস্কার কমিশন :

বিগত এক দশকের অধিক কালব্যাপী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করিয়া রাখার হীন উদ্দেশ্যে অনেক অযৌক্তিক মৌলিক সাংবিধানিক সংশোধনী আনয়ন করিয়াছে। একটি “সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করিয়া সকল বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক সাংবিধানিক সংশোধনী ও পরিবর্তনসমূহ পর্যালোচনা করিয়া এইসব রহিত/সংশোধন করা হইবে এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় সাংবিধানিক সংস্কার করা হইবে। সংবিধানে গণভোট (রেফারেন্ডাম) ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করিয়া জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হইবে।

২. রেইনবো নেশন প্রতিষ্ঠা :

প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে সকল মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক “রেইনবো নেশন” প্রতিষ্ঠা করা হইবে। এই জন্য অব্যাহত আলোচনা, মতবিনিময় ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎমুখী এক নতুন ধারার সামাজিক চুক্তিতে (সোস্যাল কন্টাক্ট) পৌঁছাইতে হইবে। এই জন্য একটি “ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন কমিশন” গঠন করা হইবে।

৩. নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার :

বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এবং স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্থায়ী সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে একটি “নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার” ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হইবে।

৪. নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য আনা :

প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট, সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়ন করা হইবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য (চেকস এন্ড ব্যালান্সেস) প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচারবিভাগের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের সুসমন্বয় করা হইবে।
৫. প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পরপর দুই টার্মের বেশি নয় :

পরপর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করিতে পারিবেন না।

৬. উচ্চ-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা :

বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সংসদে “উচ্চ-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা” (আপার হাউজ অব দ্যা লেজিসলেচার) প্রবর্তন করা হইবে।

৭. ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা :

আস্থাভোট, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধনী বিল এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত এমন সব বিষয় ব্যতীত অন্যসব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতামত প্রদানের সুযোগ নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়া দেখা হইবে ।

৮. নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন সংশোধন :

রাজনৈতিক দলসমূহের মতামত এবং বিশিষ্টজনের অভিমতের ভিত্তিতে স্বাধীন দক্ষ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন করিবার লক্ষ্যে বর্তমান “প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২” সংশোধন করা হইবে। ইভিএম নয়, সকল কেন্দ্রে পেপার-ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদান নিশ্চিত করা হইবে। আরপিও ডিলিমিটেশন অর্ডার এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন সংস্কার করা হইবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা হইবে।

৯. রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন :

সংকীর্ণ রাজনৈতিক দলীয়করণের ঊর্ধ্বে উঠিয়া সকল রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করিবার লক্ষ্যে এই সকল প্রতিষ্ঠান পুনঃগঠন করা হইবে। শুনানির মাধ্যমে সংসদীয় কমিটির ভেটিং সাপেক্ষে এই সকল প্রতিষ্ঠানের সাংবিধানিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে নিয়োগ প্রদান করা হইবে।

১০. জুডিশিয়াল কমিশন গঠন :

বাংলাদেশের সংবিধান ও মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হইবে। বর্তমান বিচারব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি “জুডিশিয়াল কমিশন” গঠন করা হইবে। জুডিশিয়াল সার্ভিসে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ, বদলি, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ চাকরীর শৃঙ্খলাবিধান সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক পরিচালিত হইবে। বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি পৃথক সচিবালয় থাকিবে। সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের অভিশংসন প্রশ্নে সংবিধানে বর্ণিত ইতোপূর্বেকার “সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল” ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা হইবে। এইজন্য সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়ন করা হইবে। দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠিয়া কেবলমাত্র জ্ঞান, প্রজ্ঞা, নীতিবোধ, বিচারবোধ ও সুনামের কঠোর মানদণ্ডে যাচাই করিয়া বিচারক নিয়োগ করা হইবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের লক্ষ্যে সংবিধানের ৯৫(গ) অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও মানদণ্ড সম্বলিত “বিচারপতি নিয়োগ আইন” প্রণয়ন করা হইবে।

১১. প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন :

দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ পরিষেবা, জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন পড়িয়া তুলিবার লক্ষ্যে যোগ্য, অভিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি “প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন” গঠন করিয়া প্রশাসন পুনঃগঠন করা হইবে। মেধা, সততা, সৃজনশীলতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ বেসামরিক ও সামরিক প্রশাসনে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি হিসাবে বিবেচনা করা হইবে।

১২. মিডিয়া কমিশন গঠন :

সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি, মিডিয়া সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী এবং বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ ও গ্রহণযোগ্য মিডিয়া ব্যক্তিদের সমন্বয়ে মিডিয়ার সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি “মিডিয়া কমিশন” গঠন করা হইবে। সৎ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ পুনরুদ্ধার করিবার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হইবে; এই লক্ষ্যে আইসিটি অ্যাক্ট-২০০৬ এর প্রয়োজনীয় সংশোধন ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-২০১৮ বাতিল করা হইবে। চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনি হত্যাসহ সকল সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যার বিচার নিশ্চিত করা হইবে।

১৩. অর্থ-পাচার ও দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ :

দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোন আপোষ করা হইবে না। বিগত দেড় দশকব্যাপী সংগঠিত অর্থ-পাচার ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করিয়া একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা এবং শ্বেতপত্রে চিহ্নিত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে। দেশের বাহিরে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে। দুর্নীতি দমন কমিশন ও দুর্নীতি দমন আইন সংস্কারের পাশাপাশি পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে ‘দুদকের’ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হইবে। সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল’ নিয়োগ করা হইবে।

১৪. গুম-খুন-ধর্ষণ-অপহরণে জড়িত সকলের বিচার :

সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হইবে। মানবিক মূল্যবোধ ও মানুষের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং অমানবিক নিষ্ঠুর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হইবে। ইউনিভার্সাল হিউম্যান রাইটস চার্টার অনুযায়ী মানবাধিকার বাস্তবায়ন করা হইবে। সুনির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে মানবাধিকার কমিশনে নিয়োগ প্রদান করা হইবে। গত দেড় দশক যাবত সংগঠিত সকল বিচারবহির্ভূত হত্যা, ক্রসফায়ারের নামে নির্বিচারে হত্যা, গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্মম শারীরিক নির্যাতন এবং নিষ্ঠুর ও অমানবিক অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সকল ব্যক্তিকে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সুবিচার নিশ্চিত করা হইবে।

১৫. অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন গঠন :

অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ও গবেষক, অভিজ্ঞ ব্যাংকার, কর্পোরেট নেতা, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি সমন্বয়ে একটি “অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন” গঠন করা হইবে। মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নিরিখে প্রবৃদ্ধির সুফল সুষম বণ্টনের মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূরীকরণ করা হইবে।

উপরোক্ত সাংবিধানিক সংস্কার কমিশন, প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন, জুডিশিয়াল কমিশন, মিডিয়া কমিশন এবং অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশনগুলি সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্ব-স্ব প্রতিবেদন দাখিল করিবে যেন সংশ্লিষ্ট সুপারিশসমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়।

১৬. নিজ ধর্ম পালনে পূর্ণ অধিকার :

‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ এই মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ভোগ করিবেন। দলমত ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পাহাড়ি ও সমতলের ক্ষুদ্র-বৃহৎ সকল জাতি-গোষ্ঠীর সংবিধান প্রদত্ত সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্ম-কর্মের অধিকার, নাগরিক অধিকার এবং জীবন, সম্ভ্রম ও সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করা হইবে।

১৭. শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত :

মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমিকদের (প্রাইস-ইনডেক্স বেইজড) ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা হইবে। শিশু-শ্রম বন্ধ করা হইবে। চা-বাগান, বস্তি, চরাঞ্চল, হাওড়-বাওর ও মঙ্গাপীড়িত ও উপকূলীয় অঞ্চলের বৈষম্য দূরীকরণ ও সুষম উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হইবে।

১৮. বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে দায়মুক্তি আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল :

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল করা হইবে এবং রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে রক্তক্ষরণ রোধ করিবার লক্ষ্যে জনস্বার্থবিরোধী কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো হইতে বিদ্যুৎ ক্রয়ে চলমান সীমাহীন দুর্নীতি বন্ধ করা হইবে। আমদানি নির্ভরতা পরিহার করিয়া নবায়নযোগ্য ও মিশ্র এনার্জি-নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং উপেক্ষিত গ্যাস ও খনিজ সম্পদ আবিষ্কার ও আহরণে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।

১৯. বৈদেশিক সম্পর্কে বাংলাদেশের স্বার্থ প্রাধান্য :

বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হইবে। বাংলাদেশ ভূ-খণ্ডের মধ্যে কোনো প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতা বরদাশত করা হইবে না এবং কোনো সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা আশ্রয়-প্রশ্রয় পাইবে না। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে রাজনৈতিক ঢাল বা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করিয়া এবং সন্ত্রাসবাদের তকমা লাগাইয়া ভিন্নমতের বিরোধী শক্তি এবং রাজনৈতিক বিরোধীদল দমনের অপতৎপরতা বন্ধ করা হইলে প্রকৃত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করা এবং আইনের আওতায় আনিয়া শাস্তি প্রদান করা সম্ভব হইবে।

২০. প্রতিরক্ষা বাহিনীর স্বকীয় মর্যাদা বহাল :

দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সুসংগঠিত, যুগোপযোগী এবং সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করিয়া গড়িয়া তোলা হইবে। স্বকীয় মর্যাদা বহাল রাখিয়া প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা হইবে।

২১. স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হবে স্বাধীন ও শক্তিশালী :

ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর স্বাধীন, শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান করা হইবে। এই সকল প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হইবে যেন তাহারা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান ও উন্নয়ন কার্যক্রমে কার্যকর ভূমিকা রাখিতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন ও অন্য কোনো জনপ্রতিনিধির খবরদারী মুক্ত স্বাধীন স্থানীয় সরকার নিশ্চিত করা হইবে। মৃত্যুজনিত কারণ কিংবা আদালতের আদেশে পদশূন্য না হইলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে সরকারি প্রশাসক নিয়োগ করা হইবে না। আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নির্বাহী আদেশবলে সাসপেন্ড/বরখাস্ত/অপসারণ করা হইবে না।

২২. মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন :

রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নিবিড় জরিপের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি তালিকা প্রণয়ন করা হইবে এবং তাঁহাদের যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদান করা হইবে। এই তালিকার ভিত্তিতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কল্যাণার্থে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হইবে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই-বাছাই করিয়া একটি সঠিক তালিকা প্রস্তুত করা হইবে।

২৩. বেকার ভাতা প্রদান ও সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি :

যুবসমাজের ভিশন, চিন্তা ও আকাক্সক্ষাকে ধারণ করিয়া আধুনিক ও যুগোপযোগী যুব-উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হইবে। এক বছরব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত, যেটাই আগে হইবে, শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান করা হইবে। বেকারত্ব দূরীকরণের লক্ষ্যে নানামুখী বাস্তবসম্মত কর্মসূচি গ্রহণ করা হইবে। যুব সমাজের দক্ষতা (স্কিল ডেভেলপমেন্ট) বৃদ্ধি করিয়া ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ আদায়ের লক্ষ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হইবে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পুষ্টির উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়া মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করা হইবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি বিবেচনা করা হইবে।

২৪. সংসদ ও স্থানীয় সরকারের নারী প্রতিনিধিত্ব প্রাধান্য :

নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী গ্রহণ করা হইবে। জাতীয় সংসদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে নারীদের প্রাধান্য দেওয়া হইবে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হইবে।

২৫. শিক্ষাখাতে জিডিপির ৫ ভাগ বরাদ্দ :

বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান নৈরাজ্য দূর করিয়া নিম্ন ও মধ্য পর্যায়ে চাহিদা-ভিত্তিক শিক্ষা এবং উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া হইবে। গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হইবে। জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে জিডিপির ৫% অর্থ বরাদ্দ করা হইবে।

২৬. সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তন :

‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ এই নীতির ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের ‘ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস-এনএইচএস’ এর আদলে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা (ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ) প্রবর্তন করা হইবে। জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫% অর্থ বরাদ্দ করা হইবে।

২৭. কৃষিতে ভর্তুকি :

কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হইবে। প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়া হইলেও শস্য বীমা, পশু বীমা, মৎস্য বীমা এবং পোল্ট্রি বীমা চালু করা হইবে। কৃষি জমির অকৃষি ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হইবে।
রূপরেখা ঘোষণা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের এই রূপরেখা অধিকতর সমৃদ্ধ করিতে আপনাদের গঠনমূলক পরামর্শ জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে আমরা সাদরে গ্রহণ করিব।

সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামে মোস্তফা মোহসিন মন্টু, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের রেজা কিবরিয়া, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ইমরান ইমন, হাসিব উদ্দিন হোসেন, জেএসডির কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী, ২০ দলীয় জোটের জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, শাহাদাত হোসেন সেলিম, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করিম খান, জাগপার ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, খন্দকার লুৎফর রহমান, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, ডিএলের সাইফুদ্দিন মনি, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ ন্যাপের শাওন সাদেকী প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
পেশাজীবীদের মধ্যে প্রফেসর মাহবুব উল্লাহ, প্রফেসর সদরুল আমিন, প্রফেসর আফম ইউসুফ হায়দার, প্রফেসর তাজমেরি এসএ ইসলাম, প্রফেসর একেএম আজিজুল ইসলাম, প্রফেসর এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, প্রফেসর মোর্শেদ হাসান খান, প্রফেসর শামসুল আলম, প্রফেসর নজরুল ইসলাম, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, হাছিন আহমেদ, প্রফেসর গোলাম হাফিজ কেনেডি, প্রফেসর রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, প্রিন্সিপাল সেলিম ভুঁইয়া, রফিকুল ইসলাম, আশরাফ উদ্দিন উজ্জ্বল, জাহানারা বেগম, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কাদের গনি চৌধুরী, সাংবাদিক সোহরাব হাসান, এম আবদুল্লাহ, আবদুল হাই শিকদার, কামাল উদ্দিন সবুজ, মোস্তফা কামাল মজুমদার, সৈয়দ আবদাল আহমেদ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্ল্হা আল নোমান, শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, গোলাম আকবর খন্দকার, হাবিবুর রহমান হাবিব, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আবদুল কাইয়ুম, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মাহবুবে রহমান শামীম, বিলকিস জাহান শিরিন, শ্যামা ওবায়েদ, অনিন্দ্র ইসলাম অমিত, আসাদুজ্জামান, আফরোজা আব্বাস, হেলেন জেরিন খান, তাইফুল ইসলাম টিপু, হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, মিডিয়া সেলের জহির উদ্দিন স্বপন, শাম্মী আখতার, রুমিন ফারহানা, শায়রুল কবির খান, চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের এবিএম আবদুস সাত্তার, রিয়াজউদ্দিন নসু, শামসুদ্দিন দিদার প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: