শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৬ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩

২০ দলে আবারও ভাঙন

amarsurma.com

মাহমুদুল হাসান:

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের সমীকরণ মেলাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় শুরু হয়েছে জোট ‘ভাঙা-গড়ার খেলা’। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের পরিসর ক্রমশ ছোট হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ জোট ছেড়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও ইসলামী ঐক্যজোটসহ কয়েকটি দল। এবার ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে খেলাফত মজলিশ।

যদিও শুধু ২০ দলীয় জোট নয়, সব রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের ঘোষণা দিয়েছে দলটি। তবে খেলাফত মজলিশের জোট ছাড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় জোটের প্রধান দল বিএনপি। সব রাজনৈতিক দলের নিজস্ব আঙ্গিকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে বলে জানান দলটির দায়িত্বশীল নেতারা।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জোট ত্যাগের ঘোষণা দেন খেলাফত মজলিশ আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক। লিখিত বক্তব্যে জোট ছাড়া প্রসঙ্গে খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, খেলাফত মজলিশ একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। জাতির প্রয়োজনে সর্বদা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে।

খেলাফত মজলিশ নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-সংগ্রামে বিশ্বাসী। একটি সুশৃঙ্খল সংগঠন হিসেবে দীর্ঘ তিন দশকেরও অধিক সময় রাজনৈতিক অঙ্গনে দেশ, জাতি, ইসলাম ও জনগণের পক্ষে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে। খেলাফত মজলিশ মনে করে, দেশের প্রতিটি নাগরিকের রাজনৈতিক মতাদর্শ লালন পালন করার অধিকার আছে। যা গণপ্রজাতন্ত্রিক বাংলাদেশের সংবিধান স্বীকৃত।

একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে খেলাফত মজলিসের রাজনৈতিক কর্মকৌশল সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় সময়ে সময়ে পর্যালোচনা করে, দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক জোট ইস্যুকেন্দ্রিক গঠিত হয়। জোট কোনো স্থায়ী বিষয় নয়। খেলাফত মজলিস ২০ দলীয় জোটে দীর্ঘ ২২ (বাইশ) বছর ধরে আছে। ২০১৯ সাল থেকে ২০ দলীয় জোটের দৃশ্যমান রাজনৈতিক তৎপরতা ও কর্মসূচি নেই। ২০১৮ সালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে ২০ দলীয় জোটকে কার্যত রাজনৈতিকভাবে অকার্যকর করা হয়। এমতাবস্থায় আদর্শিক, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি মজলিসে শূরায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খেলাফত মজলিস আজকের (শুক্রবার) মজলিসে শূরার অধিবেশনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, খেলাফত মজলিস আদর্শিক রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে স্বকীয়-স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে ময়দানে ভূমিকা রাখবে এবং এখন থেকে ২০ দলীয় জোটসহ সব রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করছে।

জমিয়তসহ সব দলই বিএনপির বিরুদ্ধে ‘অবহেলার’ অভিযোগ করেছে। তবে খেলাফত মজলিসের জোট ছাড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় জোটের প্রধান দল বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, খেলাফত মজলিস একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে দীর্ঘদিন জোটে ছিল। বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে। সুতরাং এটা নিয়ে বিশেষ কিছু মন্তব্য নেই।

খেলাফত মজলিস ২০ দলীয় জোট ছাড়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, যে কোনো দলেরই জোট ছাড়ার অধিকার বা স্বাধীনতা রয়েছে। স্বতন্ত্র দল হিসেবে যে কোনো দল যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। এটা তাদের দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। মূলত আমরা অনেকগুলো রাজনৈতিক দল একটি লক্ষ্য নিয়ে জোটবদ্ধভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। এখন তারা যদি মনে করে জোটের প্রয়োজনীয়তা নেই, তাহলে তারা ছেড়ে যেতেই পারে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে চারটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। মূলত ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পরই ২০ দলীয় জোট রাজনৈতিকভাবে অকার্যকর হয়। ফলে জোটের বিভিন্ন শরিক দলগুলোর মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়। বাড়তে থাকে হতাশা। একপর্যায়ে ২০-দলীয় জোটে থাকা একমাত্র নিবন্ধিত ইসলামি দল খেলাফত মজলিস জোট ছাড়ার ঘোষণা দিল। এর বাইরে যে কয়টি ইসলামি দল জোটে আছে, সেগুলো মূলত এর আগে বেরিয়ে যাওয়া দলগুলোরই পৃথক অংশ। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট (আবদুর রকিব) ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (মনসুরুল হাসান) আরেকটি অংশ ২০-দলীয় জোটে থাকলেও তাদের নিবন্ধন নেই।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে সহিংসতার মামলায় গত ২৪ এপ্রিল গ্রেফতার হন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের। তাকে মুক্ত করতে দলের কেউ কেউ বিএনপির জোট ছাড়ার দাবি তোলেন। কারণ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বিএনপির জোট ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পর দলটির নেতারা মুক্তি পান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, খেলাফত মজলিস তাদের সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছে। আমাদের জোট গঠনের উদ্দেশ্য ছিল ভোটের জন্য। এখন ভোটের অবস্থা সবার কাছে দৃশ্যমাণ।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আরো তো রাজনৈতিক দল ২০ দলীয় জোট ছেড়েছে। তাতে বিএনপির কিছু হয়নি। সুতরাং উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।

উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোট নিয়ে চারদলীয় জোট গঠিত হয়। তখন ইসলামী ঐক্যজোটের ৫টি শরিক দলের অন্যতম ছিল শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। একপর্যায়ে শায়খুল হাদিস চারদলীয় জোট ছেড়ে গেলে একাংশ থেকে যায়, তারা খেলাফত মজলিস নামে নতুন দল গঠন করে নিবন্ধন নেয়।

সূত্র ঃ দৈনিক খোলাকাগজ

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: