শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৬:১৬ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩

সিলেটে অবশেষে টানা পাঁচ বারের শ্রমিকের সভাপতি ফেল

amarsurma.com
অবশেষে গ্রেফতার দাদন ব্যবসায়ি হবু

সুজায়াত আহমদস্টাফ রিপোর্টার (সিলেট থেকে):

সিলেটের পরিবহন সেক্টরে অবশেষে পতন হলো ‘ফলিক সাম্রাজ্য’র। অনিয়ম, দুর্নীতি, আত্মসাৎ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিককে সংগঠনের কার্যনিবাহীর কমিটির সভায় সংবিধানের ২৬ গ ধারা মোতাবেক বহিস্কার করা হয়েছিলো। কিন্তু এই বহিস্কার মেনে নেননি ফলিক মিয়া। ফলে উত্তপ্ত হয়ে সিলেটে পরিবহন শ্রমিক অঙ্গন।

গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠা পরিবহন শ্রমিক অঙ্গন অবশেষে ১ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শান্ত হলো। সিলেট জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি. ন-১৪১৮)-এর ২১ তম ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি পদে লড়াই করে হেরে গেছেন আলোচিত-সমালোচিত সেলিম আহমদ ফলিক। নতুন সভাপতি হয়েছেন ময়নুল ইসলাম।

জানা যায়, সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসের কারণে মার্চ মাসের শেষের দিকে সিলেটে শ্রমিকরা গাড়ি চালাতে না পারায় খুব কষ্টে জীবন যাপন করেন। তার মধ্যে রোজার মাস ও পবিত্র ঈদুল ফিতর থাকায় সাধারণ শ্রমিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। শ্রমিকরা কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে আর্থিক সহযোগিতার জন্য নেতাকর্মীদের কাছে যায়।

এ সময় মিতালী পরিবহণ শাখার সাবেক সভাপতি জসিম নামের এক শ্রমিক সভাপতি ফলিকের কাছে মোবাইল ফোনে কিছু খাদ্য সামগ্রী দেয়ার কথা বললে সভাপতি ফলিক ঐ শ্রমিককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এ বিষয় নিয়ে শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে শ্রমিক সংগঠনের তহবিলে জমানো কল্যাণ ফান্ডের টাকার হিসাব চায়। কিন্তু সভাপতি ফলিক টাকার হিসাব দিতে নানা অজুহাত দেখান, তাতে শ্রমিকরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

এমনকি বিগত ২০১৭ সালে জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি এজাজ আহমদের একটি সভা ছিল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে। ঐ সভায় সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল মন্নান উপস্থিত থাকার কারণে সহ-সভাপতির পদ থেকে উনাকে বহিস্কার করেন সেলিম আহমদ ফলিক। আব্দুল মন্নানের মালিকানাধীন সিলেট-জ-১১-০৪৩০ নম্বরের গাড়িটি ফলিক মিয়া ৪ বৎসর যাবৎ বন্ধ রেখেছেন এবং মন্নান মিয়াকে বিভিন্ন মামলায় হয়রারি করেন সেলিম আহমদ ফলিক এমন তথ্য দিয়েছেন জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুহিম। হাইরোড দিয়ে ঢাকায় যাওয়ার সময় মধ্যবর্তী রাস্তায় প্রতিটি গাড়ি সামান্য বিশ্রাম ও হালকা খাবার জন্য গাড়ীগুলো বিভিন্ন হোটেলে দাঁড় করানো হয়। এই সব হোটেল থেকেও ফলিক মিয়া বখরা পেয়ে থাকেন এবং ঐ হোটেলে গাড়ী থামানোর নির্দেশ দেন ফলিক মিয়া, এমনকি যে হোটেল থেকে বখরা পাওয়া যায়না ঐ হোটেলে গাড়ী দাঁড় না করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

অনেক গাড়িকে তাহার মনোনীত পেট্রোল পাম্প থেকে তেল কিনার জন্য বলেন তিনি এবং ঐ পেট্রোল পাম্পগুলো থেকেও তিনি বখরা পেয়ে থাকেন বলে জানা যায়। সাধারন শ্রমিকদের দাবীর সাথে কার্যনিবাহী কমিটির নেতৃবৃন্দও একমত প্রকাশ করে সভাপতিকে সাধারণ সভার মাধ্যমে শ্রমিকদের হিসাব দেয়ার জন্য বলেন। কিন্তু তিনি কারো কথার কোনো গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো নানা টালবাহানা ও ঝগড়া বিবাদ শুরু করেন।

ফলিক মিয়ার এ একগোয়ামী ও ক্ষমতার দাপটে অতিষ্ট শ্রমিকরা গত ২ জুলাই কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের আসমা ম্যানশনের সামনে এক সভার আয়োজন করে। সভা চলাকালীন সময়ে সেলিম আহমদ ফলিকের ছেলে রোকন আল সামি বন্দুক দিয়ে শ্রমিকদের সভায় অতর্কিত ভাবে গুলি এবং ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী তুমুল সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। উভয় পক্ষের সংঘর্ষে প্রায় ৫০ জন শ্রমিক আহত হয়। পরে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তাৎক্ষনিক ঘটনার মিমাংসার স্বার্থে সড়ক পরিবহনের কয়েকজন সিনিয়র নেতা ও সিলেট জেলা ট্রাক শ্রমিক ইনিয়নের কয়েকজন নেতা বিষয়টি সমঝোতার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেন।

পরে কয়েক দফায় জেলার ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের কয়েকজন নেতা ও শ্রমিক ইউনিয়নের সিনিয়র নেতারা সভাপতি ফলিক মিয়াকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নি। কল্যান ফান্ডের ২ কোটি টাকা ও সড়ক পরিবহনের নিজস্ব ৪টি গাড়ি বিক্রির টাকা কয়েক মাসের গাড়ীর ইনকামসহ টাকার হিসাব দিতে পারেন নি। পরে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বর্তমান কার্যনিবাহী কমিটির কাছে এ ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করেন। তাই বাধ্য হয়ে সিলেট জেলার সড়ক পরিবহনের বর্তমান কমিটির সকল সদস্যগন গত বছরের ৯ জুলাই সংগঠনের কার্যালয়ে এক সভায় সংগঠনের শৃংখলা ভঙ্গ টাকা আত্মস্বাৎ, অনিয়ম ও দূর্নীতির কারনে সংগঠনের সংবিধানের ২৬ এর গ ধারা মোতাবেক সভাপতি সেলিম আহদ ফলিককে বহিস্কার করা হয়। কিন্তু সেলিম আহমদ ফলিক এ বহিস্কার মেনে নিতে না পেরে ফেইছ বুক লাইভের মাধ্যমে পাল্টা প্রতিবাদ জানান। এমনকি শ্রমিকদের নানা হুমকি ও পাল্টা বহিষ্কারের আলটিমেটাম দেন।

পরে ২৫ জুলাই সিলেট জেলা সড়ক পরিবগণ শ্রমিক ইউনিয়নের কার্য্যালয় খোলা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে থমথমে অবস্থার বিরাজ করলে স্থানীয় ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ তৌফিক বক্স লিপন ও দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি আখতার হোসেনের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

এদিকে ফলিক সিলেট জেলা সড়ক পরিবহনের নিজস্ব ৪টি বাসের ৪৫ লক্ষ টাকার তিনটি চেক সংগঠনের সহ-সভাপতি শাহ জামালের মাধ্যমে প্রদান করে দেন। চেকগুলো ব্যাংকে নিয়ে গেলে এই চেকগুলো থেকে কোন টাকা পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে ফলিকের অসন্তুষ্ট ছিলেন পরিবহন শ্রমিকরা। সেই অসন্তুষ্টির বহিপ্রকাশ ঘটে ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: