শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০৫ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩

সুনামগঞ্জে এক বছরে ১৯৪ জনের আত্মহত্যা

amarsurma.com
দিরাইয়ে বিষপানে যুবকের মৃত্যু

মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
সুনামগঞ্জে গত এক বছরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৪৫ জন, বিষপানে মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৯ জন। আত্মহননকারী এসব ব্যক্তিদের বয়স ২০-৪০ বছরের মধ্যে। জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। সূত্র মতে, পারিবারিক কলহ, প্রেমে ব্যর্থতা, মানসিক হতাশাই অন্যতম কারণ বলে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। কোনো ধরনের অভিযোগ না পাওয়ায় এসব অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর পরিণতি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেই শেষ হয় থানার দায়িত্ব।
সূত্রে আরও জানা যায়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে নিজ ঘরে বাঁশের আড়ের সাথে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে শান্তিগঞ্জের পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের বাঘেরকোণা গ্রামের জুবেল আহমদ নামের ২০ বয়সের এক তরুণ। বিয়ে বাড়ি থেকে ফিরে নির্জন ঘরে ঢুকে আত্মহত্যা করে তিনি। তার আত্মহত্যার কারণ কি হতে পারে জানে না পরিবার। ৫ ফেব্রুয়ারি একই উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নে ডুংরিয়া গ্রামে বিকাশ দাস (৪০) নামের এক ব্যক্তি গাছের ডালের সাথে দড়ি বেঁধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। তার মানসিক সমস্যা ছিল বলে দাবি পরিবারের। ২ ফেব্রুয়ারি শাল্লা উপজেলা পরিষদের বারান্দার গ্রিলের সাথে গামছা বেঁধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে অফিস সহায়ক সাদ্দাম হোসেন (২৫)।
এগুলো ছোট্ট একটি পরিসংখ্যান। এগুলো ছাড়াও এমন কোন মাস কিংবা সপ্তাহের কোনো না কোনো দিন এভাবেই জেলায় ঘটছে আত্মহত্যার ঘটনা। মানসিক রোগ, পারিবারিক কলহ, মাদকাসক্তি, কর্মসংস্থানের অভাব, দারিদ্রতা, বেকারত্ব, প্রেমে হতাশাসহ নানা কারণে হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলার অনেকে বেছে নিচ্ছেন আত্মহত্যার মতো বিপজ্জনক পথ। গত এক বছরে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আত্মহত্যায় অকাল মৃত্যু হয়েছে ১৯৪ জনের। যাদের মধ্যে ২০-৪০ বছরের বয়সীদের সংখ্যাই বেশি।
দেশের শিক্ষা ও অর্থনৈতিক সূচকে পিছিয়ে থাকা জেলা সুনামগঞ্জের জন্য আত্মহত্যার এমন পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন সচেতন মহল। ভবিষ্যতে এর ধারা অব্যাহত থাকলে সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তারা। আত্মহত্যার প্রবণতা রোধে যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ পারিবারিক কলহ দমনে তৃণমূল পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উপরে গুরুত্ব দিয়েছেন সুধীজন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ইসলামগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আবু সাইদ বলেন, হাওরাঞ্চলের তরুণদের বেশিভাগ কর্মসংস্থানের অভাবে বেকার। বেকার জীবন পারিবারিক কলহ ও হতাশার জন্ম দেয়। হতাশা থেকেই কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। যা সমাজের বড় ধরনের একটি অবক্ষয়। এ থেকে পরিত্রাণ খোঁজা জরুরি।
অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল হাকিম মনে করেন, আত্মহত্যা মূলত হতাশাজনিত কারণে হয়ে থাকে। একটি মানুষ মরতে চায় যখন তার জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের কোনো লক্ষণ নেই। তার ভবিষ্যতের উন্নতির কোনো সোপান খোঁজে সে পাচ্ছে না অথবা পারিবারিক কলহ। এসব কিছুর মূলেই অভাব অনটন, হতাশাগ্রস্ত, কর্মস্থানের অভাবসহ আরও অনেক কারণ থাকতে পারে। হতাশাগ্রস্ত যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান যদি করা যায়, যুবকদের কাজ-কর্মে ব্যস্ত রাখা যায়, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা যায়, যেসব কারণে তারা হতাশাগ্রস্ত সেগুলো যদি চিহ্নিত করে উপশম করা যায়, তাহলেই আত্মহত্যার প্রবণতা কমবে।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বিপিএম বলেন, গত বছরে সুনামগঞ্জে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ১৪৫ ও বিষপানে ৪৯ জন আত্মহত্যা করেছেন। পারিবারিক কলহ, প্রেমে ব্যর্থসহ নানা কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে এসব আত্মহত্যা সংঘটিত হয়েছে। বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে পুলিশ জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: