শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৩ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
লন্ডনে নতুন আইনে ঠাঁই নাই ১১ লাখ অভিবাসীর

লন্ডনে নতুন আইনে ঠাঁই নাই ১১ লাখ অভিবাসীর

uk3

আমার সুরমা ডটকম ডেক্স : একের পর এক নতুন আইন। ঠেকাতে হবে ইমিগ্রান্টস। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর কনজার্ভেটিভ সরকার যেন ইমিগ্রান্টস বিতাড়নে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অভিবাসী কমিউনিটি যেন সরকারের জন্য বিষফোঁড়া। এবার আর শুধু রেস্টুরেন্ট কিংবা দোকানপাটেই নয়, গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হবে খোলা আকাশের নিচেও। ক্লিনিং কোম্পানি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিল্ডিং সাইট এবং কেয়ার হোমসেও। দিনে-রাতে, সপ্তাহে সাত দিন। যেখানে অবৈধ ইমিগ্রান্টস সেখানেই পুলিশি অভিযান। কোথাও কোথাও ইউকেবিএ অফিসারদের সাহস যোগাতে অভিযানে যোগ দিচ্ছেন ইমিগ্রেশন মিনিস্টার, হোম সেক্রেটারি এমনকি বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীও। গত সপ্তাহে এমন কঠোরতার কথা জানিয়েছেন হোম মিনিস্টার জেমস ব্রোকেনশায়ার। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এই মুহূর্তে সরকারের প্রধান কাজ বৃটেনকে অবৈধ অভিবাসীমুক্ত করা।

৬ কোটি ৫৫ লাখ মানুষের এই দেশে মাত্র ১১ লাখ অবৈধ অভিবাসী যেন সরকারের জন্য মস্ত বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ ওরা সরকারি কোন বেনিফিট পায় না। হাড় ভাঙা খাটুনি দিয়ে কোন মতে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে। অভিবাসীরা যাবে কোথায়? গেলো সপ্তাহে আইন করা হলো অবৈধদের ঘরভাড়া দেয়া যাবে না, থাকার জায়গা দেয়া যাবে না। অর্থাৎ সরকার তাদের হাঁটে, ঘাটে, ভাতে, মারতে চায়। কোথায় মানবাধিকার? রাতে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই দেয়াও কি অপরাধ? ওরাও তো রক্তে-মাংসে মানুষ। মাতৃভূমি ছেড়ে সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে পাড়ি দিয়েছে কি মনের সুখে? নাহ, নিজ দেশে জীবনের চরম অনিশ্চয়তায় অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে পাড়ি দিয়েছে স্বপ্ন শহর লন্ডনে। যেখানে পাউন্ড ওড়ে। গাছ নাড়া দিলেই যেন পাউন্ড ঝরে পড়ে। কিন্তু এখানে এসে তাদের সেই স্বপ্নভঙ্গ। চরম হতাশা ও যন্ত্রণায় প্রতিনিয়ত দিনযাপন করতে হচ্ছে। রাতে মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই।

রেস্টুরেন্টে একটু আধটু কাজ করলে দুই বেলা খাওয়া আর রাতে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল এত দিন। কিন্তু এখন কোন কিছুই নেই। কারণ, ইমিগ্রান্টস বিতাড়নে সরকার খড়গহস্ত। রেস্টুরেন্ট মালিক ঘুম থেকে জেগে পত্রিকা খুলেই দেখেন নতুন আইন। টিভি অন করলেই দেখতে পারেন ইউকেবিএ’র সাঁড়াশি অভিযান। অবৈধ অভিবাসীকে কাজ দিলে শুধু ২০ হাজার পাউন্ড জরিমানাই নয়, সঙ্গে আরও দুই বছরের জেল। এতো ঝুঁকি নিয়ে কে কাজ দেবে? কোথায় যাবে তারা। রাতে থাকবেন কোথায়। দুই বেলা খাওয়ার যোগান দেবে কে? কেউ নেই ওদের পাশে। মালয়েশিয়া আর মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের দুরবস্থা নিয়ে মিডিয়ায় তোলপাড় হয়, কিন্তু বৃটেন প্রবাসীদের নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। কারণ, এটি উন্নত দেশ। বিশ্বের রাজধানী। কাড়ি কাড়ি পাউন্ড আছে এখানে- এমন বিশ্বাস নিয়েই এ দেশে আসা। একই বিশ্বাস নিয়েই স্বদেশে স্বজনদের গর্বের সঙ্গে বেঁচে থাকা। কিন্তু কেউ কি শোনেছে তাদের বুকের ভেতরে জমে থাকা কষ্টের কাহিনী। নাহ কেউ দেখেনি, কেউ শোনেওনি। রাতে ওদের মাথা গোঁজার জায়গা নেই।

পার্কের রেলিংয়ে মাথার নিচে হাত রেখে অনেককেই রাত যাপন করতে হয়। কখনো বা বাসে চড়ে লন্ডন শহরে ঘুরতে ঘুরতে নির্ঘুম রাত পার করতে হয় অবহেলিত এসব মানুষকে। সকালে পাবলিক টয়লেটে হাত-মুখ ধুয়ে কোথাও কোনো দোকানে ঢুকে এক পিস কেক কিংবা শিঙ্গাড়া খেয়ে নাস্তা সারতে হয়। পকেটে পয়সা নেই, আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবকে আর কত বিরক্ত করা যায়? ভিক্ষাবৃত্তি বেআইনি এই দেশে, নতুবা থালা নিয়ে বসতেও লজ্জা হতো না। এই হলো বিলেতের অবৈধ ইমিগ্রান্টদের প্রকৃত জীবন কাহিনী। কিন্তু বাড়িতে স্বজনরা জানেন তিনি লন্ডনে আছেন, বেশ ভালই আছেন। উল্লেখ্য, অবৈধ অভিবাসীদের কাজ না দিতে ব্যবসায়ীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ইমিগ্রেশন মিনিস্টার জেমস ব্রোকেনশায়ার। তিনি বলেছেন, একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী আছেন, যারা বৃটিশ নাগরিকদের কাজ না দিয়ে বৃটেনে কাজের অনুমতি নেই এমন লোকদের কাজ দিয়ে বিভিন্নভাবে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করেন। সন্দেহভাজন সেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে ইমিগ্রেশন অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

অবৈধ ওয়ার্কারের খোঁজে ইমিগ্রেশন অফিসাররা ক্লিনিং কোম্পানি, বিভিন্ন বিল্ডিং সাইট এবং কেয়ার হোমসে অভিযান চালাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নে সরকারের সঙ্গে একজোট প্রধান বিরোধীদল লেবার পার্টিও। লেবার নেতা ইভেট কুপার ইমিগ্রেশন মিনিস্টারের চেয়ে আরও একধাপ বাড়িয়ে বলেছেন, এ বিষয়ে হোম অফিসের আরও বেশি কিছু করা উচিত। অবশ্য বিভিন্ন সময় বৃটিশ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ইমিগ্রান্টস কমিউনিটির পক্ষে কথা বলেছেন। গত বছরের নভেম্বরে কনফেডারেশন অব বৃটিশ ইন্ডাস্ট্রি সিবিআই’র বার্ষিক কনফারেন্সে সংগঠনের চেয়ারম্যান স্যার মাইক বলেন, এ দেশের অর্থনীতিতে ইমিগ্রান্ট কমিউনিটির অবদান অনস্বীকার্য। ইমিগ্রান্টস কাজ বন্ধ করে দিলে দেশ অচল হয়ে যাবে, কারণ বৃটিশরা অলস। তারা কাজ করতে চান না। অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ করে দেয়ার দাবি জানিয়ে ওই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, বৈধ করে দিলে তারা কাজ করতেন, সরকারকে ট্যাক্স দিতেন। কিন্তু সরকারের একচোখা নীতি, যেকোন মূল্যে ইমিগ্রান্টস তাড়াতে হবে। কিন্তু বোর্ডার নিয়ন্ত্রণ না করে এভাবেই কি ইমিগ্রান্ট কন্ট্রোল সম্ভব?

আর সব অবৈধ ইমিগ্রান্ট দেশ থেকে বের করে দিলেই কি বৃটেন উন্নতির শিখরে পৌঁছে যাবে- এটাই বৃটিশ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের প্রশ্ন। ২০০৯ সালে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস স্ট্যাডি এক রিপোর্টে জানিয়েছিল, ইউকেতে প্রায় ৬ লাখ ১৮ হাজার অবৈধ বাসিন্দা রয়েছেন। আর ২০১০ সালে ক্যাম্পেইন গ্রুপ মাইগ্রেশন ওয়াচ জানিয়েছে, ইউকেতে অবৈধ ইমিগ্রান্টের সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ। তবে এর মধ্যে বাংলাদেশী অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা হবে প্রায় ৩ লাখ। অবৈধ অভিবাসীকে ধরতে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এইচএম রেভিনিউ অ্যান্ড কাস্টমস, দ্য গ্যাংমাস্টারস, লাইসেন্সিং অথরিটি ও হেলথ অ্যান্ড সেফটি এক্সিকিউটিভ যৌথভাবে অভিযান চালাবে। কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে অবৈধকর্মী ধরতে পারলে ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা এমপ্লয়ারকে ২০ হাজার পাউন্ড জরিমানা করার আইন রয়েছে। পাশাপাশি জেনেশুনে কোন অবৈধ বাসিন্দাকে কাজ দিলে এমপ্লয়ারকে দুই বছরের জেলদণ্ড দেয়া হবে। সর্বশেষ গত মাসে অবৈধ অভিবাসীকে ঘরভাড়া দিলে ল্যান্ডলর্ডকে ৩ হাজার পাউন্ড জরিমানার আইন ঘোষণা করেছে সরকার।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: