শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
আজ পবিত্র শবে মিরাজ

আজ পবিত্র শবে মিরাজ

patorমোঃ আবদুর রহিম : আজ ২৬ রজব, বুধবার দিবাগত রাতে পবিত্র শবে মিরাজ। মহান আল্লাহ তায়ালার দীদার লাভ এবং সমগ্র সৃষ্টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অবলোকনের জন্য আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় মহানবী (সা)-এর বিশেষ ভ্রমণ বা ঊর্ধ্বগমনই পবিত্র মিরাজের ঘটনা। মহানবী (সা) এর অসংখ্য মোজেজার মধ্যে পবিত্র মিরাজ অন্যতম শ্রেষ্ঠ মোজেজা। মিরাজ শব্দের অর্থ ঊর্ধ্বগমন। মক্কা শরীফ হতে বায়তুল মোকাদ্দাস (ফিলিস্তিন) এবং বায়তুল মোকাদ্দাস হতে ঊর্ধ্বে গমন, সপ্তআকাশ ভ্রমণ নবীগণের সাথে সাক্ষাৎ, বেহেস্ত, দোজখ, দর্শন এবং সিদরাতুল মোনতাহা পর্যন্ত গমন। সিদরাতুল মোনতাহা থেকে রফরফের মাধ্যমে আরশে আযীমে গমন, সেখান থেকে লা-মাকান ভ্রমণ এবং আল্লাহর দীদার ও সান্নিধ্য লাভ। সেখান থেকে পুনরায় পৃথিবীতে (মক্কায়) আগমন। এই বিস্ময়কর সফর বা ভ্রমণকেই এক নামে মিরাজ বলা হয়। মক্কা থেকে বায়তুল মোকাদ্দাস, সেখান থেকে সপ্ত আকাশ পাড়ি দিয়ে সিদরাতুল মোনতাহা তার ওপরে ৩৬ হাজার বছরের পথ পাড়ি দিয়ে আরশে গমন এবং সেখান থেকে ৭০ হাজার নূরের পর্দা অতিক্রম করে (এক পর্দা হতে অপর পর্দার দূরত্ব ৫শ’ বছরের রাস্তা) একেবারে নির্জনে দীদারে এলাহীতে পৌঁছে সেখানে আল্লাহ তায়ালার সাথে ৯০ হাজার বাক্যবিনিময় করে মহানবী (সা) পুনরায় মক্কায় ফিরে এসেছিলেন। প্রিয় নবী নুরুন্নবী (সা)-এর মিরাজ ছিল বাস্তব, শারীরিক ও আধ্যাত্মিক ঘটনা। মিরাজের বাস্তবতার সাক্ষী হচ্ছেন মহান আল্লাহ তায়ালা ও তার পবিত্র কোরআন (সূরা বনী ইসরাইলের ১ম আয়াত ও সূরা নজমের ১ম থেকে ১৭ নং আয়াত) সাক্ষী হচ্ছেন স্বয়ং রাসূল (সা)-এর হাদীস শরীফ। এছাড়া ৩০ জন সাহাবী মোতাওয়াতির বর্ণনা দ্বারাও মিরাজের বাস্তবতা প্রমাণিত তাফসীর গ্রন্থ কানযুল ঈমান। এছাড়া সাক্ষী হচ্ছে স্বয়ং জিব্রাইল (আঃ সা) ও সকল ফেরেশতা (তাফসীরে জালালাইন শরীফের ২২৯ পৃষ্ঠা), আরো সাক্ষী হলেনÑ হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা আ) ও হযরত মা উম্মেহানী (রা আনহা) আরো সাক্ষী হচ্ছে বিজ্ঞান। মিরাজের বিষয়ে কিছু কিছু তথাকথিত শিক্ষিত অজ্ঞরা বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু বৈজ্ঞানিকগণ মাধ্যাকার্ষণ শক্তি বরাতে মিরাজ সম্পর্কে বিতর্ক প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ, শূন্যে অবস্থিত কোন স্থলবস্তুকে পৃথিবী মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা সর্বদা এবং সমভাবে আকর্ষণ করতে পারে না একটা প্রমাণিত সত্য। তাছাড়া পৃথিবী থেকে কোন বস্তুকে ৬.৯০ সেকেন্ডে ৭ মাইল বেগে ঊর্ধ্বে ছুঁড়ে মারলে অথবা পরিচালিত করলে সে বস্তু আর মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে পৃথিবীতে ফিরে আসবে না। বৈজ্ঞানিকদের হিসাবে ঘণ্টায় ২৫ হাজার মাইল বেগে ঊর্ধ্বলোকে ছুটতে পারলে পৃথিবী হতে মুক্তিলাভ সম্ভব। আর এ গতিকে বলা হয় মুক্তগতি। এ মুক্তগতিতেই মহাশূন্য গবেষণা হচ্ছে। এতো গেল জড়পদার্থের কথা, কিন্তু মহানবী (সা)-এর মেরাজ বিষয়টি আর একটু ভিন্ন। কারণ, মেরাজের বাহন ছিল আল্লাহ তায়ালার কুদরতি বাহন। আর নবীজী (সা) ছিলেন মানবরূপের নূরদেহী। তার সৃষ্টি হচ্ছে আল্লাহতায়ালার জাতিনূর থেকে। তাইতো রাসূল (সা)-এর দেহের কোন ছায়া ছিল না। রাসূল (সা) নিজেই বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেন। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর নূর হতে এবং সমুদয় সৃষ্টি আমার নূর হতে (সুবহান আল্লাহ)। পবিত্র কোরআনের সূরা মায়িদার ১৫ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছে আমার নূর ও স্পষ্ট কিতাব। মিরাজের বিষয়ে অক্সিজেন না থাকার যে যুক্তি প্রদর্শন করা হয় সে ক্ষেত্রে সহজ জবাব হচ্ছে, ডিমের ভেতর বা মাতৃগর্ভে একটি সন্তান কিভাবে জীবিত থাকে। হযরত ইব্রাহীম (আ) কে আল্লাহ তায়ালা নমরুদের অগ্নিকু-ে কিভাবে বেহেশতী পরিবেশে জীবিত রেখেছিলেন। মাছের পেটের ভেতর কিভাবে জীবিত রেখেছিলেন হযরত ইউনূস (আ) কে। হযরত ইশা (আ) কে আল্লাহ তায়ালা কিভাবে আকাশে নিয়ে রেখেছেন এবং তাঁকে আবার এ ধরণীতে এনে হযরত ইমাম মাহদী (আ)-এর সাথে একত্র করাবেন ইহুদী নির্মূলে এবং ইসলামী বিশ্ব প্রতিষ্ঠায়। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা যা ইচ্ছা করেন তাই হয়। এ ক্ষেত্রে কোন ব্যত্যয় নেই। নূরের যেমন কোন ওজন নেই তেমনি নূর দেহেরও কোন ওজন নেই। নূর দেহ আধ্যাত্মিকভাবে যখন যেখানে খুশি যেতে পারে। এটাও মেরাজের একটি যুক্তি। তাছাড়া একই বস্তু বা পদার্থ এক এক পরিস্থিতিতে একেক চরিত্র ধারণ করে। কয়লার চরিত্র এক এবং কয়লা থেকে প্রস্তুত হীরকের আর এক চরিত্র বা গুণ। পানি তরল পদার্থ। শক্ত অবস্থানে নিলে পানির বরফ দ্বারা ঘর তৈরি সম্ভব। আর যখন পানিকে বাষ্পে পরিণত করা হয় তখন সে মেঘলোকে উড়ে বেড়ায়। স্রষ্টা ছিলেন গুপ্ত, কিন্তু তিনি প্রকাশ হওয়ার জন্যই নবী করীম (সা)কে সৃষ্টি করেছিলেন। আবার সমগ্র সৃষ্টিকে পরিপূর্ণরূপে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চেনানোর জন্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর হাবিব হযরত মোহাম্মদ (সা)কে মিরাজের মাধ্যমে সমগ্র সৃষ্টি প্রত্যক্ষ করানো শেষে সামনা-সামনি সাক্ষাৎ দিয়েছিলেন। অর্থাৎ রাসূল (সা)-এর আল্লাহ তায়ালার দীদার লাভ ঘটেছিল। আধ্যাত্মিক ও ইহলৌকিক বিষয়ে রাসূল (সা) সর্বশ্রেষ্ঠ এটাই মেরাজের মূল কথা। তাই স্থান, কাল ও গতির ওপর মানুষের যে অপরিসীম শক্তি ও অধিকার আছে, জড়শক্তিকে মানুষ অনায়াসে আয়ত্ত করতে পারে। মানুষের মধ্যে যে বিরাট অতিমানব ঘুমিয়ে আছে মিরাজ একথাই আমাদের বুঝিয়ে দেয়। মিরাজের রাতে আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সা) কে প্রশংসার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছিয়ে ছিলেন। আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ, তার মহিমা এবং সৃষ্টির যাবতীয় রহস্য তন্ন তন্ন করে নবীজী (সা)কে দেখিয়েছেন। এর চেয়ে বড় সম্মান, বড় প্রশংসা এবং বড় যোগ্যতা অন্য কোন পয়গাম্বরের ভাগ্যে জোটেনি। তাই রাসূলুল্লাহ (সা)ই আল্লাহ তায়ালার প্রকৃত পরিচয়দাতা, চরম প্রশংসাকারী। এতেই রাসূল (সা)-এর ‘আহমদ’ নাম সার্থক হয়েছে। মূলকথা মিরাজ আমাদের লক্ষ্যে ও গন্তব্যে পৌঁছার পথের সন্ধান দেয়। মিরাজের স্মৃতি আমাদের অন্তরে জাগ্রত হলে আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব এবং তার নৈকট্য লাভ সম্পর্কে আমাদের ধারণা সুস্পষ্ট ও পরিচ্ছন্ন হয়। তাই সে মহামানবের প্রতি অগণিত দরুদ ও সালাম যিনি আমাদের জ্ঞানের পরিধি সম্প্রসারিত করে গেছেন।
Copyright Daily Inqilab

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: