শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩১ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
সাঙ্গ হলো প্রথম বাকযুদ্ধ: সিএনএন এর জরিপে এগিয়ে হিলারি

সাঙ্গ হলো প্রথম বাকযুদ্ধ: সিএনএন এর জরিপে এগিয়ে হিলারি

h-tআমার সুরমা ডটকম ডেক্সসাঙ্গ হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের দুই প্রার্থী ডেমোক্র্যাট হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে প্রথম বাকযুদ্ধ। নিউইয়র্কের হফস্ট্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তন জমে উঠেছিলো এ বছরের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের প্রথম ও ঐতিহাসিক এই বিতর্ক। বিতর্কের শুরুতেই কিছুটা শান্ত পরিস্থিতি থাকলেও উত্তেজনা শুরু হতে সময় লাগেনি। যেমনটা প্রত্যাশা কিংবা আশঙ্কা করা হচ্ছিলো, সরাসরি আক্রমণে চলে যান রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প। আর শান্তভাব বজায় রাখতে পারছিলেন না ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনও। হিলারি যখন কথা বলছিলেন তার মাঝেই কথা বলে উঠেছেন ডনাল্ড। উপস্থাপককে দফায় দফায় হস্তক্ষেপ করে তাকে থামাতে হয়েছে। সেই পুরনো কথা সেই পুরনো প্রসঙ্গ টেনে আনাই হলো একে অপরের ক্ষেত্রে। শেষ প্রশ্নের উত্তরে প্রেসিডেন্সিয়াল লুক হিলারির নেই, তার শারীরিক শক্তিও নেই, সে কথাই বললেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এও বললেন, বিশ্বের বড় বড় শক্তির সঙ্গে নেগোশিয়েশনের শক্তিও হিলারির নেই। হিলারিও তার শেষ সুযোগে তুলে আনলেন, ডনাল্ড ট্রাম্পের নারী অবমাননার কথা। নারীদের পিগি, হাউসকিপিং, নারীরা বাচ্চা প্রসব করবে এটাই কাজ। এগুলো তুলে ধরেন। উত্তরে ডনাল্ড ট্রাম্প ‘মিথ্যা বলছেন, মিথ্যা বলছেন’ ছাড়া আর কিছুই বলতে পারলেন না। আর এই বললেন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার করতে বিজ্ঞাপন বানাতে হিলারি বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছেন। বিতর্কের শুরুতেই ওঠে লোন প্রসঙ্গ। বাবার কাছ থেকে ১৪ মিলিয়ন ডলার লোন নিয়ে ডনাল্ড ট্রাম্প তার ব্যবসা শুরু করেছেন। হিলারি ক্লিনটনের এমন বক্তব্যের জবাবে ডনাল্ড ট্রাম্প বললেন, আমি খুব অল্প লোনই পেয়েছিলাম। হিলারি তুলে ধরেন, ওয়াশিংটন পোস্ট ফ্যাক্ট চেকাররা দেখিয়েছে ট্রাম্প ১৯৮৫ সালে তার বাবার কাছে থেকে ১৪ মিলিয়ন ডলার নিয়েই ব্যবসা শুরু করেন। হিলারি ক্লিনটন আরও বলেন, হাউজিং খাতে সঙ্কট তৈরি করেছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। যাতে লাখ লাখ আমেরিকানকে ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। যার উত্তরে ট্রাম্প বলেন, এটাই ব্যবসা। জলবায়ু পরিবর্তনকে একটি ফালতু আলোচনা বলেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প, স্মরণ করেন ক্লিনটন। ‘আমি কখনো এ কথা বলিনি, আমি কথনো বলিনি’ বলেই প্রতিবাদ করেন। সরকারি কাজে ব্যক্তিগত ইমেইল ব্যবহার সম্পর্কে হিলারি নিজেই উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, আমি জানি ট্রাম্প অবশ্যই সে প্রসঙ্গ তুলবেন। তাই আগেই বলে রাখতে চাই, আমি একটি ভুল করেছি। এবং সে জন্য আমি দুঃখিত। উত্তরে ট্রাম্প বলেন, সেটি ভুলের চেয়েও বড় কিছু ছিলো। আমি মনে করি হিলারি ইচ্ছা করেই সে কাজ করেছেন। হিলারি ক্লিনটন বলেন, ট্রাম্প নিজেকে ঋণের রাজা বলতে পছন্দ করেন। আর তিনি নিজেকে ৬ দফা দেউলিয়া ঘোষণা করেছেন। কিন্তু আমেরিকায় আরও অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী রয়েছেন যাদের একবারও নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে হয়নি। উত্তরে সুনির্দিষ্ট জুতসই কোনও জবাব দিতে ব্যর্থই হয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের ট্যাক্স রেকর্ড প্রকাশের প্রসঙ্গ তোলেন হিলারি ক্লিনটন। কিন্তু উত্তরে ট্রাম্প বলেন, তিনি তার ট্যাক্স রেকর্ড প্রকাশ করবেন যদি হিলারি তার ৩৩ হাজার ইমেইল প্রকাশ করেন। হিলারি বলেন, হতে পারে ভয়াবহ কিছু রয়েছে যা ট্রাম্প লুকাতে চাইছেন। হতে পারে তিনি আসলে ততটা ধনী নন, যতটা তিনি বলছেন। ট্রাম্পের কাছে তার ব্যবসা নিয়ে যে সব প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে জানতে চান ক্লিনটন। এমনকি কর্মীদের কম বেতন-মজুরি দেওয়া, ঠিকাদারদের অর্থ পরিশোধ না করা ইত্যাদি প্রসঙ্গ তুলে আনেন। তিনি বলেন, আমার অনেকের সঙ্গেই কথা হয়েছে, তারা জানিয়েছে ট্রাম্প তাদের ঠকিয়েছেন। উত্তরে ট্রাম্প বলেন, তিনি অত্যন্ত স্মার্ট ম্যানেজার ছিলেন, আর যুক্তরাষ্ট্রের আইনের সুবিধা তিনি নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, কোটি কোটি আমেরিকানের পাশাপাশি পুরো বিশ্বের রাজনীতি সচেতন সবার মনোযোগ ছিলো ‘গ্রেটেস্ট পলিটিক্যাল শো অন আর্থ’ খ্যাত এ বিতর্কযুদ্ধে। এই লড়াইয়েই প্রমাণ হবে হোয়াইট হাউসে ওঠার দৌড়ে যুক্তি-তর্কে এগিয়ে থাকছেন কে। আগামী ৮ নভেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই প্রার্থীর মধ্যে হবে ৩ দফা বিতর্ক। বিতর্কে নিজেদের যোগ্যতার কথা দেশবাসী তথা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে হিলারি ও ট্রাম্পের। তাদের যুক্তি-তর্ক বিচার-বিশ্লেষণ করেই অনেক ভোটার, বিশেষ করে তরুণরা সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রথম বিতর্কের সঞ্চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এনবিসি নাইটলি নিউজের উপস্থাপক লেস্টার হল্ট। বর্ণবাদীতা, অপরাধ ও বিচারব্যবস্থা প্রসঙ্গও উঠে আসে এই বিতর্কে। আর ডনাল্ড ট্রাম্প স্টপ অ্যান্ড ফ্রিস্ককে একটি সহজ সমাধানের পথ হিসেবে উল্লেখ করেন। ব্যাপকভাবে এর বাস্তবায়নও চান। সঞ্চালক লেস্টার হল্ট তার মন্তব্যেই এই ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক বলে তুলে ধরেন। কিন্তু ট্রাম্প বলে ওঠেন, ‘আপনি ভুল বলছেন।’ হিলারি ক্লিনটন তার বক্তৃতায় বলেন, এই ব্যবস্থা মোটেই কার্যকর নয়। তিনি এর পরিবর্তে কমিউনিটি পোলিসিংয়ের ওপর জোর দেন। কিন্তু ডনাল্ড ট্রাম্প আবার চিৎকার করে বলতে থাকেন- ‘না এর ভীষণ একটা প্রভাব আছে।’ এ পর্যায়ে ট্রাম্প বলেন, ৯০ এর দশকে হিলারিই একবার কৃষ্ণাঙ্গ যুবকদের লুণ্ঠনকারী বলেছিলেন। তিনি বলেন, হিলারিই এই শব্দের প্রথম ব্যবহারকারী। আর সে জন্য তিনি ক্ষমা প্রার্থনাও করেছেন। কিন্তু আমি মনে করি এমন একটি শব্দের ব্যবহার ছিলো ভয়াবহ। ১৯৯৬ সালে হিলারি এই বক্তব্য দিয়েছিলেন। তখন ইনার-সিটি গ্যাংগুলো শিশুদের নিয়োগ করে সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছিলো। তখন হিলারি বলেছিলেন, এদের প্রতি কোনও সহানুভূতি নেই কোনও ছাড় নেই। ট্রাম্প তার বক্তৃতায় প্রশ্ন তোলেন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মেছিলেন। আমি তাকে জন্মসনদ দেখানোর জন্য বলেছি। আর আমি মনে করি সঠিক প্রশ্নটিই করেছি। ডনাল্ড ট্রাম্প আরও বলেছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার প্রেসিডেন্ট নন। তিনি বলেন, হিলারির সঙ্গে একটি বিষয়ে আমি একমত- বিশ্বের একমাত্র বড় সমস্যা পরমাণু অস্ত্র, বিশ্ব উষ্ণায়ন নয়, যেমনটা প্রেসিডেন্ট ওবামা মনে করছেন। ওবামা আমেরিকায় জন্মই নেননি, তার প্রেসিডেন্সিরেই কোনও বৈধতা নেই, বলেন ট্রাম্প। বর্ণবাদী ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্বের কথাও উঠে আসে। আফ্রিকান-আমেরিকানদের ওপরে চড়াও হওয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করেন ডনাল্ড ট্রাম্প। উত্তরে হিলারি ক্লিনটন বলেন, ট্রাম্পের পূর্ণ ইতিহাসই বর্ণবাদিতায় ভরা। এমনকি তার তৈরি আবাসনগুলোতেও কৃষ্ণাঙ্গদের স্থান হয়না। তার আচরণই বর্ণবাদী। বিতর্ক শুরুর আগ থেকেই টেলিভিশন, স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় চোখ লেগে ছিলো ১০ কোটিরও বেশি আমেরিকানের। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে চোখ রেখেছে বিশ্বের রাজনীতি সচেতন কোটি কোটি মানুষও। স্থানীয় সময় সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে অনুষ্ঠিত এই বিতর্ক শেষ হওয়ার পরপরই সিএনএন এর জরিপে ট্রাম্পকে পেছনে ফেলেন হিলারি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: