শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩২ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩

শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ

আমার সুরমা ডটকম:

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল শুরুর এক বছর পূর্তিতে শরণার্থী শিবিরে থাকা রোহিঙ্গারা বিক্ষোভ করে। গতকাল শনিবার গণহত্যার বিচার ও নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার দাবি জানিয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের উখিয়ার কুতুপালং বাজারের সামনের সড়কে মাথায় লাল ফিতা বেধে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের নিধনে অভিযান শুরু করে। বর্বর নির্যাতনসহ এই অভিযানে নিহত হয়েছে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা। ধর্ষণের শিকার হয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরী। বর্বরদের কালো থাবায় বাদ পড়েনি রোহিঙ্গা শিশুরাও। আর সেই থেকে এই দিনটিকে তাদের জীবনের কালো দিন হিসেবে ঘোষণা করেছে এই জনগোষ্ঠী। তাদের দাবি একটাই সম্মানের সাথে ফিরিয়ে নিয়ে তাদের অধিকার বুঝিয়ে দিতে হবে। মায়ানমারে নির্যাতনের স্বীকার রোহিঙ্গারা নির্যাতনের বিচার চায়। রাখাইনে তারা সহায় সম্বল নিয়ে বাঁচতে চায়। অধিকার ছাড়া তারা মায়ানমারে ফিরে যাবেনা।
কুতুপালং ক্যাম্পের ব্লক-৩ এ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমরা কতদিন এদেশে থাকবো? আমরা দিনে দিনে এদেশের বোঝাতে পরিণত হচ্ছি। তাই আমরা ফিরে যেতে চাই স্বদেশে। আন্তর্জাতিক মহলকে অনুরোধ, মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগ করুন যাতে সরকার দ্রুত আমাদের নিয়ে যায়। নিরাপদ প্রত্যাবাসন বিলম্ব করতে মিয়ানমার সামরিক জান্তা নানা টালবাহানা শুরু করেছে। তারা এত বেশি হিংস্র কেউ কাছে না গেলে বুঝা যাবে না। বিশ্ব মোড়লরা কেন মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর বিষয়ে নিশ্চুপ এটি আমাদের মাথায় ঢুকছে না।
তবে বিক্ষোভটি কারা আয়োজন করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে বেশ ক’জন রোহিঙ্গারা বলেন, ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য কোনো কিছুই আয়োজন করতে হয় না। এখানে সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছে। বিক্ষোভ মিছিলে থাকা মো. আবদুস সালাম নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই আমরা আজকের এই বিক্ষোভ করেছি। আমরা কী চাই তাই জানানোর জন্যই আমাদের এই আয়োজন। তারা আরও বলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই। আর সেজন্য আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা চাই। আমরা সেদিন ঘটনার জন্য দোষীদের বিচার চাই।
এদিকে এক বছর পূর্ণ হলেও মিয়ানমারের পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্য কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা স্বদেশ ফেরা নিয়ে রয়েছেন অনিশ্চিয়তায়। রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের এক বছর পূর্তিকে সামনে রেখে উত্তর রাখাইনে এখনো সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে বার্মিজ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। একই সঙ্গে রাখাইন রাজ্যের মংডু, বুথিডাউং শহরে সান্ধ্যাকালীন কারফিউর মেয়াদ আরো দুই মাস বাড়ানো হয়েছে।
বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পর বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের ডিজিটাল নিবন্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরে পাঁচ দফা প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মিয়ানমার বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী রাষ্ট্র হলেও নানা কারণে বাস্তবে অনেক দূরের। এ কারণে দুই দেশের সম্পর্কে আস্থা স্থাপন করা যাচ্ছে না। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের জাতিগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকার করে না। স¤প্রতি বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল দেখেছে মিয়ানমারে গ্রামের পর গ্রাম আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুতির বিষয়টিকে মিয়ানমার প্রথমদিকে সামরিক সংঘাত হিসেবে দেখাতে চেয়েছিল। এ কারণে তারা ১৭ বার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে। যুদ্ধের জন্য উস্কানি দিয়েছে নানাভাবে। কিন্তু বাংলাদেশ সংযম প্রদর্শন করেছে এবং দ্বিপাক্ষিক উপায়ে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছে।
গত বছরের নভেম্বরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হলেও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। এখনও পর্যন্ত প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি মিয়ানমার।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: