বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৫:২৮ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩

শাল্লায় হাওর রক্ষা বাঁধে ব্যাপক দুর্নীতি: টাকা লুটপাটের পায়তারা

দুরমুজের জন্য ২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও কোনো বাঁধে তা হচ্ছে না

মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার: সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম হচ্ছে। নিম্নমানের কাজ করে বরাদ্দকৃত টাকাগুলো নিজেদের পকেটে নেয়ার জন্য নানা টালবাহান করছে পিআইসির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী কাজ না করে যন্ত্রদানব দিয়ে বাঁধের গোঁড়া থেকে নিজেদের মনগড়া কাজ করে হাওরের ফসলকে হুমকির মুখে রাখছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে পাউবোর নীতিমালা অনুযায়ী সব বাঁধেই মাটি দুরমুজ করা করার নির্দেশনা রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী মাটি দুরমুজের জন্য প্রতি ঘনমিটারে ৩৭.৫২ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র মতে, জেলার ৯৫৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট বরাদ্দ ১৭৩ কোটি টাকা। ৯৫৮টি প্রকল্পের ৭৫ লাখ ঘনমিটার মাটির দুরমুজ খাতের বরাদ্দ ২৩ কোটি টাকা। বাঁধ নির্মাণে পৃথক পৃথকভাবে বরাদ্দ থাকলেও জেলার কোনও বাঁধে দুরমুজ করা হচ্ছে না।
প্রাক্কলনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে ৭ কেজি ওজনের লোহার হাতুড়ি দিয়ে বাঁধের মাটি দুরমুজ করতে হবে। প্রতি ৬ ইঞ্চি মাটি ফেলার পরপর হাতুড়ি দিয়ে কমপেকশন করার নিয়ম। কিন্তু কোন বাঁধেই পাউবোর নিয়ম অনুযায়ী কমপেকশন হচ্ছে না বলে সরেজমিনে দেখা গেছে।
শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওর, ভাণ্ডারবিল, ভেরাডহর (কুশিয়ারা নদীর উত্তরপাড়), বরাম হাওর ও উদগল হাওর ঘুরে দেখা যায় কোনো বাঁধেই সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না। যন্ত্রদানব (এক্সেভেটর) বা ড্রাম ট্রাক দিয়ে একসাথে অনেক মাটি ফেলায় কমপেকশন (দুরমুজ) করার কোন সুযোগই থাকছে না। ৬ ইঞ্চি করে মাটি ফেলার নিয়ম থাকলেও একসাথেই অন্তত ৪-৫ ফুট উঁচু করে মাটি ফেলা হচ্ছে। এরপর এই মাটির উপর ট্রাক বা এক্সেভেটর চালানো হচ্ছে।
পিআইসির সভাপতিদের দাবি বাঁধে মাটি ফেলার পর এক্সেভেটর চলাচল করায় দুরমুজের কোনো প্রয়োজন হয়না। তবে পিআইসির সভাপতিদের এসব দাবি মানতে নারাজ পাউবো কর্তৃপক্ষ। বাঁধে সঠিকভাবে কমপেকশন করার জন্য সকল কাবিটা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সদস্য সচিব পাউবোর শাখা কর্মকর্তাদের চিঠি দিলেও কার্যকর ফল পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দুরমুজসহ সকল নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করার জন্য প্রথমে গত ৭ জানুয়ারি, পরে ৩০ জানুয়ারি ও সর্বশেষ ১৯ জানুয়ারি জেলার সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ও পাউবো-প্রকৌশলীকে চিঠি দেন।
নীতিমালা অনুযায়ী বাঁধের মাটি কমপেকশন না হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন জেলার বিভিন্ন হাওরপাড়ের কৃষক ও স্থানীয় লোকজন। এরমধ্যে ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে শাল্লা উপজেলার বরাম হাওরের পিআইসি নং-১ এর সভাপতি দিলোয়ার হোসেন, পিআইসি নং-৪৮ এর সভাপতি মজনু মিয়া, ভাণ্ডারবিল হাওরের পিআইসি নং-২১ এর সভাপতি গনেশ দাস, সত্যেন্দ্র দাস, পিআইসি নং-৪ এর সভাপতি হরেন্দ্র দাস ও পিআইসি নং-৩ সভাপতি মিহির চক্রবর্তীর বাঁধে ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে। স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে ওই সব পিআইসির লোকেরা সরকারি টাকা লুটপাটের পায়তারা চালাচ্ছে। শাল্লা ইউনিয়নের পিআইসি নং-১০০, ১০২, ১০৩ এই বাঁধগুলোতে যন্ত্রদানব বাঁধের গোঁড়া থেকে মাটি কাটলেও ওই বাঁধগুলোতে কোনো দুরমুজ করা হয়নি।
এদিকে পিআইসি নং-৮৩ এর সভাপতি মোঃ আমিনুল ইসলাম চৌধুরীর বাঁধেও এখনও পর্যন্ত ৫০ ভাগ কাজ হয়নি। অথচ নির্ধারিত সময়ের ৯ দিন পেরিয়ে গেল। কুশিয়ারা নদীর উত্তরপাড়ের ভেরাডহর হাওরের পিআইসি নং-৫০, ৫১, ৫২ প্রকল্প বাঁধের কাজ এখনো ৪০ ভাগও হয়নি। তবে এখানে একটি পিআইসিতে কাজ শুরু হলেও বাকি দুটি পিআইসিতে এখনো কাজ শুরু হয়নি।
অন্যদিকে আনন্দপুরের মাদারিয়া বাঁধে বরাদ্দের পরিমাণ বেশি থাকলেও ৪০ ভাগ কাজও এখনো সমাপ্ত হয়নি। উদগল হাওরের জয়পুর ও রামপুরের মধ্যখানে পিআইসির সভাপতি অমরচাঁদ দাসের বাঁধে এখন পর্যন্ত ৪০ ভাগ কাজ করা হয়নি। বাহাড়া ইউনিয়নের ভাণ্ডাবিল হাওরের ১৯.৫০০ কিলোমিটার হতে ২০.৫০০ কিলোমিটার মোট ১০০০ মিটার ভাঙ্গা বন্ধকরণ মেরামতের কাজটি অপ্রয়োজনীয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এই বাঁধের পিআইসি নং-১৪। বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৩ লাখ ১০ হাজার ৩১২ টাকা। সভাপতি সত্যবান রায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করে সামান্য মাটি ফেলে কাজের সমাপ্ত করতে যাচ্ছে। এছাড়াও এই বাঁধে দুরমুজ করা হয়নি। যন্ত্রদানব দিয়ে বাঁধের নিকট থেকে মাটি কেটে বাঁধকে হুমকির মুখে ফেলছে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুবকর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, ‘নীতিমালা অনুযায়ী বাঁধের দুরমুজ করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে বার বার কাবিটা উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিবকে চিঠি দেয়া হয়েছিল। তারপরও সঠিকভাবে নীতিমালা অনুসরণ হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বাঁধের প্রকৃত অবস্থা দেখেই বিল প্রদান করার জন্য অনুরোধ করা হবে’।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: