শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:০৫ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ১৯ দফার চুক্তিতে যা আছে

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ১৯ দফার চুক্তিতে যা আছে

আমার সুরমা ডটকমরোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ঢাকা-নেপিদো স্বাক্ষরিত ১৯ দফার চুক্তি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। ২৩ নভেম্বর চুক্তিটি সই হয়। এতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও মিয়ানমারের পক্ষে দেশটির স্টেট কাউন্সেলরের দফতরের মন্ত্রী চ টিন্ট সোয়ে। শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সম্পূর্ণ চুক্তি প্রকাশ করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সংবাদ সম্মেলন চলাকালে চুক্তির কপি সাংবাদিকদের মধ্যে বিতরণ করার নির্দেশ দেন মন্ত্রী। ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট অন রিটার্ন অব ডিসপ্লেসড পারসনস ফ্রম রাখাইন স্টেট’ নামের ছয় পৃষ্ঠার এ চুক্তিতে ১৯টি দফা রয়েছে। চুক্তির কোথাও রোহিঙ্গা শব্দ উল্লেখ করা হয়নি। তাদের বাস্তুচ্যুত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

চুক্তির শুরুতেই স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে বাস্তুচ্যুতদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে যাচাই সম্পাদন করার কথা বলা হয়।

১৯৯২ সালে যৌথ বিবৃতিতেও বাস্তুচ্যুতদের ফিরিয়ে নেয়ার গাইডলাইন চূড়ান্ত করা হয়েছিল বলে চুক্তিতে মনে করিয়ে দেয়া হয়। বর্তমান চুক্তির নীতি মেনে দ্রুত বাস্তুচ্যুতদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে উভয়পক্ষ সম্মত বলে উল্লেখ করা হয়। চুক্তির প্রথম দফায় বলা হয়, রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুতদের দ্রুত ফেরত পাঠানো শুরু করতে হবে এবং দুই পক্ষের সম্মতিতে একটা সময়সীমা দিয়ে তার মধ্যে ফেরত পাঠানো সম্পাদন করতে হবে।

দ্বিতীয় দফায় বলা হয়, বাস্তুচ্যুতরা যাতে বাংলাদেশে আসা বন্ধ করে, সেজন্য পদক্ষেপ নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। এতে করে রাখাইনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরবে এবং যারা পালিয়ে এসেছে, তারা স্বেচ্ছায় নিরাপদে তাদের মূল বাড়িঘরে কিংবা তাদের পছন্দমতো কাছাকাছি নিরাপদ স্থানে থাকতে উৎসাহিত হবে। ফিরে যাওয়ারা যাতে অস্থায়ী স্থানে দীর্ঘদিন না থাকে, সে লক্ষ্যে মিয়ানমার সব পদক্ষেপ নেবে। বর্তমান আইনের সঙ্গে সংগতি রেখে ফিরে যাওয়াদের রাখাইনে স্বাধীনভাবে চলাচলের নিশ্চয়তা দেবে মিয়ানমার। তাদের মৌলিক চাহিদা ও জীবিকায়নে পুনরায় উন্নয়ন ঘটাতে হবে। বাস্তচ্যুতরা ফিরে যাওয়া মাত্রই মিয়ানমার তাদের একটি আইডি কার্ড প্রদান করবে।

চুক্তির তৃতীয় দফায় বলা হয়, রাখাইনে বর্তমানে বসবাসরতদের নাগরিকত্ব দেয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত জাতীয় যাচাইয়ের চেয়ে পৃথকভাবে যাচাই সম্পন্ন করতে হবে। পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুতরা অতীতে সেখানে ছিলেন কিনা, তার প্রমাণই হবে যাচাইয়ের ভিত্তি।

চতুর্থ দফায় বলা হয়, দুই সরকারই প্রয়োজনমতো ইউএনএইচসিআরের সহায়তা নেবে। বাংলাদেশ সরকার তাৎক্ষণিকভাবে ইউএনএইচসিআরের সহায়তা নেবে। মিয়ানমার যখন প্রয়োজন হবে, তখন উপযুক্ত সময়ে সহায়তা নেবে।

পঞ্চম দফায় বলা হয়, সন্ত্রাসী কিংবা অপরাধে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে মিয়ানমার ফিরে যাওয়াদের অবৈধভাবে দেশ ছেড়ে যাওয়ার জন্য তাদের বিচার করবে না কিংবা শাস্তি দেবে না।

ষষ্ঠ দফায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট এবং ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরের পর মিয়ানমার থেকে আসা ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত দেবে। উভয়পক্ষ দ্রুততার সঙ্গে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার আগে মিয়ানমারে কোথায় তাদের বসতি ছিল, তা খুঁজে বের করবে। এক্ষেত্রে যেসব যোগ্যতা তাদের থাকতে হবে সেগুলো হলো- ১. ফিরে যেতে ইচ্ছুকরা অবশ্যই মিয়ানমারের বসবাসকারী হতে হবে, ২. তাদের অবশ্যই স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ায় ইচ্ছুক হতে হবে, ৩. বিভক্ত পরিবারের ফেলে আসা সদস্য এবং এতিমদের ব্যাপারে বাংলাদেশের কোনো আদালতের সনদ থাকতে হবে, ৪. পিতামাতা মিয়ানমারের হলে সীমান্তের এপারে জন্ম হলেও তারা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে গণ্য হবে, ৫. অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় কোনো শিশুর জন্ম হলে তার ব্যাপারে বাংলাদেশের কোনো আদালতের সনদ নিতে হবে। এছাড়াও যাচাইয়ের সুবিধার জন্য মিয়ানমার ফিরে যেতে ইচ্ছুকদের নিজেদের পূরণ করার একটি ফরম সরবরাহ করবে।

চুক্তির তৃতীয় দফায় বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের দেয়া তালিকা যাচাইয়ের পর মিয়ানমার তাদের বিভিন্ন ব্যাচে গ্রহণ করবে। তবে এক পরিবারের সদস্যদের একই ব্যাচে রাখা হবে। তবে ফিরে যেতে ইচ্ছুকদের চিহ্নিত করার জন্য তারা যে মিয়ানমারের অধিবাসী ছিলেন, তার কিছু প্রমাণ থাকতে হবে। এসব প্রমাণ হতে পারে নাগরিকত্বের পুরনো মেয়াদোত্তীর্ণ আইডি কার্ড, কিংবা জাতীয় নিবন্ধন কার্ড কিংবা অস্থায়ী নিবন্ধন কার্ড (সাদা কার্ড) কিংবা মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা যে কোনো ডকুমেন্ট। এছাড়াও তারা মিয়ানমারের কোন এলাকার বাসিন্দা ছিলেন, তার প্রমাণ লাগবে। যেমন- ঠিকানা, বাড়িঘর কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানার ডকুমেন্ট, স্কুলের হাজিরা খাতার উপস্থিতি কিংবা অন্য কোনো ডকুমেন্ট কিংবা তথ্য। ইউএনএইচসিআরের দেয়া শরণার্থী সনদও একই যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। মিয়ানমারের অধিবাসী ছিলেন এমন প্রমাণ দেখাতে পারলে সবাইকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। তাদের সংখ্যা কোনো সীমিত নয়। কোনো বিষয়ে বিরোধ দেখা দিলে দুই পক্ষ বসে তা নিষ্পত্তি করবে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে মিয়ানমার সরকার। বিরোধপূর্ণ সমস্যাগুলো মিয়ানমার দ্রুত সমাধান করবে। ছয় মাসের মধ্যেই তা করতে হবে।

চুক্তির ১১, ১২ ও ১৩ দফায় বলা হয়, চুক্তি সইয়ের তিন সপ্তাহের মধ্যে যাচাই সম্পাদনে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করতে হবে। যাচাইয়ের সময়সীমা, পরিবহন, গ্রহণের প্রক্রিয়া, পারস্পরিক যোগাযোগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পাদন করতে হবে। চুক্তি সইয়ের দুই মাসের মধ্যে প্রথম ব্যাচের প্রত্যাবাসন সম্পাদনের মাধ্যম কাজটি শুরু করতে হবে।

চুক্তির ১৪তম  দফায় বলা হয়েছে, মিয়ানমারে ফিরে যাওয়াদের বসতি, জীবন ও জীবিকায়নে সহায়তার জন্য ইউএনএইচসিআর ও জাতিসংঘের অপরাপর সংস্থা ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের ফিরে যাওয়াদের সহায়তার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

চুক্তির ১৫তম দফায় বলা হয়েছে, দুই সরকার সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারে সহায়তা করবে। ১৬ দফায় বলা হয়েছে, উভয় সরকার সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, চোরাচালান, মাদক পাচার, মানব পাচার প্রভৃতির বিরুদ্ধে কাজ করবে। সন্ত্রাসীদের একে অন্যের ভূমি ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। ১৭তম  দফায় বলা হয়েছে, প্রত্যাবাসন সম্পন্ন হওয়ার পর কেউ যাতে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করতে না পারে, সে ব্যাপারে উভয় সরকার সহযোগিতা করবে। ১৮তম দফায় বলা হয়েছে, একই ধরনের সমস্যার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে ব্যাপারে একটি বিস্তৃত সমাধানের লক্ষ্যে উভয় সরকারই কাজ করবে। মিয়ানমার সরকার কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে। ১৯তম  দফায় বলা হয়েছে, উভয়পক্ষ বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ ও সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের উন্নয়নে কাজ করবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: