শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:০০ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
সুনামগঞ্জে সঠিক সময়ে শেষ হয়নি হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ, আন্দোলনের হুমকি হাওর বাঁচাও আন্দোলনের

সুনামগঞ্জে সঠিক সময়ে শেষ হয়নি হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ, আন্দোলনের হুমকি হাওর বাঁচাও আন্দোলনের

amarsurma.com

সাইফ উল্লাহ, সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জ হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ সরকার নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় শহীদ জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে অুনষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বাঁধের কাজের বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্ণীতির বাস্থব চিত্র সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সংগঠনের কার্যকরি সভাপতি আবু সুফিয়ানের সভাপিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়।
লিখিত বক্তব্য তিনি উল্লেখ করেন, ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা আমাদের সকল উপজেলা কমিটি ও আপনাদের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী নিশ্চিত হয়েছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করা হয়নি। আমরা শুরু থেকেই আশংঙ্কা করছিলাম এবারও সঠিক সময়ে কাজ শেষ হবে না। তাই প্রমানীত হলো।
পানি উন্নয়ণ বোর্ড সুত্র জানায় ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আমদের বিভিন্ন উপজেলা কমিটির কাছ থেকে খোজ নিয়ে যা জেনেছি এবং কৃষকরা দাবি করেছেন কাজ হয়েছে ৫০-৬০ ভাগ। তবে কোথাও কোথাও ৩০ ভাগও হয়নি। গত ২০ ফেব্রুয়ারি একটি বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। এটা কবে শেষ হবে আমরা জানিনা। হাওরে অনেক অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মান করে সরকারী অর্থ আত্মসাতের পায়তারাও চলছে।
আমাদের দাবি ছিলো প্রকাশ্যে সমাবেশের মাধ্যমে পিআইসি গঠন করার জন্য। তিনি আমাদের দাবি মানলেন না। তাদের খেয়াল খুশি মতো ইউএনও কার্যালয়ে বসে পিআইসি গঠন করা হয়। সঠিক সময়ে কাজ শুরু হলো না, শেষও হলো না। এবার হাওর রক্ষা বাঁধে সবচেয়ে বেশী অনিয়ম ও দূর্নীতি হচ্ছে দিরাই-শাল্লা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদরে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু এবং শেষের ব্যাপারে প্রশাসদের তৎপরতা না থকালেও কাজের শেষ সময়ে এসে তারা তৎপর হয়ে উঠছেন, গত তিন দিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলার পিআইসি সভাপসিদের গ্রেফতারের হিরিক পড়েছে আমরা মনে করি এটা প্রশাসন নিজকে ধায় মুক্তি করার জন্য করছে। কাজ শুরু থেকে পিআইসিকে চাপে রাখলে ২৮ ফ্রেবুয়ারির আগেই কাজ শেষ হয়ে যেতো। আমরা বলে দিতে চাই হাওরের কোন বিপর্যয় হলে এর দায় প্রশাসনকে নিতে হবে। আমরা সুনামগঞ্জের কৃষকদের নিয়ে প্রয়োজনে পাউবো অফিস, ডিসি অফিস, ইউএনও অফিস ঘেরাও কর্মসূচি দেবো। আদালতে মামলা করবো, কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, আমরা লক্ষ করছি কয়েকদিন যাবত বিভিন্ন উপজেলায় পিআইসি সভাপতি/সদস্য সচিবকে আটক করে মুচলেকার মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হচ্ছে। কাজের শেষ সময়ে এসে এসব কেন? এখনতো প্রশাসনের উচিত আনুষ্ঠানিক ভাবে বাঁধের কাজ শেষ ঘোষণা করা। এগুলো সময় বাড়ানো এবং নিজেদের উপর থেকে দায় সড়ানোর পায়তারা কি না? আমরা তাদের স্পষ্টভাবে জানাতে চাই যথাযত সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ার ফলে হাওর ডুবি হলে এর দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। পাউবোর অগ্রগতি প্রতিবেদনেও হাওরের কাজের সঙ্গে কোন মিল নেই।
তিনি তাদের পরিদর্শন রিপোর্ট উল্লেখ করে বলেণ, আমরা গত ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যে বাঁধগুলো পরিদর্শন করেছি তাতে কোথাও মাটির কাজ শেষ হয়েছে এমন বাঁধ আমরা দেখিনি। আমরা যে বাঁধগুলো পরিদর্শন করেছি তার মধ্যে দিরাই উপজেলার পিআইসি নং ৪, ৫, ৬, ৯, ১৩, ১৩ (ক), ১৪ (ক), ২৯ ও ৩৯নং পিআইসির কাজের অবস্থা খুব নাজুক। এখানে বাঁধ তৈরীর কোন নীতিমালা মানা হয়নি। দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পিআইসি নং ০১, ৩, ৪, ৬, ৯, ১৪, ১৫, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৪১, ৪২, ৪৩, শাল্লা উপজেলার ১৪, ১৫, ২৩, ২৬, ৪৪, ৬৩, ৬৭, ৭১, ৭৪, ৭৬, ৮৯, ৯০, ১১১, ১১২, ১২৫, ১৩২, ১৩৭, ২৭, ৪১, ১১০, ১২৪, ১৩২ (ক), ৩৯, ৪০, ৪১, ৬৫,৭৪, ১০৭, ১২৩, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১২৯, ১৩০, ১৩১, ১৩৩, ১৩৪, ১৩৮,১৩৯, ৮১,৮২ ও ৮৩। জগন্নাথপুর উপজেলার ০২, ১১, ১২ জামালগঞ্জ উপজেলার ২৫, ২৬, ২৮, ২৯, ৩২, ৩৫, ৩৭, ৫১, ৫৬, ৬১, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার পিআইসি নং ০১, ০২, ০৬, তাহিরপুর উপজেলার ৩৭,৩৮,৩৯,৫৯,৬০ উক্ত বাঁধগুলোতে কাজের মান খুবই খারাপ এমনকি বাঁধ নির্মানের নীতিমালা মানা হয়নি কাজের ক্ষেত্রে। এখন পর্যন্ত কাজও শেষ হয়নি।
শাল্লা উপজেলার পিআইসি নং-৯৮ একটি কবর স্থানের সামনে দিয়ে বাঁধ নির্মান করা হয়। বাঁধটির উচ্চতা কবর স্থানের উচ্চতার চেয়ে কম। বাঁধটির দৈর্ঘ ৪৮০ মি. দেখানো হলেও বাস্তবে তার দৈর্ঘ ৩০-৫০ মি. মানুষ মনে করছে পিাইসির নামে সরকারী টাকার শ্রাদ্ধ করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জেলায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়র সাংবাদিক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ এর উপদেষ্টা রনেন্দ্র কুমার দে, সহ-সভাপতি সুখেন্দু সেন, কার্যকারী কমিটির সদস্য ডা. মুর্শেদ আলম, মুক্তিযোদ্ধা মালেক হোসেন পীর, ইয়কুর বখত বহলুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালেহীন চৌধুরী শুভ, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরানুল হক চৌধুরী, এ কে কুদরত পাশা, সদর উপজেলা সভাপতি স্বপন দাস, সাধারণ সম্পাদক শহীদ নুর আহমদ, দিরাই উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম সরদার, চন্দন রায়, মানব চৌধুরী, সাবেক পৌর কমিশনার মতি লাল চন্দ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, সুনমগঞ্জের ১১টি উপজেলায় এবার ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ করবে ৭৪৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)। যার মধ্যে সদর উপজেলায় ২৭টি, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ২৬টি, ধর্মপাশায় ১৭৯টি, তাহিরপুর ৭০টিম জামালগঞ্জে ৬৯টি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৫০টি, দিরাই ১০১টি, শাল্লা ১৩৭টি, জগন্নাথপুর ৪৫টি, দোয়ারাবাজারে ৩৪টি, ছাতক ১১টি রয়েছে। তাতে খরচ হবে ১শ ৩৩ কোটি ১৮ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: