শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩
এমপি রতনের আর্শীবাদ থাকায় ঘুষ দুর্নীতির বরপুত্র ওসি নন্দনের লাগাম টেনে ধরতে পারছেন না দায়িত্বীলরা

এমপি রতনের আর্শীবাদ থাকায় ঘুষ দুর্নীতির বরপুত্র ওসি নন্দনের লাগাম টেনে ধরতে পারছেন না দায়িত্বীলরা

স্টাফ রিপোর্টার, সুনামগঞ্জ: ঘুষ বাণিজ্যের বরপুত্র ওসি শ্রী নন্দন কান্তি ধর থানার বিভিন্ন মাদক, জুয়া, যাত্রাপালা, কয়লা- চুনাপাথর, গরু চোরাচালান অবৈধ নৌকা, ট্রলার ও সীমান্তনদী জাদুকাঁটা মাহারামের বালি-পাথর লুটের চাঁদা আদায়ের ভাগ ভাটোয়রা ও মামলা-মোকদ্দমা হেরফের করে প্রতিমাসে সীমান্তবর্তী ও জলমহালের রাজধানী খ্যাত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানার বিভিন্ন স্পট থেকে প্রতিমাসে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এসব অপকর্মের পরও সর্বমহলে একটাই প্রশ্œ দেখা দিয়েছে, এমপির আর্শীবাদ থাকায় ঘুষ দুর্নীতির বরপুত্র ওসি নন্দনের লাগাম টেনে ধরতে পারছেনা পুলিশের দায়িত্বশীলরা।
এদিকে তাহিরপুরের নানা শ্রেণি-পেশার লোকজনের অভিযোগ, হত্যা মামলার আসামী, দাগী অপরাধী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও বালি পাথর, চোরাই কয়লার ব্যবসায় ফুলে ফেঁপে উঠা বিতর্কিত সন্ত্রাসীদের সাথে বাড়তি আয়ের আশায় ওসি নন্দন প্রকাশ্যে চলাফেরা করে সাধারণ জনমনে গোটা পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্য করেছেন। এখন জনমনে প্রশ্ন, ওসির অপকর্মমের শেল্টার দাতা কে বা কারা?
সরেজমিন স্থানীয় এলাকাবাসির সাথে আলাপকালে ও নানা অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপরী আয়ের ভাল থানা খ্যাত তাহিরপুর থানায় ওসি নন্দন যোগদান করার পর থেকেই ঘুষ বাণিজ্যের জন্য দিবারাত্রি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। আর এ ধরণের বেপরোয়া আচরণ ও অবাধ ঘুষ বাণিজ্যের পেছনে পর্দার আড়ালে থেকে ওসি নন্দনের মদদ ও শেল্টার জোগাচ্ছেন বহুল আলোচিত হাওরাঞ্চলের মুকুটহীন স¤্রাট সুনামগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামীলীগ সরকারের দলীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি ও তার অনুগত লোকজন। এমপির মদদে আর্শীবাদপুষ্ট হয়ে ঘুষ খোঁর, চাঁদাবাজ ওসি তালকে তিল করে প্রতিমাসে বিভিন্ন স্পট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রায় অর্ধকোটি টাকা। এ থেকে আয়ের একটা অংশ চলে যায় শাসকদলীয় ওই এমপির লোকজনের পকেটে। বিনিময়ে এমপির ইশারায় তার অনুগত লোকজনকে বেআইন শেল্টার ও তার অপকর্মের বিরোধিতা কারীদের ব্যাপারে মামলা-হামলা করিয়ে হয়রানী করা। যে কারণে দিনের পর দিন ওসি নন্দনের দাপট আর পোষাকী ক্ষমতার অপব্যবহার বেড়েই চলেছে। অভিযোগ রয়েছে, এমপির বিরুদ্ধে জামালগঞ্জের মান্নানঘাট বাজারে সরকারি কাবিকার টাকায় গড়ে তুলেছেন সরকার দলীয় অফিস কার্যালয় ও বিগত জেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি লংঘনের। এছাড়াও পাশর্^বর্তী তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট বাজারের মানিক হত্যাকাণ্ডের তদবির কারকের মূল নাটের গুরুই হচ্ছেন এই সেই শাসকদলীয় এমপি রতন। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী জাদুকাটা নদীতে অবৈধভাবে সেইভ ড্রেজার, বোমা মেশিন বসিয়ে নদীর চর ও তীর কেটে একাধিক স্পট থেকে বালু-পাথর উত্তোলন হচ্ছে, সে অপকর্মের ও রাষ্ট্রীয় সম্পতি লোপাটের পেছনে তার আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে মদদ দিচ্ছেন ঐ এমপি ও তার অনুগতরা। এসব অপকর্মের সাথে ছায়ার মত সঙ্গি হয়ে আছেন কিংবা সাথে তাল মিলিয়ে একযোগে কাজ করছেন তাহিরপুর থানার ওসি নন্দন।
আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া ওসি কৌশলে এমপিকে হাত করে হাতিয়ে নিচ্ছেন মাসোহারা হিসেবে অর্ধ কোটি টাকার চাঁদা। কারণ, ওসি বিপাকে না পরার জন্য তিনি তার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চাপ ও বশে রাখার জন্য আলাপ করিয়ে থাকেন ওই শাসকদলীয় এমপিকে দিয়ে। এটা চাঁদাবাজ ওসির নিত্যদিনের কার্যকলাপ হয়ে দাড়িয়েছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর জমিদারবাড়ি এলাকায় ওসির মামা শ্বশুড়ের বাড়ি হওয়াতে আরো বেশি তিনি তৎপর হয়েছেন ঘুষ আদায়ে। নিজের মতো করে থানা এলাকায় দাপটের সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন ক্ষমতার প্রভাব আর আইনি মারপ্যাচে হয়রানী করছে নিরীহ লোকজনসহ সাংবাদিক, এমনকি কলেজ শিক্ষার্থীদের। তাহিরপুরের স্থানীয় এলাকায় বড় বড় রাঘব বোয়ালদের সাথেও গড়ে তোলেছেন গভীর সখ্যতা। এরমধ্যে অন্যতম একজন হলেন আব্দুল কুদ্দুছ মিয়া ওরফে বেল কুদ্দুছ।
বাদাঘাট বাজারে মক্কা টাওয়ার নামক একটি মার্কেট রয়েছে। ওই মার্কেটে ওসি প্রতি সপ্তাহের ৩-৪ দিন গিয়ে অলিখিতভাবে অফিস করেন বলেও স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছেন। প্রায়ই বেল কুদুচ্ছের বাসায় নানা পদের আইটেম দিয়ে ভোজন বিলাসও করেন ওই ওসি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, সেখানে বসে ওসি তার মামা শশুরদের দেবোত্তর স্টেইটের নৌকাঘাট, নৌপথ, বালি পাথর মহালের একাধিক ঘাট ও হাটবাজার ইজারাদারের কাছ থেকে নিয়ে আসেন মোটা অংকের বখরা ও বাদাঘাট বাজারের অন্যান্য স্পটের টাকাকড়ি। বেশিরভাগ সময় তিনি ওই মার্কেটে বসে সময় অতিবাহিত করেন এবং আব্দুল কুদ্দুছ মিয়াকে ওসি মামা বলেও ডাকেন বলে জনশ্র“তি রয়েছে। ওই বেল কুদ্দুছ মানিক হত্যা মামলা অন্যতম আসামী পেলনপুর গ্রামের একিনুরের ও আপন ভায়রা ভাই ও হত্যা মামলার অপর প্রধান আসামী মাসুকের তালাইও বটে। এছাড়াও ওসি ও আরেক মামলার আসামি রয়েছে বাদাঘাট বাজারের দেবোত্তর স্টেইটের কথিত ইজারাদার নব্য ধনী তোতা মিয়া। একইভাবে সীমান্তনদী জাদুকাটার পাথর খেকো রহিম উদ্দিনকে দাদা বলে সম্মোদন করেন তিনি। এভাবে অবৈধ ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্যদের স্বার্থ রক্ষার আড়ালে পুলিশ বিভাগকে জনমনে প্রশ্নবিদ্ধের মুখে ফেলে দিয়ে ওসি তার নিত্যদিনের ঘুষ-বাণিজ্যে হাতিয়ে নিতে সিদ্ধ হস্ত হয়ে উঠেছেন। উল্লেখ্য, এর পূর্বেও এসব অবৈধ ব্যবসায়ী ও শাসকদলের এমপি রতনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও ধামাচাপা দিতে দৌঁড়ঝাঁপ দেন চাঁদাবাজ ওসি নিজেই। মানিক হত্যা মামলা আসামীরা নিরাপদে বাড়িতে থেকেই বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদাঘাটসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে ফের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেও তারা আইনের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে যাচ্ছে।
অপরদিকে এসব বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে উল্টো সংবাদকর্মীকে বেকায়দায় ফেলতে ও তাদের অনৈতিক কার্যকলাপ আড়াল করতে এমপির নির্দেশে ও হত্যা মামলার আসামীদের সাথে যোগসাজসে জনসম্মুখে আদালত ও থানাপাড়ায় ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলা মোকাদ্দমা দাখিল করিয়ে নিচ্ছেন ওসি নিজেই। ভদ্রবেশি মুখোশধারি থানার এই বড়কর্তা ধন জনে বলিয়ান হওয়ায় কোন কিছুকে তোয়াক্কা করতে নারাজ। বাদ বালাইর বিচার না করে হেয় প্রতিপন্ন করছেন বস্তুনিষ্ট সংবাদকর্মীদের উপর মিথ্যা অভিযোগ ও মামলার খড়গ নামিয়ে দিয়ে। ওসি থাকেন দর্শকের ভূমিকায়, এর দায় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে এলাকায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও হত্যার মত ঘটনা ঘটিয়ে ওসি দু’হাতে লুটেপুটে খাচ্ছেন। এসব নানা প্রশ্নই এখন সচেতন মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে। তাহিরপুর থানার ওসি নন্দন, এমপি রতন, ব্যবসায়ী তোতা মিয়া, আব্দুর রহিম, হত্যামামলার আসামী মাসুক, উস্কানীদাতা ঝুমুর তালুকদার, হলুদ সংবাদকর্মী জাহাঙ্গির আলম ভূইয়া, এসিড মামলার (ওয়ারেন্টভূক্ত) আসামী মোজাম্মেল আলম ভূইয়া, আব্দুছ সহিদ কয়লা ব্যবসায়ি, গরু বাজারের টোল আদায়কারী তাহের মিয়া, ছাড়াগাও চোরাচালানি ব্যবসায়ী আইনূল মিয়া, মন্নাফ সর্দার, বড়ছড়া আক্কল আলী, লাউড়েরগড়ের অব: সেনা সদস্য জাদুকাটা নদীর বালি পাথর লুটেরাদের গড় ফাদার উসমান ও এমপি রতনের ঘনিষ্টজন ভাই খ্যাত থানার বড় দালাল, চোরাই কয়লা থেকে চাঁদা উত্তোলনকারী বাবুল, নৌপথের চাঁদাবাজ চক্রের সদস্য শ্রীপুরের মতিউর, সুলেমানপুরে একাধিক চক্র, সীমান্তের গরু, মাদক চোরাকারবারী ও জুয়ারীদের ব্যক্তিগত মোবাইলের কল লিষ্ট সংগ্রহ করা হলেই অতি সহজেই এই সিন্ডিকেট চক্রের সকল আলামত ও অপকর্ম বের হয়ে আসবে বলে সুশীল সমাজ ধারণা পোষন করেছেন।
ওসি তাদেরকে শেল্টার দেয়ায় তারা স্থানীয় এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে বলেও স্থানীয়ভাবে অভিযোগ ওঠেছে। আলেচিত মানিক হত্যাকাণ্ডের আসামী মাসুক, একিনুর, কুদ্দুছ, আজাহারুল ইসলাম সোহাগ, আবুল মনসুর, জহিরুলসহ ৮ জনকে অব্যাহতি দানের আবেদন আদালতে প্রেরণ করেছেন বেল কুদুচ্ছ ও তোতা মিয়া এবং তাদের আরেক ভাই ও ভাগ্না সম্পর্কের থানার বড় দালালের রফাদায় মাধ্যমে।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলার বাদাঘাট বাজারের দেবোত্তর স্টেইটের ইজারাদার তোতা মিয়ার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, একটা থানার ওসি তাহিরপুর আসলে আমাদের সাথে না মিলেমিশে থাকতে পারবে না। কারন আমরা ইজারাদার। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ও আমারে মামা ডাকে আপনি ঠিক শুনেছেন, কারন নন্দনের মামা শ্বশুড়ের বাড়ি ঐ এলাকায়, তাই ডাকতেই পারে। তোতা মিয়া বাদাঘাট পুলিশ ফাড়িতে বসে প্রায়ই গর্ব করে বলে থাকেন, তাহিরপুর থানায় পুলিশের যত বড় অফিসাইর আসুক, প্রশাসনের অন্য কেউ উনাদের খাবার-দাবার ও আপ্যায়নের জন্য আমি বড় অংকের টাকা দিয়ে থাকি। প্রশাসনের কে না চিনে?
এ ব্যাপারে পাথর ব্যাবসায়ী আব্দুর রহিমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, নন্দনের সাথে আমার কোন সর্ম্পক নেই বা তাকে আমি চিনি না।
ওসির অপকর্মের আরেক সহযোগি সংবাদকর্মী নামধারী জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, অন্য কোন সংবাদকর্মীর সাথে আমার কোন প্রতিহিংসা নেই বা কোন সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে আমি কোন সংবাদ পাঠাইনি। আমি চেষ্টা করি ওসিসহ সকলের সাথে মিলেমিশে থাকার জন্য।
এদিকে তাহিরপুর থানার ওসি শ্রী নন্দন কান্তি ধরের সরকারি মোবাইল ফোনে শুক্রবার বক্তব্য জানতে কল করা হলেও এসআই মুহিত মিয়া রিসিভ করে বলেন, স্যার বাথরুমে, পরে কথা বলেন। এরপর প্রায় দেড় থেকে দু’ঘণ্টা পর দ্বিতীয় দফায় ওই মোবাইল ফোনে কল করা হলে ওসি নন্দন কান্তি ধর কলটি রিসিভ করে বলেন, ব্যস্ত আছি এসব বিষয়ে পরে কথা বলব।
সুনামগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামীলীগের দলীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপির বক্তব্য জানতে শুক্রবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মানিক হত্যাকাণ্ডের আসামী মাসুক মিয়াকে যদিও আমি চিনি, তবে তার হত্যা মামলায় আমি কোন সহযোগিতা করিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে ওসি নন্দনকে মামলা নেওয়ারও কোন তদবির করিনি বলেই মোবাইলের সংযোগটি কেঁটে দেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: